Exclusive: ভারতীয় দলে স্পিন বোলিং কোচ চান নরেন্দ্র হিরওয়ানি, কারণ-সহ দিলেন পছন্দের তালিকা
রবি শাস্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ভারত ১৯৮৮ সালে মাদ্রাজে (বর্তমানে চেন্নাই) ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৫৫ রানে হারিয়েছিল। সেই টেস্টে হয়েছিল এক বিশ্বরেকর্ড যা আজও অটুট। নিজের অভিষেক টেস্টে ৬টি মেডেন-সহ ৩৩.৫ ওভার হাত ঘুরিয়ে এই টেস্টে ১৩৬ রানের বিনিময়ে ১৬ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ডটি গড়েছিলেন নরেন্দ্র হিরওয়ানি। দুই ইনিংসেই আউট করেছিলেন ভিভিয়ান রিচার্ডসকে, দুই ইনিংসেই নেন আটটি করে উইকেট। পরে ভারতীয় দলের নির্বাচক ও ন্যাশনাল ক্রিকেট আকাদেমিতে কোচের দায়িত্বও পালন করেছেন। ঝটিকা সফরে কলকাতায় এসে তিনি মুখোমুখি ওয়ানইন্ডিয়া বাংলার।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে
রাহুল দ্রাবিড়ের কোচিংয়ে ভারত হোম সিরিজে টি ২০ ও টেস্টে যেভাবে নিউজিল্যান্ডকে পর্যুদস্ত করেছে তাতে এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকার ব্যাপারে আশাবাদী হিরওয়ানি। বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে ভারত যেভাবে খেলছে তাতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা সিরিজ জিতে ফিরবেন বলেও আত্মবিশ্বাসী তিনি। ইংল্যান্ডে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে খেলানো হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকায় দলের কম্বিনেশন কী হওয়া উচিত তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। হিরওয়ানির কথায়, এই বিষয়টি নির্বাচক, হেড কোচ-সহ টিম ম্যানেজমেন্ট, অধিনায়কের উপরই ছেড়ে রাখা উচিত।

স্পিন বোলিং কোচের পক্ষে সওয়াল
ভারতীয় দলের পারফরম্যান্স উন্নত করতে স্পিন বোলিং কোচ নিয়োগের পক্ষেও সওয়াল করেছেন হিরওয়ানি। তিনি বলেন, এটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে আমি নিজে চাকরি চাইতে এই কথা বলছি। স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে হরভজন সিং, লক্ষ্মণ শিবরামকৃষ্ণন, বেঙ্কটপতি রাজু, সুনীল যোশী, মনিন্দর সিং, রমেশ পওয়ারদের মধ্যে কাউকে নিযুক্ত করলে তা দলের পক্ষেই ভালো। যেখানে একজন কিংবদন্তি ব্যাটার হেড কোচ হিসেবে থাকার পরও ব্যাটিং কোচ রয়েছেন, ফিল্ডিং কোচ, দুজন ম্যাসিওর, তিনজন থ্রোডাউন বিশেষজ্ঞ, দু-তিনজন ফিজিও রয়েছেন সেখানে একজন স্পিন বোলিং কোচ রাখলে ইতিবাচক ফল মিলবে।

সওয়ালের সপক্ষে যুক্তি
এনসিএ-তে ৬ বছর কোচিং করানোর অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ নরেন্দ্র হিরওয়ানি বলেন, একজন স্পিনারের পক্ষে বোলিং কোচ হিসেবে জোরে বোলারদের সব কিছু বোঝা যেমন সম্ভব হয় না, তেমনই উল্টোটা জোরে বোলারদের ক্ষেত্রেও। কোন বোলারের মনে কী চলছে, কী করলে ভালো হয় সেটা সেই বিভাগের একজন কোচই সবচেয়ে ভালো উপলব্ধি করে রণকৌশল ঠিক করে পরামর্শ দিতে পারেন। মাঠে নেমে সেই বোলাররা সেই পরিকল্পনা প্রয়োগ করতে পারেন। বিশেষ করে সাদা বলের ক্রিকেটে মার্জিন অব এরর খুব কম থাকে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ফলে স্পিন বোলিং কোচ রাখা হলে তা ভালোই হবে।

বিরাটকে সরিয়ে রোহিত
সাদা বলের ক্রিকেটে রোহিত শর্মা ও টেস্টে বিরাট কোহলিকে অধিনায়ক রাখার পদক্ষেপকে সঠিক বলেই মনে করছেন প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক হিরওয়ানি। তিনি বলেন, আলাদা ফরম্যাটে আলাদা অধিনায়ক রাখার ভাবনাটা খারাপ নয়। আগে একজনই নেতৃত্ব দিতেন, একজন কোচ থাকতেন। এখন বিভিন্ন বিভাগের আলাদা কোচ রয়েছেন। প্রতি ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ রাখার জন্যই এই পদক্ষেপ যাতে একজনের উপর বাড়তি চাপ বা লোড না পড়ে। টেস্ট অধিনায়ক পাঁচ দিনের জন্য নিজের ভাবনাচিন্তাকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পনা করতে পারবেন। ওয়ান ডে ও টি ২০-তে পরিকল্পনা তৈরি টেস্টের থেকে আলাদা। ফলে অধিনায়কদের কাঁধ থেকে লোড কমানোর বিষয়টি ভালোই। কেন বিরাটকে সরিয়ে রোহিতকে অধিনায়ক করা হয়েছে, তা নিয়ে আমি কিছু বলার জায়গায় নেই। তবে বিরাট কোহলি অনেকদিন ধরে অধিনায়কত্ব করছেন। ফলে তাঁকে টেস্টের অধিনায়ক রেখে রোহিতকে ক্যাপ্টেন করার সিদ্ধান্ত আমার মতে সঠিকই।

