প্রকাশ পোদ্দার প্রয়াত, মহেন্দ্র সিং ধোনির কেরিয়ারে তাঁর অনন্য অবদানের কথা জেনে নিন
প্রকাশ পোদ্দার প্রয়াত। তাঁর প্রয়াণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া বাংলা তথা ভারতীয় ক্রিকেট মহলে। গত ২৯ ডিসেম্বর হায়দরাবাদে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮২। বাংলা ও রাজস্থানের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার ছিলেন। তবে ভারতীয় ক্রিকেট তাঁর কাছে ঋণী থাকবে চিরকাল। প্রকাশ পোদ্দারের নজরে পড়ার পরই মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতীয় দলে জায়গা করে নেন বাকিটা ইতিহাস।
(ছবি- সিএবি)
ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রকাশ পোদ্দার বিসিসিআইয়ের ট্যালেন্ট রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট অফিসার হয়েছিলেন। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে প্রতিভা তুলে আনার কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। তখনই তাঁর নজরে পড়েন মহেন্দ্র সিং ধোনি। প্রকাশ পোদ্দার ভারতীয় ক্রিকেটে পরিচিত ছিলেন পিসিদা নামে। তাঁর সঙ্গেই টিআরডিও ছিলেন রাজু মুখোপাধ্যায়। দিলীপ বেঙ্গসরকারের নেতৃত্বাধীন যে ট্যালেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট উইং ছিল বিসিসিআইয়ের, সেখানেই প্রকাশ পোদ্দার ও রাজু মুখোপাধ্যায় সুপারিশ করেছিলেন ধোনির নাম। তখনও ঝাড়খণ্ড বিসিসিআইয়ের স্বীকৃতি পায়নি। ফলে ধোনি খেলতেন বিহারে। জামশেদপুরে একটি একদিনের ম্যাচ চলাকালীন ধোনি নজরে পড়েন প্রকাশ ও রাজুর।
প্রকাশ পোদ্দার উপলব্ধি করেছিলেন ধোনির হাত ও চোখের যে কো-অর্ডিনেশন রয়েছে তাতে তিনি পূর্বাঞ্চলে শুধু পড়ে থাকলে সেই প্রতিভা নষ্ট হয়ে যাবে। বিসিসিআইয়ের তত্ত্বাবধানে গ্রুমিংয়ের প্রয়োজনীয়তাও জরুরি বলে তিনি মনে করেছিলেন। ধোনি যে দারুণ সব বড় শট খেলছিলেন তা মুগ্ধ করেছিল প্রকাশ ও রাজুকে। তাই দিলীপ বেঙ্গসরকারের কাছে ধোনির নাম পাঠাতে দেরি করেননি। রাজু মুখোপাধ্যায় নিজের ব্লগে সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। রাজু মুখোপাধ্যায় প্রকাশ পোদ্দারকে ডাকতেন লুলুদা নামে। তিনি বলেছেন, ভারতীয় ক্রিকেটে ধোনির আরও অনেক আগে আসা উচিত ছিল বলে মনে করতেন প্রকাশ পোদ্দার। রাজ্য বা জাতীয় নির্বাচকরাও কীভাবে ধোনির মতো প্রতিভাকে আগে সুযোগ দেননি সেটাও তাঁকে বিস্মিত করত।
মহেন্দ্র সিং ধোনির বায়োপিক এমএসধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরিতে দেখা গিয়েছে নির্বাচক কিরণ মোরে কথা বলছেন প্রকাশ নামে একজনের সঙ্গে। হেলায় ছক্কা মারতে পারদর্শী এক ক্রিকেটারের কথা তিনি নির্বাচক মোরেকে বোঝাচ্ছিলেন, এমন দৃশ্য ছবিটিতে ছিল। সেই চরিত্রটি প্রকাশ পোদ্দারের কথা মাথায় রেখেই। প্রকাশ পোদ্দার ৭৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। ৩৮৬৮ রান রয়েছে, সর্বাধিক স্কোর ১৯৯। ১৯৬৪ সালে এমসিসির বিরুদ্ধে বোর্ড সভাপতি একাদশের বিরুদ্ধে তিনি অপরাজিত ১০০ রান করেছিলেন। ১৯৬২ সালে দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে তিনি ভারতীয় টেস্ট দলে ডাক পান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর ১১টি শতরান রয়েছে। সিএবি তাঁকে কার্তিক বোস লাইফটাইম অযাচিভমেন্ট পুরস্কারে সম্মানিত করেছিল। তাঁর খবর আজ সিএবিতে এসে পৌঁছনোর পর পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, বাংলার অন্যতম সেরা ক্রিকেটার প্রকাশ পোদ্দারের প্রয়াণে গভীর শূন্যতা তৈরি হলো। তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাই।