
রোহিত শ্রীলঙ্কাকে হোয়াইটওয়াশ করেই জানালেন পরের লক্ষ্যের কথা, ভারতের দল নিয়েও বিরাট ইঙ্গিত
মোহালি ও বেঙ্গালুরু টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে কুপোকাত করে সিরিজ হোয়াইটওয়াশ নিশ্চিত করেছে রোহিত শর্মার ভারত। দেশের মাটিতে পঞ্চদশ টেস্ট সিরিজে টানা জয়। পয়েন্টের নিরিখে সাময়িকভাবে বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দলও হয়ে গিয়েছে ভারত। অবশ্য করাচি টেস্টে অস্ট্রেলিয়া যেভাবে পাকিস্তানকে হারানোর দিকে এগোচ্ছে তাতে অজিরা জিতলে ভারত দ্বিতীয় স্থানেই থাকবে। তবে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকায় চারে উঠে এসেছেন রোহিতরা।

লক্ষ্য স্থির
রোহিত এদিন বেঙ্গালুরুতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, আমাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যই হলো ফের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠা। তবে খুব দূরেরটা নিয়ে ভাবলে কাজের কাজ হয় না, ফলে ওটা নিয়ে আমরা ভাবছি না। বাস্তবের দিকে তাকিয়ে এটা আমাদের উপলব্ধি যে, ফাইনালে যেতে এখনও কয়েক ধাপ আমাদের উঠতে হবে। ছোট ছোট লক্ষ্য তৈরি করেই তাই আমরা এগোতে চাই। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ব্যর্থতার পর কিছুটা প্রভাব দেখানো জরুরি ছিল। মূল্যবান পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পারাটাও গুরুত্বপূর্ণ।

বড় ইঙ্গিত
শ্রেয়স আইয়ার ও হনুমা বিহারীর প্রশংসা যেভাবে রোহিত শর্মা করেছেন তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট, টেস্ট দলে চেতেশ্বর পূজারা ও অজিঙ্ক রাহানের কামব্যাকের দরজা আপাতত বন্ধ। ভারত আইপিএলের পর ইংল্যান্ডে টেস্ট খেলবে। তারপর বেশ কয়েক মাস কোনও টেস্ট নেই। রোহিত বলেন, আমরা পূজারা, রাহানের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটারদের মিস করেছি। তবে শ্রেয়স জানতেন তিনি রাহানে, পূজারার মতো ক্রিকেটারদের জুতোয় পা গলাতে যাচ্ছেন। তারপরও যেভাবে টি ২০ সিরিজের দুরন্ত ছন্দ ধরে রেখেছেন তা যথেষ্ট প্রশংসনীয়। তিনে হনুমা বিহারীর ব্যাট করাও চ্যালেঞ্জিং ছিল। আইয়ারের ছয়ে নামাটাও আরেকটি চ্য়ালেঞ্জ ছিল। চ্যালেঞ্জিং উইকেটে আইয়ার অনেক পরিণত ইনিংস খেলেছেন। সবমিলিয়ে আমরা এই সিরিজে যা যেভাবে চেয়েছিলাম তা হয়েছে।

পন্থের প্রশংসা
ঋষভ পন্থ হয়েছেন সিরিজ-সেরা। বেঙ্গালুরু টেস্টে দুই ইনিংসে তাঁর ঝোড়ো ইনিংস শ্রীলঙ্কার কাজ কঠিন করে দেয়। পন্থের ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে নানা সময় নানা প্রশ্ন উঠলেও রোহিত পন্থের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, আমরা জানি পন্থ কেমন ব্যাটিং করেন। তাঁর ব্যাটিংয়ের সময় আমরা তাঁকে স্বাধীনভাবেই খেলতে দিতে চাই। খেলার গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী তাঁকে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়েই থাকে। তবে তাঁকে গেমপ্ল্যান অনুযায়ীই খেলতে দিতে চায় দল। তাঁর গেমপ্ল্যান ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। কখনও কখনও কেউ বলতেই পারেন, এমন শট খেলার কী দরকার ছিল? কিন্তু তাঁর ব্যাটিংয়ে এটার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। আধ ঘণ্টা, চল্লিশ মিনিটে পন্থ ম্যাচের মোড় ঘোরাতে সক্ষম। তাই তিনি যা করবেন দল তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
|
উন্নতি কিপিংয়ে
পন্থের কিপিংয়েরও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন রোহিত। আর তাতেই স্পষ্ট ঋদ্ধিমান সাহার সামনে ভারতীয় দলের দরজা বন্ধই হয়ে গেল। রোহিত বলেন, পন্থের সেরা কিপিংয়ের সাক্ষী থাকছি। গত বছর যখন ভারতে ইংল্যান্ডে এসেছিল তখনও পন্থ ভালো কিপিং করেছেন। দেশের হয়ে খেলতে নেমে প্রতি ম্যাচেই যেন তাঁর কিপিংয়ের উন্নতি হচ্ছে। এটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করছে। ডিআরএসের ক্ষেত্রেও তিনি যা বলছেন তা সঠিক সিদ্ধান্ত হয়েই পর্যবসিত হচ্ছে। আমরা জানি ডিআরএস লটারির মতো। খেলার কিছু জিনিসে পন্থকে নজর রাখতে বলি। ডিআরএসের সব সিদ্ধান্তই সঠিক হয় না, ভুল হতেই পারে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে পন্থের পারফরম্যান্সে আমি সন্তুষ্ট।

নেতৃত্ব নিয়ে
টেস্ট সিরিজে দেশকে প্রথমবার নেতৃত্ব দিয়েই দুরন্ত সিরিজ জয়। রোহিত বলেন, আমি খুব বেশি সাদা বলের ক্রিকেটে নেতৃত্ব দিইনি। দলের সিনিয়রদের পরামর্শ নিয়ে চলছি। খেলার গতিপ্রকৃতি বুঝে যে সিদ্ধান্তটা নেওয়া উচিত সেটা নিচ্ছি। মাঠে দাঁড়িয়েই বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।

বুম বুম বুমরাহ
স্পিন-সহায়ক পিচে প্রথম ইনিংসে পাঁচটি-সহ মোট ৮ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন জসপ্রীত বুমরাহ। তাঁর ডেপুটির প্রশংসাতেও পঞ্চমুখ রোহিত। তিনি বলেন, বুমরাহর স্কিল ও দক্ষতা কোন পর্যায়ে তা এই টেস্টে ফের দেখা গিয়েছে। পরিবেশ-পরিস্থিতি যাই হোক না কেন খেলা থেকে হারিয়ে যান না বুমরাহ, এটাই তাঁর বিশেষত্ব। মোহালি ও বেঙ্গালুরুতে পিচের চরিত্র দুরকম ছিল। কিন্তু বুমরাহ নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে মেলে ধরেছেন। ক্রিকেটারদের ফ্রেশ রাখতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো হয়। এটা ঠিক, বুমরাহ দেশের মাটিতে বেশি টেস্ট খেলতে পারেননি। তবে আগামী দিনে সেটা হবে। একইসঙ্গে সবাইকে ফ্রেশ রাখাটাও আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জের। উল্লেখ্য, আসন্ন আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়েও রোহিতের সেরা অস্ত্র হতে চলেছেন বুমরাহ।