স্পিনারদের পরামর্শ
ভারতীয় দলের স্পিনাররা অনেকেই ফোন করে নরেন্দ্র হিরওয়ানির পরামর্শ নিয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে হিরওয়ানি বলেন, সব স্পিনাররাই টপ ক্লাস। বহুভাবে পরীক্ষিত ও সফল। আমার কাছে কেউ কিছু জানতে চাইলে সেটা মাইক্রো কোচিং বলা যেতে পারে। বেশিরভাগটাই মানসিক জোর দেওয়া। ফোন যেমন আপগ্রেড করতে হয় মাঝেমধ্যে, স্পিনারদের ক্ষেত্রেও বিষয়টা তেমনই। এখন সকলের ভিডিও দেখে স্টাডি করে প্রতিপক্ষ রণকৌশল সাজায়। ফলে কী ধরনের পরিবর্তন আনলে ভালো, কোন ধরনের বোলিং কার্যকরী হতে পারে সে সবই কেউ জানতে চাইলে বলে থাকি। হিরওয়ানি নিজে এখন কোচিংকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। স্বপ্ন দেখেছেন তাঁর শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে কেউ সেবা করবেন জাতীয় দলকে।

বিশ্বরেকর্ড নিয়ে
১৯৮৮ সালের মাদ্রাজ টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১৮.৩ ওভারে ৩টি মেডেন, ৬১ রানে ৮ উইকেট এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫.২ ওভারে তিনটি মেডেন ৭৫ রানে ৮ উইকেট। ১৩৬ রানে ১৬ উইকেটে টেস্টে সেরা বোলিং ফিগারের তালিকায় তৃতীয় স্থানে হিরওয়ানির কীর্তি। অভিষেক টেস্টে কারও এতো উইকেট পাওয়ার নজির নেই। সেই বিশ্বরেকর্ডের প্রসঙ্গ উঠতেই হিরওয়ানি বললেন, বিশ্বরেকর্ডের কথা ভুলেই গিয়েছি। এখন যা করছি তা নিয়েই ভাবি। আজাজ প্যাটেলের প্রশংসা করে হিরওয়ানি বলেন, আমি চাই আমার বিশ্বরেকর্ডটি কেউ ভাঙুন। রেকর্ড গড়া হয় ভাঙার জন্যই। সেটা হলে তা ক্রিকেটের এগিয়ে চলার পক্ষেই ইতিবাচক। নিজের কেরিয়ারে কার উইকেট পেয়ে সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি পেয়েছেন সেই প্রশ্নের উত্তরে হিরওয়ানির জবাব, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব উইকেটেরই গুরুত্ব রয়েছে, সব উইকেটই মনে গেঁথে রয়েছে। তবে তখন কিং ছিলেন রিচার্ডস। তাঁকে বেশ কয়েকবার আউট করাটা সবচেয়ে তৃপ্তির। আরও কিছু উইকেট পেয়েছি সেগুলি আমার ভাগ্য, সেই দিনগুলিতে সেটাই হওয়ার ছিল।

বাংলার আবেগ অতুলনীয়
কালনায় বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগের উদ্যোগে আয়োজিত এমএলএ কাপ ফাইনালের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান উপলক্ষে ঝটিকা সফরে বাংলায় এসেছিলেন হিরওয়ানি। অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়াম কানায় কানায় ভর্তি ছিল। ফুটবল নিয়ে এই আবেগ দেখে নিজেই অবাক হয়ে যান হিরওয়ানি। কলকাতা ফেরার পথে পূর্ব সাতগেছিয়া সংহতি আয়োজিত সংহতি ট্রফি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ট্রফি উন্মোচনেও হাজির ছিলেন। সেখানে খুদে ফুটবলারদের তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, কোচকে গুরুর আসনে রেখে কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে। কলকাতায় শেষ টেস্ট খেলেছেন হিরওয়ানি। ইস্টবেঙ্গল ও বাংলার হয়েও খেলেছেন। অনেক বছর বাদে শহরে এসে হিরওয়ানি বলেন, কলকাতা সব ক্রিকেটারের কাছেই পছন্দ। বাংলার মানুষের আবেগ অতুলনীয়। এখানে যে ভালোবাসা পাই, তা অন্য জায়গার তুলনায় অনেক বেশি।