পন্থ সিরিজের শেষ টেস্টেই জ্বলে ওঠেন বরাবর! এজবাস্টনে সাফল্যের রহস্য ফাঁস করলেন ঋষভ
ঋষভ পন্থের দুরন্ত বিধ্বংসী শতরানের পর আজ দায়িত্বশীল রবীন্দ্র জাদেজার ব্যাট থেকেও শতরানের প্রত্যাশায় ভারতীয় দল। এজবাস্টন টেস্টে প্রথম ইনিংসে ভারত ৩৭৫ রান তুলে ফেললে তা যথেষ্ট হবে বলে মনে করেন বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে প্রথম দিন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ঋষভ পন্থ। খাদের কিনারায় চলে যাওয়া ভারতের হাতে ম্যাচের রাশ তিনি এনে দিয়েছেন দুরন্ত শতরানের মাধ্যমে।
শেষ টেস্টেই বিপজ্জনক পন্থ
ঋষভ পন্থের শতরানের পরিসংখ্যান দেখলে স্পষ্ট, সিরিজের শেষ টেস্টেই জ্বলে ওঠে তাঁর ব্যাট। গত বছর ভারতীয় শিবিরে করোনা সংক্রমণের জেরে ভারত-ইংল্যান্ড পঞ্চম টেস্টটি স্থগিত রাখতে হয়েছিল। সেই টেস্টটি চলছে এজবাস্টনে। এতে পন্থ ১১১ বলে ১৪৬ রানের ইনিংস খেলেছেন। টেস্টে তাঁর সর্বাধিক স্কোর ১৮৯ বলে অপরাজিত ১৫৯, গত বছর সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে, সেটিও ছিল সিরিজের শেষ টেস্ট। ২০১৮ সালে ওভারে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের শেষ টেস্টেই পন্থ ১৪৬ বলে ১১৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। গত বছর আমেদাবাদে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের শেষ টেস্টে পন্থের ব্যাট থেকে এসেছিল ১১৮ বলে ১০১ রানের ইনিংস। চলতি বছর কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজের শেষ টেস্টেই পন্থ অপরাজিত ছিলেন ১৩৯ বলে ১০০ রানে।
বোলারদের ছন্দ নষ্টের কৌশল
গতকালের ইনিংসে পর এজবাস্টন টেস্টে ভারতের সহ অধিনায়ক পন্থ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে বোলারদের ছন্দ নষ্ট করে দেওয়াই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। তাই বিভিন্ন রকমের শট খেলেছি। কখনও স্টেপ আউট করে, কখনও বা ব্যাকফুটে গিয়ে। ক্রিজ ব্যবহার যাতে ঠিকঠাক করতে পারে সেদিকে নজর রেখেছিলাম। বোলারদের মানসিকভাবে ডিসটার্ব করতে চেয়েছিলাম, সেটি করতে পেরেছি। তবে এটা পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। বোলার কী করতে পারেন সেদিকে ফোকাস রেখেই ব্য়াট করে গিয়েছি।
ডিফেন্সেও মনোনিবেশ
স্পিনার জ্যাক লিচের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন পন্থ। জেমস অ্যান্ডারসন থেকে শুরু করে লাগাতার শর্ট পিচ বলের মাধ্যমে পন্থকে অস্বস্তিতে ফেলার প্রয়াস চালানো বেন স্টোকস, সকলকেই সামলেছেন অবলীলায়। সাদা বলের ক্রিকেটে দেখা যায় এমন কিছু শটও মেরেছেন। আবার ভালো বলকে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিমাতেও খেলেছেন। পন্থের কথায়, আমি ডিফেন্সিভ শট খেলার বিষয়েও কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমার কোচ তারক সিনহা বলতেন, বোলারদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক শট খেলার পাশাপাশি ডিফেন্সিভ শট খেলার কার্যকারিতা ও গুরুত্বের কথাও। সে কারণে আমি সব বলেই মারার চেষ্টা করি যেমন না, তেমনই সব বলকেই ডিফেন্স করতে হবে সেটাও মানি না। প্রতিটি বলে ফোকাস রেখে সেটির মেরিট অনুযায়ী শট খেলি। ভালো বলকে সমীহ করা ভালো লক্ষণ। তবে বল ডিফেন্স করার কথা বিশেষ না ভেবে নিজের খেলাতেই আমি ফোকাস রাখি। আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের শট খেলি। তবে সব সময়ই নিজের সেরাটা দেওয়াই লক্ষ্য থাকে। যে বলটি মারার হয়, সেটিকেই মারি।
|
জাড্ডুর সঙ্গে জুটি
ভারত পাঁচ উইকেট হারানোর পর রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে দ্বিশতাধিক রানের পার্টনারশিপ গড়েছেন পন্থ। তিনি বলেন, প্রথমদিকে দ্রুত উইকেট হারালে কিছুটা সময় নিতে হয়। আমি ও জাড্ডু ভাই (জাদেজা) ঠিক করে নিয়েছিলাম চা বিরতির আগে আর উইকেট যাতে না হারাতে হয় তেমনভাবেই খেলব। সেই পরিকল্পনায় আমরা সফল হই। কোচ রাহুল দ্রাবিড় বলেছিলেন, অন্য কিছু বিষয়ে না ভেবে প্রতিটি বলে ফোকাস রেখে খেলতে। পরিকল্পনা ছিল, ছোট ছোট পার্টনারশিপ, তা ২৫-৩০ রানের হতেও পারে, তা গড়ে সেটিকে বড় রানের দিকে নিয়ে যাওয়া। নিশ্চিতভাবেই আমরা কিছুটা চাপে ছিলাম। কিন্তু প্রসেসের উপর ফোকাস স্থির রাখি। প্রতিপক্ষ কী ভাবছে তা নিয়ে না ভেবে একজন প্লেয়ার হিসেবে আমি কী করতে পারি সেটিতেই মনোনিবেশ করি। এই টেস্টের জন্য আমাদের প্রস্তুতি ভালোই ছিল। প্রস্তুতি ম্য়াচও পেয়েছি। টেস্ট ক্রিকেটের জন্য মানসিকভাবে তৈরি হতেও আমরা পর্যাপ্ত সময় পেয়েছি।