ফের কলঙ্কিত ক্রিকেট, 'দ্য সান'-র অন্তর্তদন্তে পর্দাফাঁস,জেনে নিন অ্যাশেজে ফিক্সিংয়ের গল্প
ক্রিকেট কী আর সত্যিই জেন্টলম্যানস গেম নয়, একের পর এক ম্যাচ ফিক্সিং, স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ কলঙ্কিত করছে আপনার-আমার সকলের পছন্দের খেলাকে।
এবার সম্মানের অ্যাশেজেও ম্যাচ ফিক্সিংয়ের কালো ছায়া। আন্তর্জাতিক মিডিয়া দ্য সানের অন্তর্তদন্তে দাবি অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ডের এই সিরিজেও হয় স্পট ফিক্সিং, ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মতো ঘটনা। বুকিরা নিজেরাই স্বীকার করে নিয়েছে ঠিক কীভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সাহায্য নিয়ে চলে এই বেটিং দুনিয়া।
দ্য সানের অন্তর্তদন্ত
ফের বোমা ক্রিকেট দুনিয়া। ভারত- পাকিস্তানের গন্ডি অতিক্রম করে বেটিং দুনিয়া গ্রাস করেছে নিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটকে তাই প্রমাণ করার জন্য চার মাস ধরে স্টিং অপারেশন চালিয়েছে এই আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম। বুকিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় যাঁরা, জানিয়ে দেয় তাদের কাছে এমন তথ্য থাকে যা দিয়ে আপনি লক্ষ লক্ষ পাউন্ড জিততে পারেন।
কীভাবে হয় নিয়ন্ত্রণ
এক
ওভারে
কত
রান
হবে
এটা
নির্ধারণ
করার
জন্য
১
লক্ষ
৪০
হাজার
পাউন্ড
অবধি
টাকা
ব্যয়
করা
হয়।
যা
ভারতীয়
মুদ্রায়
প্রায়
১
কোটি
২০
লক্ষ
টাকা।
বুকিদের
মধ্যে
একজনকে
'বিগ'
নামে
চিহ্নিতকরণ
করা
হয়েছে।
তিনি
জানিয়েছেন,
'কোনও
একটি
ওভারের
আগে
আমি
আপনাকে
বলব
এই
ওভারে
এত
রান
হবে,
তারওপর
আপনি
টাকা
লাগাবেন।
'
তাঁর
বিস্ফোরক
স্বীকারোক্তি
প্লেয়ারদের
সঙ্গে
তাঁদের
যোগাযোগ
আছে।
যে
ওভারে
তিনি
নিজের
নির্ধারিত
রানটা
করবেন
তার
আগে
কোনও
সিগন্যাল
পাঠান।
সেটা
হতে
পারে
এক
হাত
থেকে
গ্লাভস
খুলে
আবার
গ্লাভস
পড়া।
মাঠে
দর্শকদের
মধ্যে
বুকিদের
প্রতিনিধি
থাকে।
তিনি
বেটিং
মার্কেটে
খবরটা
পাঠিয়ে
দেন।
প্লেয়ার না 'পাপেট'
বুকিদের অকপট স্বীকারোক্তি প্লেয়াররা আসলে তাঁদের 'পাপেট '। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলে তাঁদের একজন রয়েছেন, যাঁর কোড নাম 'সাইলেন্ট ম্যান'। বুকিদের পক্ষ থেকে এও জানানো হয়েছে, বিশ্বকাপ জয়ী একজন অলরাউন্ডার সহ বর্তমান ও প্রাক্তন দলের বহু ক্রিকেটারের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ আছে।
ফিক্সার-এ -সোবার্স জোবান
জোবান একজন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার , যিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন। তিনিই দুষ্ট ক্রিকেটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বুকমেকার প্রিয়ঙ্ক শাক্সেনার জন্য দশ বছর ধরে কাজ করেন তিনি। দিল্লির বসন্তবিহারের হাই প্রোফাইল এলাকায় বাস তাঁর। নিজের ইমেজ পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য তিনি নানা জিনিস করেন। বিরাট কোহলি -র সঙ্গে দিল্লিতেও একসময় ক্রিকেট খেলতেন তিনি।
ফিক্সার -বি প্রিয়ঙ্ক শাক্সেনা
বুকমেকার এবং ব্যবসায়ী প্রিয়ঙ্ক শাক্সেনা। তামাক ও মশলার বিক্রেতা প্রিয়ঙ্ক এমনটাই জানিয়েছেন তাঁর পার্টনার জোবান। জোবানের মাধ্যমে দুর্নীতিগ্রস্ত ক্রিকেটারদের দলে নিয়ে কাজ করেন তিনি।
তৃতীয় অ্যাশেজ টেস্টের ভবিষ্যত নির্ধারণ
