Exclusive: ঈশান 'গুরু' উত্তমের ক্লাসে কীভাবে খামতি মিটিয়ে চেনা ছন্দে? রোহিত-কিষাণ জুটিই কেন হবে কার্যকরী?
আইপিএলের মেগা নিলামে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার। কিন্তু মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে এবারের আইপিএলে চেনা ছন্দে পাওয়া যায়নি ঈশান কিষাণকে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দিল্লিতে প্রথম টি ২০ আন্তর্জাতিকেই অবশ্য ফিরলেন স্বমহিমায়। ঈশানের ছন্দে ফেরার ক্ষেত্রে সহায়ক হলো ছোটবেলার কোচ উত্তম মজুমদারের সঙ্গে টিম হোটেলে কাটানো বেশ কিছুটা সময়।
ঈশান ছন্দে
দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের উইকেট প্রথম দিকে ব্যাটারদের ক্ষেত্রে সহায়ক ছিল না। কোনও বল লাফাচ্ছিল, কোনওটা নেমে যাচ্ছিল। ঈশান এই সময়টায় স্টেপ আউট করে বলের কাছে পৌঁছে গিয়ে শট খেলছিলেন। উইকেট পরের দিকে সহজ হতেই দুরন্ত ছন্দে নিজেকে মেলে ধরলেন কিষাণ। ১১টি চার ও তিনটি ছয়ের সাহায্যে তিনি ৪৮ বলে ৭৬ রান করলেন। ত্রয়োদশ ওভারের শেষ বলে কেশব মহারাজের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ট্রিস্টান স্টাবসের হাতে ক্যাচ দিয়ে। তার আগের বলেই অবশ্য রিভিউ নিয়ে লেগ বিফোর থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। অর্ধশতরান পূর্ণ করেছিলেন ৩৭ বলে। এবারের আইপিএলে তিনি ১৪ ম্যাচে ৪১৮ রান করেন, সর্বাধিক অপরাজিত ৮১। তিনটি অর্ধশতরান পান, স্ট্রাইক রেট ছিল ১২০.১১, গড় ৩২.১৫। তবে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচেই তাঁর স্ট্রাইক রেট পৌঁছে যায় ১৫৮.৩৩-এ।
তিন বছর পর দেখা
ঈশান কিষাণের কোচ উত্তম মজুমদার ওয়ানইন্ডিয়া বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানালেন, করোনা পরিস্থিতির পর এই প্রথম ঈশান দিল্লিতে এসেছিলেন। ২০১৯ সালের পর এই প্রথম তাঁর সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হলো। এতদিন ভিডিও কলেই নানা কথা হয়েছে। ঈশানকে ছোটবেলা থেকে দেখছি। তাঁর ব্যাটিংয়ে কোথায় সমস্যা হচ্ছে সেটা ধরতে পেরেছিলাম। কিন্তু ফোনে সেটা নিয়ে আলোচনা করিনি। এতে মানসিক চাপ তৈরি হয়। উল্লেখ্য, দিল্লিতে গেলে বরাবরই উত্তমদের বাড়িতে যান ঈশান। এই বাঙালি কোচের কাছেই যে তাঁর ক্রিকেটের হাতেখড়ি। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এই জায়গায় পৌঁছানো।
টিম হোটেলেই খামতি মেটানোর ক্লাস
টিম হোটেলে প্রথম টি ২০ আন্তর্জাতিকের আগের দিন ঈশানের সঙ্গে ঘণ্টা চারেক সময় কাটান উত্তম। সেখানেই কথা হয় ব্যাটিংয়ের নানা টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে। উত্তমের ফেসবুকে পোস্ট করা ছবিতে দেখা গিয়েছে, উত্তম ব্যাটিংয়ের স্টান্স থেকে শুরু করে গ্রিপ পজিশন সংক্রান্ত নানা পরামর্শ হাতেকলমে দেখাচ্ছেন। বাধ্য ছাত্রের মতো তা দেখছেন ঈশান। উত্তম মজুমদার ওয়ানইন্ডিয়া বাংলাকে বললেন, গ্রিপ-সহ কিছু টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে সমস্যা ছিল। সেগুলি হাতে ধরে দেখাই। ফোনে কথা বলে এ সব ঠিক করা যায় না। অনেক সময় টানা খেললে বড় প্লেয়াররাও অজান্তেই ছন্দ হারিয়ে ফেলেন। কোথায় সমস্যা তা ধরতে পারেন না। মানসিক গঠন সংক্রান্ত কিছু বিষয়ও এর সঙ্গে জড়িয়ে। সেগুলি সম্পর্কেই ঈশানকে ওয়াকিবহাল করি।
খোলা মনে খেলা
গুরুর পরামর্শ মেনে ঈশান তাঁর সামনেই শুরু করেন শ্যাডো প্র্যাকটিস। কিন্তু তারপর তো আর নেটে ব্যাট করার সুযোগ ছিল না। ঈশানকে উত্তম বলেন, যে পরামর্শগুলো দিলাম সেগুলি ম্যাচেই প্রয়োগ করলে অসুবিধা নেই। সাফল্য আসবে। উত্তমের কথায়, আমার মতোই বেপরোয়া ঈশান! আমার পরামর্শগুলি মাঠে সঠিকভাবে প্রয়োগ করে ঈশান যে সাফল্য পেয়েছেন সেটাই সবচেয়ে তৃপ্তি দিচ্ছে। ওঁকে বলেছি, আইপিএলে কী হয়েছে তা মাথায় না রাখতে। বর্তমান পরিস্থিতিতেই ফোকাস রাখতে। সব সময় খোলা মনে বা রিল্যাক্স হয়েই খেলার পরামর্শ দিয়ে থাকি ঈশানকে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি।
রোহিত-ঈশানই কার্যকরী জুটি
ঈশানকে ভারতীয় দলের তৃতীয় ওপেনার মানাতেও আপত্তি রয়েছে উত্তম মজুমদারের। তাঁর কথায়, ঈশানের বয়স অল্প। যে ছন্দে তিনি রয়েছেন তাতে তাঁকে ভারতের প্রথম একাদশে রাখা উচিত। এমনকী রোহিত শর্মার সঙ্গে ঈশান কিষাণকেই ওপেন করতে পাঠানো উচিত। ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন কার্যকরী হবে। লোকেশ রাহুল তিন থেকে পাঁচ, যে কোনও জায়গায় ব্যাট করতে পারেন। ফলে ঈশানকে একাদশে রাখলে ভারতের কম্বিনেশন বিঘ্নিত হবে না। সামনে অনেক ক্রিকেট। তাই এখনই টি ২০ বিশ্বকাপ নিয়ে পরামর্শ না দিয়ে আপাতত সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ভারতীয় দলে ঈশান নিজের দাবি জোরালো করুন, সেটাই প্রত্যাশা উত্তম মজুমদারের।
(ছবি সৌজন্য- উত্তম মজুমদার)