ভারত টি ২০-তে রেকর্ড গড়ে হারাল পাকিস্তানকে, রোহিতের মুখে বিরাট ও হার্দিকের দরাজ প্রশংসা
বিশ্বকাপের আসরে প্রথমবার দেশকে নেতৃত্ব দিলেন রোহিত শর্মা। সেই ম্যাচটিই স্মরণীয় হয়ে রইল বিরাট কোহলির অনবদ্য ইনিংসের সুবাদে রুদ্ধশ্বাস জয়ে। ম্যাচ শুরুর আগে জাতীয় সংগীত বাজার সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন রোহিত শর্মা। তাঁর চোখে জল দৃষ্টি এড়ায়নি ক্রিকেটভক্তদের। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয় ছিনিয়ে মধুর প্রতিশোধ নেওয়ার পর রোহিত কাঁধে তুলে নিলেন ম্যাচের নায়ক বিরাট কোহলিকে। তখন কিং কোহলির চোখের কোণ চিকচিক করছে, আনন্দাশ্রুতে! টি ২০ আন্তর্জাতিকে রান তাড়া করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এটিই ভারতের সবচেয়ে বড় জয়।
ভারত কার্যত সেমিফাইনালে
বিরাট কোহলির যখন দীর্ঘ সময় ধরে খারাপ ফর্ম চলছিল, তিন বছর ধরে ব্যাটে ছিল শতরানের খরা, তখন এই টি ২০ বিশ্বকাপে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ককে রাখা উচিত কিনা তা নিয়েও অনেকে আলোচনা করছিলেন। বিশেষ করে গত টি ২০ বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর থেকেই। আজ সেই বিরাটের চওড়া ব্যাটই ভারতের সেমিফাইনালের জায়গা কার্যত নিশ্চিত করে দিল। এই গ্রুপ থেকে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে কোনও দুটি দলই যাবে সেমিফাইনালে। শেষ বলে চার উইকেটে নাটকীয় জয় ছিনিয়ে ভারত সেদিকে এগিয়ে গেল।
রেকর্ড গড়ে জয়
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৬০ রান। ৩১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে জয় নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। কিন্তু প্যানিকের কবলে না পড়ে বিরাট কোহলি ও হার্দিক পাণ্ডিয়া শতরানের পার্টনারশিপ গড়েন যাবতীয় চাপকে আত্মস্থ করে। পরিকল্পনামাফিক ব্যাটিং করে। বিরাট কোহলি ম্যাচ শেষে বলেছেন, রান তাড়া করাই তাঁর কাছে সহজ। কত রান তুলতে হবে সেটা জেনে পরিকল্পনামাফিক খেলা যায়। ম্যাচের শেষে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা জানান, তাঁর দেখা দেশের হয়ে বিরাট কোহলির এই ইনিংসটিই সেরা। রোহিতের কথায়, যে পরিস্থিতিতে আমরা ছিলাম এবং সেখান থেকে জয় পেয়েছি তাতে এটা শুধু বিরাটেরই সেরা ইনিংস নয়, ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যেই অন্যতম সেরা ইনিংস।
|
সেরা ইনিংস
কেন তিনি এমসিজিতে বিরাটের ইনিংসকে সেরা বলছেন তার জন্য যুক্তিও মেলে ধরলেন। তাঁর কথায়, ১৩ ওভারের সময়ও আমাদের ১০০-র কাছাকাছি রান দরকার ছিল। ওই সময়টায় আমরা পিছিয়ে ছিলাম। রিকোয়ার্ড রেট বাড়ছিল। সেখান থেকে সফলভাবে রান তাড়া করা গিয়েছে বিরাটের অনবদ্য ব্যাটিংয়ের সুবাদেই। হার্দিক পাণ্ডিয়াও যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে অবদান রেখেছেন। এই দুই ক্রিকেটার চাপের মুখে এতো পরিমাণ ম্যাচ খেলেছেন যে তাঁরা জানেন, কোন পরিস্থিতিকে কীভাবে সামাল দিতে হয়। সেটাই এদিন তাঁরা অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়ে করেছেন।
বিরাট-বন্দনায় হিটম্যান
বিরাট প্রসঙ্গে রোহিত আরও হলেন, আমি মনে করি না বিরাট ফর্মে ছিলেন না। তিনি যেমন ব্যাটিং করেন, সেটাই করছিলেন। কিন্তু তাঁকে ঘিরে প্রত্যাশা এতটাই বেশি থাকে যে তিনি ৩০-৪০ রান করলেও মানুষ বিভিন্ন রকমের চর্চা করে থাকেন। এশিয়া কাপ থেকেই বিরাট দারুণ ছন্দে রয়েছেন। এক মাসের বিরতি নিয়ে ওই টুর্নামেন্টে ফেরার পর থেকেই। তরতাজা হয়ে ফিরে অনবদ্য শতরানও করেছিলেন। কয়েকটি অর্ধশতরান পেয়েছেন। টি ২০ বিশ্বকাপে তাঁর কোয়ালিটি সম্পর্কে সকলেই ওয়াকিবহাল ছিলাম। এই ধরনের কন্ডিশনে তিনি তিনটি ফরম্যাটেই সাফল্য পেয়েছেন। বিরাট এদিন তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই বাজিমাত করেছেন বলে মনে করেন রোহিত। চাপের মুখে শান্ত থেকে খেলা চালিয়ে গিয়েছেন। বিশ্ব ক্রিকেটে রান তাড়া করার ক্ষেত্রে বিরাটকে বিশ্বের অন্যতম সেরা বলেও অভিহিত করেন ভারত অধিনায়ক।
|
ম্যাচের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত
বিরাট-হার্দিকের ১১৩ রানের পার্টনারশিপই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়েছে বলে মন্তব্য রোহিতের। তিনি বলেন, বিরাট-হার্দিকের জুটি আমার দেখা অন্যতম সেরা। বিরাট ব্রিলিয়ান্ট। হ্যারিস রউফকে পরপর যে দুটি ছক্কা মারলেন আমি সেটাকে টার্নিং পয়েন্ট বলব না। তবে এই দুটি শটেই ম্যাচটি আমাদের দিকে ঝুঁকেছিল। আমরা জানতাম এখনও একটা ওভার আছে যেখানে স্পিনার বল করতে আসবেন। শেষ ওভারে ১৫ থেকে ১৮ রান দরকার হলে তা তোলা সম্ভব এটা নিয়ে ড্রেসিংরুমেও আলোচনা চলছিল। নওয়াজ এশিয়া কাপেও আমাদের বিরুদ্ধে বল করেছিলেন, হার্দিক আগ্রাসী ব্যাটিং করেছিলেন। শেষ ওভারে ১৬ রানের পুঁজি নওয়াজকে যে চাপে ফেলেছিল, সেটা স্বাভাবিক বলেই মনে করেন রোহিত। শেষ তিন ওভারে ভারতীয় ব্যাটাররা বোলারদের যেভাবে চাপে ফেলেছিলেন তারও প্রশংসা করেছেন ভারত অধিনায়ক।