পাঞ্জাবের বিক্রমজিৎ টি ২০ বিশ্বকাপে খেললেন রোহিতদের বিরুদ্ধে, ভারত ছেড়ে কীভাবে নেদারল্যান্ডসে?
নেদারল্যান্ডসের ওপেনার বিক্রমজিৎ সিংয়ের কাছে আজকের দিনটি স্মরণীয় হয়ে রইল। এই প্রথম টি ২০ আন্তর্জাতিকে ভারতের বিরুদ্ধে খেলল নেদারল্যান্ডস। তাও আবার টি ২০ বিশ্বকাপে। সিডনিতে আজকের ম্যাচে ডাচরা হেরে গিয়েছে ৫৬ রানে। এর আগে, ২০০৩ ও ২০১১ সালে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপেও ভারতের কাছে হেরেছিল নেদারল্যান্ডস। তবে পাঞ্জাবে জন্মানো বিক্রমজিৎ সিং এই প্রথম খেললেন ভারতের বিরুদ্ধে।
|
ভারত ছেড়ে পরিবারের নেদারল্যান্ডস পাড়ি
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বরের শীতের রাতে পাঞ্জাব ছেড়ে দিল্লির ট্রেন ধরেছিল বিক্রমজিৎ সিংয়ের পরিবার। হঠাৎই একদিন রাতে বিক্রমজিতের ঠাকুরদা খুশি চিমা বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে বলেন ব্যাগপত্র দ্রুত গুছিয়ে নিতে। রাতেই জলন্ধর থেকে ধরেন দিল্লির ট্রেন। পাঁচ বছরের পুত্রসন্তান হরপ্রীত, যিনি বিক্রমজিতের বাবা, খুশি চিমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, বাবা আমরা কোথায় যাচ্ছি? উত্তর দিতে না পেরে হেসেছিলেন হরপ্রীতের পিতা। হরপ্রীত নেদারল্যান্ডসের আমস্টেলভিন থেকে ওই সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, সেই রাত আর তার পরের দিনের কথা ভুলতে পারি না। মনে হয় এই তো সেদিন। পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতেই বাবা আমাদের নিয়ে নেদারল্যান্ডসে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে গিয়ে ট্যাক্সি চালানো শুরু করেন খুশি চিমা। হরপ্রীত আরও জানান, নেদারল্যান্ডসে প্রথম দিকে ভাষা বুঝতে সমস্যা হতো। তাছাড়া গায়ের রং, দাড়ি, পাগড়ির জন্য আমাদের বর্ণবৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। যদিও বিক্রমজিৎকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। নিজের ট্রান্সপোর্টের কোম্পানি হরপ্রীত সিংয়ের হাতে তুলে দিয়ে ২০০০ সালে জলন্ধরে ফিরে আসেন খুশি চিমা।
বিক্রমজিৎ জন্মেছেন পাঞ্জাবে
বিক্রমজিতের জন্ম পাঞ্জাবের খুর্দ চিমায়। সাত বছর অবধি এ দেশেই ছিলেন। ক্রিকেটের হাতেখড়ি এ দেশেই। ১১ বছর বয়সে বিক্রমজিৎ একটি অনূর্ধ্ব ১২ টুর্নামেন্ট খেলার সময় নজরে পড়েন তৎকালীন ডাচ অধিনায়ক পিটার বোরেনের। এরপর তাঁর প্রশিক্ষণেই বিক্রমজিতের ক্রিকেটীয় প্রতিভার বিকাশ ঘটতে থাকে। বিট অল স্পোর্টস বা ব্যাস সংস্থার স্পনসরশিপ পান বিক্রমজিৎ। এই সংস্থা সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, মহেন্দ্র সিং ধোনি, হরভজন সিংয়ের মতো ক্রিকেটারদের ব্যাট তৈরি করে থাক। ১৫ বছর বয়সে বিক্রমজিৎ নেদারল্যান্ডস এ দলে সুযোগ পান। ২ বছর পর সিনিয়র দলে সুযোগ। বিক্রমজিতের কথায়, আমার ক্রিকেট খেলা শুরু হয়েছিল চিমা খুর্দেই। নেদারল্যান্ডসে আসার পর বাবার সঙ্গে মাঠে যেতাম। তিনি স্থানীয় লিগে খেলতেন। তাঁর অধিনায়কত্বেও আমি খেলেছি। জানি না পিটার আমার মধ্যে কী লক্ষ্য করেছিলেন। তবে আমি ভাগ্যবান তাঁর মতো মেন্টর পেয়ে। আমার ক্রিকেট কেরিয়ারে তিনিই গাইড করে থাকেন। তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন।
নেদারল্যান্ডসের পাশাপাশি প্র্যাকটিস ভারতেও
নেদারল্যান্ডসে বেশি জনপ্রিয় ফুটবল। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর অবধি চলে ক্রিকেট মরশুম। বিক্রমজিতের বাবার সঙ্গে খেলার সুবাদেই সুসম্পর্ক রয়েছে পাঞ্জাব ও রাজস্থান রয়্যালসের প্রাক্তন বোলার অমিত উনিয়ালের। তিনি একটা সময় নেদারল্যান্ডসে ক্রিকেট লিগে খেলেছেন। তাঁর আকাদেমিতেই চণ্ডীগড়ে প্রশিক্ষণ নিতে আসেন বিক্রমজিৎ। ২০১৫-১৬ মরশুম থেকে ২০১৯-২০ অবধি ছয় মাস করে সেই গুরুসাগর ক্রিকেট আকাদেমিতেই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিক্রমজিৎ। তাঁকে নিয়ে প্রথম দিকে কিছুটা সংশয় ছিল উনিয়ালের। কিন্তু যেভাবে আকাদেমির অন্যদের সঙ্গে মিশে গিয়ে প্রবাসী ভারতীয় বিক্রমজিৎ কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস ও টেম্পারামেন্টের পরিচয় দেন তাতে মুগ্ধ হয়ে যান উনিয়াল। ২০২১ সালে বিক্রমজিৎ জলন্ধরে গিয়ে প্রাক্তন অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটার তরুবর কোহলির আকাদেমিতে প্র্যাকটিস করেছেন।
স্মরণীয় দিনে হতাশ করলেন
বিক্রমজিৎ এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তরুবর কোহলির আকাদেমিটি আমার গ্রাম খুর্দ চিমার কাছে। ফলে আমি ভারতে গেলে মা যে চিন্তা করতেন, এখানে অনুশীলনের ফলে সেটা আর করতে হয়নি। আমি ঠাকুরদার সঙ্গেও অনেক সময় কাটাতে পেরেছি। বিক্রমজিতের ঠাকুরদা ক্রিকেটের ভক্ত। নেদারল্যান্ডসের ওপেনারের কথায়, ঠাকুরদা ভারতকেই সমর্থন করেন। যদিও আমি নিশ্চিত আমার জন্য আজ তাঁর সমর্থন থাকবে নেদারল্যান্ডসের প্রতি। তবে এদিন হতাশই করেছেন বিক্রমজিৎ। ভারতের বিরুদ্ধে রান পেলেন না। হেরেও গেল তাঁর দল। যদিও বিক্রমজিৎ ভবিষ্যতে ডাচ ক্রিকেট দলের তারকা হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখেন বলেই মনে করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা।
(ছবি- বিক্রমজিৎ সিংয়ের ইনস্টাগ্রাম)