পাকিস্তানে থাকার মতো পরিস্থিতিই ছিল না! চাঞ্চল্যকর দাবি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের
রাওয়ালপিণ্ডিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজ শুরুর কিছুক্ষণ আগেই গত শুক্রবার সফর বাতিল করে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এই আশঙ্কা থেকেই চরম সিদ্ধান্ত। যদিও নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের এই সিদ্ধান্তের প্রবল সমালোচনা করেছে পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ড, পাকিস্তান সরকার ও পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটাররা। এমনকী নিউজিল্যান্ডের এই পদক্ষেপের প্রতিবাদে আইসিসি-র কাছে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানাতে চাইছে পিসিবি। এই আবহে চাঞ্চল্যকর দাবি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের।
|
সফর বাতিল নিয়ে চর্চা
সফর বাতিলের কারণ হিসেবে জানানো হয়েছিল, নিউজিল্যান্ড সরকার এবং নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের তরফে নিযুক্ত নিরাপত্তা আধিকারিকদের কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শের ভিত্তিতে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই সফর বাতিল। যদিও পিসিবি বা পাক সরকার হুমকির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলেও তা জানানো হয়নি। এমনকী কারণ জানানো হয়নি আইসিসিকেও। পাকিস্তানের অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটারের কটাক্ষ ভুয়ো হুমকির জেরে আচমকা সফর বাতিলে তাঁরা বিস্মিত। কোনও দেশ এভাবে সফর বাতিল করে না, ভবিষ্যতেও করবে না। পাকিস্তান সরকারকে জানালে গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা যেত। যদি সত্যিই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকত তাহলে সেটা খতিয়ে দেখত পাকিস্তানের বিভিন্ন এজেন্সি। এমনকী ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা দলের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনার পর থেকে পাকিস্তানে যে সব দেশ খেলতে যায় তাদের জন্য যে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় তা বিদেশের কোনও রাষ্ট্রপ্রধানকে দেওয়া নিরাপত্তার সমতুল বলে দাবি পাকিস্তানের।
সিদ্ধান্তে অনড় নিউজিল্যান্ড
কিন্তু নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট এখনও অনড় তাদের সিদ্ধান্তে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্নকে আশ্বস্ত করলেও লাভ হয়নি। সফর বাতিলের পর গতকালই সন্ধ্যায় চার্টার্ড বিমানে দুবাই পৌঁছেছেন নিউজিল্যান্ড দলের সঙ্গে থাকা ৩৪ জন। সফর বাতিল করে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আগেই মন্তব্য করেছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের চিফ এগজিকিউটিভ বিবৃতিতে দাবি করেছেন, যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তাতে পাকিস্তানে থাকা সম্ভব ছিল না। সে কারণেই সফর বাতিল।
|
হুমকির জেরে সঠিক পদক্ষেপ
আপাতত নিউজিল্যান্ডের ৩৪ জনই দুবাইয়ে হোটেলে সেলফ আইসোলেশনে রয়েছেন। আগামী সপ্তাহে ২৪ জন দেশে ফিরবেন। নিউজিল্যান্ডে ম্যানেজড আইসোলেশন কোয়ারান্টিন রুম ফাঁকা হলেই সেইমতো বিমানের সূচি দেখে তাঁদের দেশে ফেরার দিন ঠিক হবে। বাকিরা দুবাইয়েই থাকবেন। তাঁরা পরে টি ২০ বিশ্বকাপ দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। ডেভিড হোয়াইট জানিয়েছেন, পাকিস্তান সফর শেষে এমআইকিউ রুমের যে বন্দোবস্ত হয়েছিল তা আপাতত বাতিল করা হয়েছে। পিসিবির খুব কঠিন সময় উপলব্ধি করছি। নিউজিল্যান্ড দলকে সুরক্ষিত ও যত্নে রাখতে পিসিবির চিফ এগজিকিউটিভ ওয়াসিম খান যে পেশাদারিত্বের সঙ্গে তাঁর টিম নিয়ে কাজ করেছেন তা প্রশংসনীয় এবং তাঁর ধন্যবাদ প্রাপ্য। নিউজিল্যান্ড পাকিস্তান সিরিজ খেলতেও চেয়েছিল। কিন্তু সুনির্দিষ্ট হুমকির জেরে সরকারের পরামর্শে সফর বাতিল করতে হয়েছে। মাঠে থাকা নিউজিল্যান্ডের নিরাপত্তা পরামর্শদাতা ও অন্য সূত্রও সেই পরামর্শকেই মান্যতা দেন। পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে থাকে শুক্রবার। হুমকির মাত্রা বৃদ্ধিতে পরামর্শের ধরনও বদলায়। দীর্ঘ শলা-পরামর্শের পর সফর বাতিল করা ছাড়া উপায় ছিল না, এটাই দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত। ঠিক কী হুমকি তা প্রকাশ্যে জানানো না গেলেও কেমন ধরনের হুমকি এসেছে সে কথা জানানো হয় পিসিবিকেও। উল্লেখ্য, ওই দিন হোটেল ছাড়েনি দুই দলই। পিণ্ডি স্টেডিয়ামে দর্শকদেরও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।