ভারতের কোচিং ছাড়ার কারণ জানালেন রবি শাস্ত্রী, বিরাটদের ইচ্ছাপূরণে চান পরিবর্তন
টি ২০ বিশ্বকাপের পরই ভারতীয় দলে নতুন কোচ নিয়োগ করা হবে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে টি ২০ বিশ্বকাপেই শেষ হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটে রবি শাস্ত্রীর কোচিং জমানা। ঠিক কী কারণে আর তিনি কোচ হিসেবে মেয়াদ বৃদ্ধিতে সম্মতি দিলেন না ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাতকারে তা খোলসা করেছেন শাস্ত্রী।
আগেই সিদ্ধান্ত
রবি শাস্ত্রীর দাবি, ইংল্যান্ড সিরিজের আগেই নিজের ইচ্ছার কথা তিনি জানিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক মাইক আথারটনকেও। শাস্ত্রী বলেছেন, আমি যা চেয়েছি তার সবই পেয়েছি। ৫ বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেটে ১ নম্বর। অস্ট্রেলিয়ায় দুবার জিতেছি, ইংল্যান্ডেও জিতেছি। কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো, ইংল্যান্ডকে হারানো, এ সবের চেয়ে বড় প্রাপ্তি আমার কাছে কিছু হতে পারে না। ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজেও আমরা ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছি। লর্ডস এবং ওভালে যেভাবে খেলেছি তা স্পেশ্যাল। সাদা বলের ক্রিকেটেও প্রতিটি দেশে গিয়ে তাদের হারিয়ে এসেছি। টি ২০ বিশ্বকাপ জিতলে সেটা অসাধারণ ব্যাপার হবে। এর থেকে বেশি কিছু চাই না। আমি একটা কথা বিশ্বাস করি, যেখানো তোমাকে স্বাগত জানাচ্ছে না সেখানে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর থাকা ঠিক নয়। আমি যখন দায়িত্ব ছাড়তে চলেছি তখন প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি কিছু পেয়েই দায়িত্ব ছাড়ব। কোভিডের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে টেস্ট সিরিজ জেতা, ইংল্যান্ডে এগিয়ে থাকা ভারতীয় ক্রিকেটে কাটানো আমার চার দশকে সবচেয়ে তৃপ্তিদায়ক মুহূর্ত।
|
বই প্রকাশ অনুষ্ঠান নিয়ে
ভারতীয় দলে করোনা সংক্রমণের জন্য রবি শাস্ত্রীর বই প্রকাশ অনুষ্ঠানকে দায়ী করা হলেও তা মানতে নারাজ বিরাটদের হেডস্যর। তিনি বলেন, আমার কোনও খেদ নেই ওই অনুষ্ঠানে প্রচুর মানুষের সঙ্গে সাক্ষাত করা নিয়ে। হোটেলের ঘরে আবদ্ধ না থেকে ক্রিকেটাররাও যে কিছু মানুষের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পেরেছিলেন সেটাও খুব ভালো দিক। ওভাল টেস্টে যে সিঁড়ি ক্রিকেটারদের ব্যবহার করতে হয়েছে সেটা আরও ৫ হাজার মানুষ ব্যবহার করেছেন। শুধু বই প্রকাশ অনুষ্ঠানের দিকেই তাহলে কেন আঙুল তোলা হবে? ওই অনুষ্ঠানে ২৫০-র মতো মানুষ উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের কারও তো কোভিড হয়নি। বই প্রকাশ অনুষ্ঠানের জন্য আমার করোনা হয়নি। কেন না, ৩১ অগাস্ট ছিল বই প্রকাশ অনুষ্ঠান। আমার করোনা ধরা পড়ে ৩ সেপ্টেম্বর। আমার ধারণা, লিডসেই করোনা ভাইরাসের কবলে পড়ি। ১৯ জুলাই থেকে ইংল্যান্ডে সমস্ত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়। হোটেল, লিফট সব কিছু স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসে। কোনও বিধিনিষেধই ছিল না।