জোবানের দাবি, চিত্রনাট্য মেনে কাজ হলে এই টেস্ট পাঁচদিন গড়াবে। স্টিং অপারেশকারী দলের অংশ হিসেবে কাজ করা সাংবাদিককে জানানো হয়, আপনি কী সেশন সেশন ফিক্সড করতে চান। এক একটা সেশন ফিক্সড করতে গেলে ৬০ লক্ষ টাকা , তেমনি দুটো সেশন ফিক্সড করতে গেলে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা দিতে হবে। প্রিয়ঙ্ক সাইলেন্ট ম্যানের সঙ্গে কথা বলবে। তবে বৈঠকে যিনি টাকা লাগাচ্ছেন তিনি থাকতে পারবেন না। জোবান আরও জানান হয়ত তিনি বললেন এক কোটি টাকা লাগবে, কিন্তু সে চেয়ে বসল ৫ কোটি টাকা।
যেভাবে এগোয় ঘটনাক্রম
শাক্সেনা জানিয়ে দেন এক হাজার শতাংশ নিশ্চিত বিষয়। তারপর জানানো হয় অস্ট্রেলিয়ায় একটা ই মেল পাঠানো হয়েছে। সেটার জবাব এলেই বলে দেওয়া হবে কবে ঠিক কী হবে। সেটা ঠিক হলেই অস্ট্রেলিয়া যাবে শাক্সেনা, সেখানে সাইলেন্ট ম্যানের সঙ্গে দেখা করে চিত্রনাট্য ও দর দুটোই ঠিক হয়ে যাবে। তিনি আরও জানান ভারতেই তাঁকে অগ্রিম টাকা দিয়ে দিতে হবে। তারপর তাঁকে সব ডিটেল দেওয়া থাকবে কত ওভারে কত রান হবে। টস হয়ে যাওয়ার পর সব খবর তাঁর অবধি পৌঁছে দেওয়া হবে। আরও জানান অস্ট্রেলিয়ার বুকমেকাররা এই ম্যাচ নিয়ে আগ্রহী , ফলে এটা পারফেক্ট ম্যাচ হবে। যেহেতু অস্ট্রেলিয়ার পার্থের সঙ্গে ভারতের দিল্লির সময়ের ব্যবধান আড়াই ঘন্টা তাই এটাকে টেলিফোনে বেটিং খুব ভালো জমবে।
কোথায় কোথায় হয় ফিক্সিং
স্টিং অপারেশনের প্রতিনিধিরা নিজেদের লন্ডনের একটি বুকি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। তারা জিম্বাবোয়ের নতুন লিগে টাকা লাগাতে চায়। তবে জোবান জানায় যে কোনও লিগের প্রথম ও শেষ ম্যাচ ফিক্স করা হয় না। তদন্তের থেকে বাঁচতে। আইপিএলের ১৭-১৮ টা ম্যাচ ফিক্সড ছিল এমনটাই জানিয়েছে তারা। দুর্নীতিগ্রস্ত তারকা ক্রিকেটারদের সাহায্যে এই মার্কেট এখন ১ বিলিয়ন পাউন্ডের।
ফিক্সিংয়ের ধরণ -ধারণ
খেলোয়াড়দের নিজের নিজের বুকি ও এজেন্ট আছে। আইপিএল সকলকে শিখিয়েছে ঠিক কী করে এটা সহজে করা যায়। গত দশবছরে জোবান বহু দক্ষিণ আফ্রিকার, অস্ট্রেলিয়ার ও পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। যাঁরা অর্থ উপার্জন করতে চায় এবং সুরক্ষিত থাকতে চায়। কোনও একজন টেস্ট প্লেয়ার একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ওয়াইড বল করার জন্য ১ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা পেয়েছে। আবার কেউ ওভারের শেষ বলে আউট হয়ে যাওয়ার জন্যেও টাকা পায়।
সিগন্যাল দেওয়ার হাজার ধরণ
সিগন্যাল পাঠানোর হাজার ধরণ আছে। এমনটাই জানিয়েছেন সোবার।তাঁর মতে ক্যামেরায় ধরা পড়বে এমন সিগন্যাল আর পাঠায় না ক্রিকেটাররা। আইপিএলে এত বেশি ক্যামেরা থাকে। তাই এখন অন্য পদ্ধতিতে সিগন্যাল হয়।একজন ক্রিকেটারের পাঁচটা হাফ স্লিভ ও পাঁচটা ফুল স্লিভ শার্ট আছে। তিনি ফুল স্লিভ টি-শার্ট পড়ে বল করতে এলেন এটা একটা সিগন্যাল। আবার কেই তাঁর দিকে আসা বলটা আটাকালো না , নো বল করল এ সবই সিগন্যালের মধ্যে পড়ে। একজন ক্রিকেটার সিগন্যাল দেওয়ার পর ২-৩ মিনিটের জন্য ফোন লাইন খুলে যায়।
কীভাবে টাকা দেওয়া হয়, কে চালায়
এখানে দুর্নীতিগ্রস্ত ক্রিকেটাররা যে টাকাটা পান তা পুরোটা হাওলা থেকে দেওয়া হয়। আর এই পুরো দুনিয়ার মূল রাশ রাখা রয়েছে ডি কোম্পানির হাতে।