ভারতকে কেপ টাউনে কুপোকাত করে টেস্ট সিরিজ জয়ের দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা, প্রশ্নে ডিআরএস
তফাতটা শুধু অধিনায়ক আর হেড কোচের। ব্যক্তির নাম রাহুল দ্রাবিড়। ২০০৬-০৭ মরশুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে প্রথম টেস্ট জিতেও পরের দুটিতে পরাস্ত হয়ে সিরিজ হেরে ফিরতে হয়েছিল রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বাধীন ভারতকে। এবার রাহুল দ্রাবিড় ভারতের হেড কোচ। সেঞ্চুরিয়ন টেস্টে জেতার পর ফের দুটি টেস্ট হেরেই দেশে ফেরার মতো পরিস্থিতি বিরাট কোহলির নেতৃত্বাধীন ভারতের।
|
জয়ের কাছাকাছি
টেস্টের চতুর্থ দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১১১ রান, হাতে ছিল ৮ উইকেট। প্রথম সেশনে মাত্র একটি উইকেট হারিয়ে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে প্রোটিয়াদের জিততে দরকার ৪১ রান, হাতে রয়েছে ৭ উইকেট। কিগান পিটারসেন ৮২ রানে শার্দুল ঠাকুরের বলে আউট হয়েছেন। ভারতের দুটি ডিআরএসের চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হয়ে ৭২ বলে ২২ রানে ব্যাট করছেন রাসি ভ্যান ডার ডুসেন। তেম্বা বাভুমা অপরাজিত রয়েছেন ১২ রানে।
|
কঠিন লড়াই
তৃতীয় উইকেট জুটিতে আজ মূল্যবান ৫৪ রান যোগ করেন পিটারসেন ও ডুসেন। যদিও ৫৯ রানের মাথায় জীবন পান পিটারসেন। জসপ্রীত বুমরাহর বলে পিটারসেনের ক্যাচ ফেলেন পূজারা, যা ম্যাচ তথা সিরিজ ফেলার সামিল হতেই পারে। ৫৯ রানে জীবন পাওয়ার পর ৮২ রানের মাথায় বোল্ড হন পিটারসেন। এই ক্যাচটি পূজারা যদি না ফেলতেন এবং ভারত আরও দু-একটি উইকেট ফেলতে পারত তাহলে ম্যাচের ফল অন্যরকম যে হতেই পারতো তা মানছেন গৌতম গম্ভীরই। বিশেষ করে লো স্কোরিং ম্যাচ, যেখানে পিচে ব্যাট করাই সহজ নয়, সেখানে একটি রানও অত্যন্ত মূল্যবান। ৪৬.২ ওভারে ১৫৫ রানের মাথায় পিটারসেন ফেরেন। লাঞ্চে প্রোটিয়াদের স্কোর ৩ উইকেটে ১৭১।
|
ডিআরএস ও ডুসেন
এরই মধ্যে দুটি ডিআরএস নিয়ে ভারতীয়দের অসন্তোষ ধরা পড়ে ভারতীয়দের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে। ৩৬.১ ওভারে ডুসেনের বিরুদ্ধে ক্যাচ আউটের আবেদন উঠলেও সাড়া দেননি আম্পায়ার মারাইস এরাসমাস। ভারত রিভিউ নেয়। দেখা যায় বল যে সময় ব্যাট অতিক্রম করছে তখনও আওয়াজ পাওয়া গেলেও ব্যাট-বলের সংযোগের নির্ভরযোগ্য প্রমাণ মেলেনি। কেন না, সেই সময় ব্যাটটি মাটিতেও লেগেছিল। ডিআরএস খোয়ানোর পর এরাসমাসের কাছে বিরাট কোহলিকে কিছু বলতে দেখা যায়, তিনি আঙুল দিয়েও কিছু দেখাচ্ছিলেন। সবমিলিয়ে অসন্তোষের ছবি ছিল স্পষ্ট। এরপর ৫৪.২ ওভারে ডুসেনের বিরুদ্ধে লেগ বিফোরের আবেদন ওঠে। সেই এরাসমাসই সাড়া দেননি। ভারত রিভিউ নেয়। তৃতীয় আম্পায়ার সবদিক বিশ্লেষণ করে জানান, এটি আম্পায়ার্স কল। উইকেটে বলের একটা অংশ লাগতে পারে বলে বল ট্র্যাকিং জানালেও যেহেতু আম্পায়ারের সফট কল নট আউট ছিল তা সেটিই থেকে যায়। দুবার রিভিউ ভারতের পক্ষে সদয় হয়নি।
গম্ভীরের আপত্তি
তবে ডিআরএস নিয়ে চর্চায় আপত্তি রয়েছে গৌতম গম্ভীরের। তিনি প্রথম সেশনের পর বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন, টেকনোলজির সাহায্য নিতে গেলে কখনও তা পক্ষে যাবে, কখনও বিপক্ষে। প্রযুক্তির উপর আস্থা থাকলে সেটাই মেনে নিতে হবে। ফলে ডিআরএস নিয়ে যা আলোচনা চলছে তা বাস্তবে অর্থহীন। এটাও মাথায় রাখতে হবে খেলা কানপুরে হচ্ছে না, যেখানে পিচে পড়ে বল ওঠে না। খেলা হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে। প্রযুক্তিতে আস্থা না থাকলে তার সাহায্য নেওয়ারও যে দরকার নেই সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন গম্ভীর। তিনি বলেন, সিরিজ জিতলে দক্ষিণ আফ্রিকা যোগ্য দল হিসেবেই তা জিতবে। দক্ষিণ আফ্রিকার এবারের দলের তুলনায় শক্তির নিরিখে অনেক এগিয়ে ভারত। কিন্তু তারপরও তারা সিরিজে পিছিয়ে পড়ার পর দারুণভাবে কামব্যাক করেছে। বরং এরপর ভারত যখন ফের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাবে তখন এই দলের ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতা বাড়বে। ভারতের ক্রিকেটারদের বেশিরভাগই যাবেন কম অভিজ্ঞতা নিয়ে। ফলে ভারতের সিরিজ জয়ের সুযোগ এবারই সবচেয়ে বেশি ছিল।