আইসোলেশনের দিনগুলি
আইসোলেশন তিনি নিজে কীভাবে কাটালেন সে কথাও সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন শাস্ত্রী। তিনি বলেন, মজার ব্যাপার হল করোনার কোনও উপসর্গ ১০ দিনে আমার ছিল না শুধু সামান্য গলা ব্যথা ছাড়া। জ্বর আসেনি, সব সময় অক্সিজেনের মাত্রা ৯৯ শতাংশ ছিল। আইসোলেশনে ১০ দিন থাকাকালীন কোনও ওষুধ খেতে হয়নি। একটা প্যারাসিটামল পর্যন্ত লাগেনি। একটা বিষয় বুঝতে পেরেছি, যদি ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ নেওয়া থাকে তাহলে এটা সামান্য ফ্লু ছাড়া আর কিছু নয়। শাস্ত্রী আরও জানান, ম্যাঞ্চেস্টার টেস্ট বাতিলের প্রক্রিয়ায় তিনি ছিলেন না। সহকারী ফিজিও যোগেশ পারমার পাঁচ-ছয়জন ক্রিকেটারের শুশ্রূষার দায়িত্বে ছিলেন, যখন তাঁর করোনা ধরা পড়ল তখন একটা ভীতির সঞ্চার হয়। টেস্ট চলাকালীন কারও সংক্রমণ ধরা পড়তে পারে এই আশঙ্কা যেমন ছিল, তেমনই অনেকেই পরিবার নিয়ে ইংল্যান্ডে ছিলেন। সেই কারণেই টেস্ট বাতিল হয়েছে। তবে ইসিবি-র সঙ্গে বিসিসিআইয়ের যে সুসম্পর্ক তাতে তাদের কোনও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে না। সে আগামী বছর একটি টেস্ট কিংবা ২টি অতিরিক্ত টি ২০ হলে লাভের মুখই দেখবে ইসিবি। মুম্বই হামলার পরও ইংল্য়ান্ড যেভাবে ভারতের পাশে থেকে সিরিজ সম্পন্ন করায় সহযোগিতা করেছিল তা আমরা ভুলিনি।
টি ২০ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ কমানোর দাবি
তবে রবি শাস্ত্রী চান দ্বিপাক্ষিক টি ২০ সিরিজের সংখ্যা কমানো হোক। বিরাট কোহলির নেতৃত্বাধীন দলের অনেকেই যে সেটাই চান তা স্পষ্ট জানিয়েছেন রবি শাস্ত্রী। তিনি বলেন, প্রিমিয়ার লিগ, স্প্যানিশ লিগ, ইতালিয়ান লিগ, জার্মান লিগের দলগুলি চ্যাম্পিন্স লিগ খেলে। দুই দেশের ফ্রেন্ডলি অনেক কমে গিয়েছে। বিশ্বকাপ, বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্ব, ইউরো কাপ, কোপা আমেরিকা, আফ্রিকা কাপ অব নেশনসের আগে কিছু ফ্রেন্ডলি খেলা হয়। এখন প্রচুর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট হচ্ছে। সেখানে দ্বিপাক্ষিক টি ২০ সিরিজের প্রাসঙ্গিকতা কমেছে। ভারতীয় দলের সঙ্গে এত বছর থেকে একটা ম্যাচও আমার মনে গেঁথে নেই। কিন্তু টেস্ট ম্যাচ নিয়ে কিছু জানতে চাইলে বল ধরে ধরে বলে দিতে পারব। অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডকে টি ২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশের কোনও মূল্য নেই, কিন্তু অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডে টেস্ট জয় আমার মতো অনেকেই মনে রাখেন। অর্থ উপার্জনের জন্য টি ২০ সিরিজের প্রতি অনেক বোর্ড আগ্রহী। কিন্তু শাস্ত্রী মনে করেন, টেস্ট ক্রিকেটই সর্বোচ্চ পর্যায়। ভারত যেভাবে খেলছে তাতে টেস্টের প্রতিও আগ্রহ জন্মাচ্ছে। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াতেও প্রচুর মানুষ টেস্ট দেখতে আসছেন। ফলে দ্বিপাক্ষিক টি ২০ সিরিজ কমলে ক্রিকেটারদের উপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঠাসা ক্রীড়াসূচির চাপ কমবে বলেই মনে করেন ভারতের বিদায়ী কোচ।