হনুমা বিহারীর লড়াইয়ে মুগ্ধ দীনেশ কার্তিকরা, কব্জিতে গুরুতর চোট নিয়ে রঞ্জিতে ব্যাট করলেন বাঁ হাতে!
হনুমা বিহারী অন্ধ্রপ্রদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রঞ্জি ট্রফিতে। গতকাল আবেশ খানের বাউন্সারে বাঁ হাতের কব্জিতে চোট পান। ফ্র্যাকচার ধরা পড়ে। তারপর দলের প্রয়োজনে আজ ওই অবস্থাতেই ব্যাট করতে নেমে বাঁহাতে ব্যাটিং চালিয়ে গেলেন।
ভারতের টেস্ট দলে আপাতত ব্রাত্য। কিন্তু ফের একবার ক্রিকেটবিশ্ব সাক্ষী থাকল হনুমা বিহারীর লড়াইয়ের। রঞ্জি কোয়ার্টার ফাইনালে ইন্দোরে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে অন্ধ্রপ্রদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হনুমা। গতকাল আবেশ খানের বাউন্সারে কব্জিতে চোট পেয়ে মাঠে নেমেছিলেন। ফ্র্যাকচার ধরা পড়ে। কিন্তু দলের বিপদে মোটা ব্যান্ডেজ বেঁধে মাঠে নামলেন হনুমা। আর তারপর যা করলেন তাতে বিস্মিত সকলেই।
হনুমার লড়াই
হনুমা ডানহাতি ব্যাটার। কিন্তু তাঁর বাঁ হাতের কব্জিতে চোট লাগায় ডান হাতে ব্যাট করা সম্ভব ছিল না। আবেশের বলে চোট পেয়ে তিনি যখন মাঠের বাইরে যান তখন অপরাজিত ছিলেন ৩৭ বলে ১৬ রান করে। প্রথম দিনের শেষে অন্ধ্রের স্কোর ছিল ২ উইকেটে ২৬২। রিকি ভুই ১১৫ ও করণ শিণ্ডে ৮৩ রানে ব্যাট করছিলেন। আজ শতরান পূর্ণ করেন করণ। তিনি ১১০ রান করে আউট হন, অন্ধ্র ৩২৩ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেটটি হারায়। সেখান থেকে আচমকাই ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে হনুমার দলের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ৯ উইেকেটে ৩৫৩। ৩২৮ রানে চতুর্থ ও পঞ্চম উইকেট পড়ে। ৩৪৩ রানে ষষ্ঠ এবং ৩৪৪ রানে সপ্তম ও অষ্টম উইকেট পড়েছিল।
|
ডানহাতি ব্যাটার বাঁহাতি হলেন!
মনে করা হচ্ছিল, হনুমার হাতে যে চোট রয়েছে তাতে তিনি ব্যাট করতে পারবেন না। কেন না, দলের চিকিৎসক জানিয়েছিলেন পুরো ফিট হতে হনুমার সপ্তাহ ছয়েক লাগবে। কিন্তু প্রয়োজনে ব্যাট করতে নামবেন সেটাও দলের তরফে জানানো হয়েছিল। কিন্তু হাতে ফ্র্যাকচার নিয়ে কীভাবে তিনি খেলবেন সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খেতে থাকে। আজ প্রথম সেশনে দলের নবম উইকেটটি পড়তেই ব্যাট হাতে নামেন হনুমা। দেখা যায়, ডানহাতি হনুমা ব্যাটিং করছেন বাঁহাতে। কার্যত এক হাতেই তিনি ব্যাট করেন। এভাবেই ১১ রান করেন ১৯ বল খেলে। তার মধ্যে আবেশ খানের বলে কাট শটে চার মারেন। স্পিনার কুমার কার্তিকেয়র বলে স্যুইপ মেরেও একটি বাউন্ডারি পান।
|
হাতে ফ্র্যাকচার নিয়েও ব্যাটিং
মধ্যাহ্নভোজের পর প্রথম বলেই অবশ্য বিহারী আউট হয়ে যান। সারাংশ জৈনের বলে প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে তিনি করেন ৫৭ বলে ২৭, যার মধ্যে রয়েছে ৫টি বাউন্ডারি। ১০ নম্বরে নামা ব্যাটার ললিত মোহনকে নিয়ে ২৬ রান যোগ করেন। ললিত ৪৮ বলে ২২ রান করে অপরাজিত থাকেন। অন্ধ্রর প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৩৭৯ রানে। হনুমার এই লড়াকু ইনিংসে মুগ্ধ দীনেশ কার্তিক ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই হনুমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
|
অস্ট্রেলিয়াতেও চোট নিয়ে ভারতকে বাঁচিয়েছিলেন
তবে হনুমার এই লড়াকু মানসিকতার পরিচয় এই প্রথম দেখা গেল না। ডান পায়ের হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট নিয়েও ২০২১ সালে সিডনি টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিনি ব্যাটিং চালিয়ে গিয়েছিলেন। ১৬১ বল খেলে ২৩ রান করে ম্যাচটি ড্র করতে সক্ষম হয়েছিলেন। টেস্টের পঞ্চম দিনে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সঙ্গে জুটি বেঁধে। সেই ম্যাচেও টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল কীভাবে হনুমা ব্যাটে ভর রেখে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলেন। তারপর এদিনের এই প্রয়াস মনে গেঁথে থাকবে ক্রিকেটপ্রেমীদের। গত জুলাইয়ে বার্মিংহ্যামে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ টেস্ট খেলেছেন। তারপর থেকে আর মিডল অর্ডারে জায়গা পাচ্ছেন না হনুমা।