বিরাটদের পাশে সৌরভ, ম্যাঞ্চেস্টার টেস্ট বাতিলের কারণ জানিয়ে দিলেন ধোনিকে নিয়ে ইঙ্গিত
ম্যাঞ্চেস্টারে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্ট বাতিলের পর সিরিজের কী পরিণতি হবে তা নিয়ে চলছে জল্পনা। এই আবহে মুখ খুললেন বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ভারতীয় দলে করোনা সংক্রমণের জেরে ভীতির কারণেই যে ক্রিকেটাররা টেস্ট খেলতে চাননি এবং তার জেরে সিরিজের শেষ টেস্ট বাতিল হয়েছে, এমনই দাবি মহারাজের। ভারতীয় ক্রিকেট দল ও বিসিসিআইয়ের ভূমিকা সমালোচিত হলেও বিরাট কোহলিদের পাশেই রয়েছেন বোর্ড সভাপতি।
টেস্ট বাতিল প্রসঙ্গে
একটি সর্বভারতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাতকারে প্রথম ম্যাঞ্চেস্টার টেস্ট বাতিল নিয়ে মুখ খুললেন মহারাজ। টেস্ট বাতিল ঘোষণার আগে তিনি কলকাতায় একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, জানি না টেস্ট আদৌ শুরু হবে কিনা। পরে তা বাতিল হয়ে যায়। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্ট বাতিলই হয়ে গিয়েছে। ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড এ জন্য বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়েছে। এটা সামলানো সহজ নয়। আমরা পরে এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। তবে আগামী বছরও যদি টেস্টটি আয়োজন করা হয় তাহলে সেটিকে একটি টেস্ট হিসেবেই গণ্য করা হবে। এই সিরিজের অন্তর্গত থাকবে না ওই টেস্টটি।যদিও এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ইংল্যান্ডে পরে যে টেস্টি হবে সেটি বাতিল হওয়া পঞ্চম টেস্ট হিসেবেই গণ্য হবে, আলাদা টেস্ট হিসেবে দেখানো হবে না। এমনকী ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের ক্ষতির কথা মাথায় রেখে আগামী বছরের সফরে অতিরিক্ত একদিনের ম্যাচ বা টি ২০ ম্যাচ খেলতেও আপত্তি নেই ভারতের।
ভারতীয় দলে প্রবল ভীতির সঞ্চার
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, কন্যা সানার কলেজে ভর্তির জন্য আমি ২২ সেপ্টেম্বর লন্ডনে যাব। তবে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডকে আমরা পরিকল্পনার জন্য আরও কিছুটা সময় দিতে চাই। একটা ম্যাচকে স্থগিত করা সহজ বিষয় নয়। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা হবে না বলেও মনে করি। টেস্ট বাতিলের আগে ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথাও বলেছিল বোর্ড। সে কথা জানিয়ে বিসিসিআই সভাপতি বলেন, ক্রিকেটাররা খেলতে চাননি। তাঁদের দোষারোপ করাও যায় না। নীতীন প্যাটেল আইসোলেশনে চলে যাওয়ার পর দলের একমাত্র ফিজিও হিসেবে ছিলেন যোগেশ পারমারের। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন ক্রিকেটাররা। এমনকী ক্রিকেটারদের করোনা পরীক্ষাও পারমারই করান। সমস্ত ক্রিকেটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন যোগেশ। কিন্তু তিনি করোনা আক্রান্ত খবর পেতেই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন ক্রিকেটাররা। তাঁদের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দেয় তাঁরাও সংক্রমণের কবলে পড়েছেন কিনা এবং সেই ভাবনা থেকেই প্রবল ভীতির সঞ্চার হয়। জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকা এমনিতেই খুব কঠিন। ফলে ক্রিকেটারদের অনুভূতিকে মর্যাদা দিতেই হতো।
|
শাস্ত্রীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নয়
হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর বই প্রকাশ অনুষ্ঠানই বিরাট কোহলির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলে করোনার সুপার স্প্রেডার কিনা তা নিয়ে চলতে থাকা জল্পনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সৌরভ বলেন, নো কমেন্টস! এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। মনে করা হচ্ছে, শাস্ত্রীদের কাণ্ডকারখানায় বোর্ড যারপরনাই বিরক্ত। তবে সৌরভ পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ওই অনুষ্ঠানে হাজির থাকার জন্য শাস্ত্রী, বিরাটরা বোর্ডের কাছ থেকে কোনওরকম সম্মতি নেননি। যদিও সৌরভ জানিয়েছেন শাস্ত্রীদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না। তাঁর কথায়, কতদিন হোটেলের ঘরে আবদ্ধ থাকা যায়? দিনের পর দিন একই ঘরে আটকে থাকা সম্ভব নয়। মানবিকভাবেও এটা দীর্ঘদিন চলতে পারে না যে হোটেল থেকে মাঠ, মাঠ থেকে হোটেলের ঘরে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখা। দাদাগিরির শ্যুটিং করছি। সেখানে প্রায় ১০০ জন রয়েছেন, সকলেরই ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নেওয়া। কিন্তু দুটি ডোজ থাকার পরও তো সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এটাই তো এখন জীবন! বায়ো বাবলে দীর্ঘ সময় থাকা সম্ভব নয়। সেখান থেকে বেরিয়ে আসারও প্রয়োজন রয়েছে। এক বছর ধরে ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফরা জৈব সুরক্ষা বলয়ে রয়েছেন। এটা মজার ব্যাপার নয়। শরীর ও মনের উপর প্রভাব পড়ে। ভারতীয় দলের সকলেই মানুষ এটা তো অস্বীকারের উপায় নেই। ইংল্যান্ড থেকে আবার সংযুক্ত আমিরশাহীর জৈব সুরক্ষা বলয়ে ঢুকে পড়েছেন ক্রিকেটাররা। আবার কোয়ারান্টিন, আবার বায়ো বাবল। এরপর টি ২০ বিশ্বকাপের বায়ো বাবল। এটা সহজ ব্যাপার নয়।
আইপিএল দায়ী নয়
ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ও বর্তমান ক্রিকেটাররা মনে করছেন আইপিএলের কারণেই টেস্ট ম্যাচ বাতিল হয়েছে। যদিও তা মানতে নারাজ সৌরভ। তিনি বলেন, এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন নয় ভারতীয় বোর্ড। আমরা অন্য বোর্ডের প্রতিও সহমর্মী। মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ভারতীয় দলের মেন্টর করার বিষয়টি সৌরভেরই মস্তিষ্কপ্রসূত বলে জল্পনা চলছে। ধোনির সঙ্গে কথা বলেছিলেন সচিব জয় শাহ। সৌরভ অবশ্য এই প্রক্রিয়া নিয়ে খোলসা করেননি। তিনি বলেন, যাঁরই ভাবনা হোক না কেন ভারতীয় দলের সাফল্যের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। টি ২০ বিশ্বকাপে ধোনি ভারতীয় দলকে সহযোগিতা করবেন। ভারতীয় দল ও চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ধোনির টি ২০ ফরম্যাটের রেকর্ডও ভালো। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এগুলিও ভাবা হয়েছে। অনেক ভাবনাচিন্তার পরেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০১৩ সালের পর আমরা আইসিসি ট্রফি জিতিনি। ইংল্যান্ডে অস্ট্রেলিয়া যখন অ্যাশেজ সিরিজ ২-২ করেছিল তখনও এই ধরনের ভূমিকায় ছিলেন স্টিভ ওয়া। বড় মাপের ইভেন্টে হেভিওয়েটদের উপস্থিতি খুবই কার্যকরী হয়।
ধোনির ভবিষ্যৎ
ধোনি যে শুধু টি ২০ বিশ্বকাপের জন্যই রাজি হয়েছেন সে কথা জানাতে ভোলেননি সৌরভ। কিন্তু ধোনিকে যে ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার প্রস্তাব বিসিসিআই দেবে না সে কথাও উড়িয়ে দেননি বোর্ড সভাপতি। সৌরভ বলেন, আমার ধারণা ধোনি স্থায়ীভাবে কোনও দায়িত্ব নিতে এখনই চাইবেন না। তবে কোচের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে তাঁকে আমরা কোনও প্রস্তাবও দিইনি। ফলে এখনই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কিছু বলার সময় আসেনি, পরে দেখা যাবে। ভারতীয় টি ২০ দলে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ফেরানো প্রসঙ্গে সৌরভ বলেন, একেবারেই অবাক হইনি। তিনি একজন বিশ্বমানের ক্রিকেটার, এমন কোয়ালিটি প্লেয়ারদের নিয়েই দল গড়া লক্ষ্য ছিল। আর জাতীয় দলের বাইরে থাকা মানে আর সুযোগ মিলবে না, তা তো নয়। অশ্বিন যে কোনও ফরম্যাটেই ম্যাচ উইনার। নিজের বায়োপিক নিয়েও উচ্ছ্বসিত সৌরভ। তাঁর ভূমিকায় রণবীর কাপুরই যে পছন্দ সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। সেটা অবশ্য নির্ভর করবে রণবীরের ডেট পাওয়ার উপরে।