
হার্দিক-কার্তিক-যুবি থেকে আজহার-পতৌদি-কাম্বলি, ভিনধর্মে বিয়ে করেছেন একাধিক ভারতীয় ক্রিকেটার
ইন্টার-কাস্ট ম্যারেজ। এই কথাটি শুনলে এখনও অনেকেই বাঁকা চোখে তাকান। অথচ দুই ভিনধর্মের পুরুষ ও মহিলার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার নজির খুব একটা কম নয়। সেলেবদের মধ্যে নাম রয়েছে বেশ কয়েকজন ভারতীয় ক্রিকেটারের। কারও বিয়ে টিকেছে, খুব কম সমখ্যক ভেস্তেও গিয়েছে। তবে ভারতীয় ক্রিকেটে ভিনধর্মে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ সফলতম দম্পতি মনসুর আলি খান পতৌদি ও শর্মিলা ঠাকুর।

পতৌদি-শর্মিলা
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মধ্যগগনে থাকাকালীনই বঙ্গ-তনয়া শর্মিলা ঠাকুরকে বিয়ে করেছিলেন নবাব মনসুর আলি খান পতৌদি। জানা যায়, এক কমন ফ্রেন্ডের মাধ্যমেই আলাপ পতৌদি ও শর্মিলার। আলাপ থেকে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হতে বেশি সময় লাগেনি। পতৌদি ও ভোপালের নবাব মনসুর আলি খানের সঙ্গে বাঙালি হিন্দু পরিবারের কন্যা শর্মিলার প্রেম ও তারপর বিয়েতে ধর্ম-বিশ্বাস বাধা হতে পারেনি। এই সম্পর্ক পরিণতি পায় ১৯৬৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর। রাজ পরিবারের বিয়ে ঘিরে তুমুল উন্মাদনা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। পতৌদি ও শর্মিলার পুত্র সইফ আলি খান এবং কন্যা সোহা আলি খান। সইফের সঙ্গে আবার প্রথম বিয়ে হয় অমৃতা সিংয়ের। পরে তিনি বিয়ে করেন করিনা কাপুরকে। সোহা আলি খান বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন কুণাল খেমুর সঙ্গে।

আজহার-সঙ্গীতা
পতৌদির পর ভিনধর্মে বিয়ে করেন আরেক প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন। তাঁর অবশ্য প্রথম বিয়ে হয় নৌরিনের সঙ্গে। আজহার ও নৌরিনের দুউ সন্তান। যদিও ১৯৯৬ সালে নৌরিনের সঙ্গে আজহারের ডিভোর্স হয়। ওই বছর বিশ্বকাপের আগে থেকেই বলিউডের অভিনেত্রী সঙ্গীতা বিজলানির সঙ্গে আজহারের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। সঙ্গীতাকে বিয়েও করেন আজ্জু। আজহার-সঙ্গীতার অবশ্য কোনও সন্তান নেই। আজহারের এক পুত্র দুর্ঘটনায় প্রয়াত হন। অপর পুত্রের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে সানিয়া মির্জার বোন আনমের। আনমের এটি দ্বিতীয় বিয়ে। আজহারের ভোট-প্রচারেও দেখা যেত সঙ্গীতাকে। যদিও আজহার-সঙ্গীতারও বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

জাহির-সাগরিকা
প্রাক্তন ভারতীয় পেসার জাহির খানের সঙ্গে বিয়ে হয় বলিউড অভিনেত্রী সাগরিকা ঘাটগের। ২০১৭ সালে জাহির সাগরিকার সঙ্গে বাগদানের ঘোষণা করেন। ওই বছরই তাঁরা আদালতে গিয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। জাহির মুসলিম ও সাগরিকা হিন্দু। তাঁরা অবশ্য সুখেই সংসার করছেন।

কাইফ-পূজা
জাতীয় দলে জাহিরের আরেক সতীর্থ মহম্মদ কাইফও বিয়ে করেছেন হিন্দুকে। কাইফের সঙ্গে ২০১১ সালে বিয়ে হয় পূজা যাদব। পেশায় সাংবাদিক পূজা নয়ডার মেয়ে। তাঁদের দুই সন্তান বর্তমান।

দীনেশ-দীপিকা
দীনেশ কার্তিক ও দীপিকা পাল্লিকালও বিয়ের পর ভালোই রয়েছেন। যদিও দীনেশের বিয়ের প্রথম অভিজ্ঞতা মোটেই সুখের নয়। সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ায় দীনেশের প্রথমা স্ত্রী নিকিতা বিয়ে করতে বাধ্য হন তামিলনাড়ু তথা ভারতীয় দলে দীনেশের সতীর্থ মুরলী বিজয়কে। এরপর কার্তিক ভারতীয় স্কোয়াশ দলের তারকা দীপিকা পাল্লিকলের প্রেমে পড়েন। দীপিকা খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বী, কার্তিক হিন্দু। দুই ধর্মের রীতি মেনেই তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

অজিত-ফতিমা
হিন্দু ক্রিকেটার ভিনধর্মে বিয়ে করেছেন এমন উদাহরণ রয়েছে অজিত আগরকারের ক্ষেত্রেও। তিনি প্রেমে পড়েন মুসলিম ফতিমার সঙ্গে। ফতিমা শিয়া মুসলিম। ফতিমা আগরকারের এক বন্ধুর বোন, ক্রিকেটেরও অনুরাগী। তাতেও প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় দুজনের মধ্যে। ২০০৭ সালে বিয়ের পর অজিত ও ফতিমা সুখেই রয়েছেন।

কাম্বলি-নোয়েলা-আন্দ্রেয়া
বিনোদ কাম্বলি দুবারই বিয়ে করেন খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বী মহিলাকে। ১৯৯৮ সালে তাঁর বিয়ে হয়েছিল খ্রিস্টান নোয়েলার সঙ্গে। সেই বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। ডিভোর্সের পর তিনি আরেক খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বী আন্দ্রেয়ার প্রেমে পড়েন। পরে তাঁকেই বিয়ে করেন ২০১০ সালে।

যুবরাজ-হ্যাজেল
ক্যান্সারকে হারিয়ে যুবরাজ সিং বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন হ্যাজেল কিচের সঙ্গে। ২০১৫ সালে বিয়ে হয় যুবি ও হ্যাজেলের। যুবি শিখ, হ্যাজেল খ্রিস্টান। তবে বিয়ের পর হ্যাজেল নিজের নাম ও পদবি পরিবর্তন করে হয়েছেন গুরবসন্ত কৌর।

হার্দিক-নাতাশা
ভারতীয় ক্রিকেট দলের আরেক তারকা বিয়ে করেছেন নাতাশা স্টানকোভিচকে। সার্বিয়ান মডেল তথা অভিনেত্রী বলিউডেও পা রেখেছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে ডেটিং করার পর নাতাশাকে বিয়ে করেন হার্দিক। তাঁদের এক পুত্রও রয়েছে।
ছবি- ইনস্টাগ্রাম