অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতের নায়ক রাজ বাওয়া কে, কোথা থেকে তাঁর উথ্থান, কে-ই বা আদর্শ, জেনে নিন বিস্তারিত
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতের নায়ক রাজ বাওয়া কে, কোথা থেকে তাঁর উথ্থান, কে-ই বা আদর্শ, জেনে নিন বিস্তারিত
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলকে পঞ্চম বার চ্যাম্পিয়ন করার নেপথ্যে অন্যতম নায়ক রাজ অঙ্গদ বাওয়া। বল হাতে ফাইনালে পাঁচ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও দলের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন। তিনি ছাড়া এই ম্যাচে সেরা অন্য কাউকে নির্বাচন করা যেত না এবং সেটা হয়েনি।
দেশের প্রতিটি ক্রিকেট প্রেমী আজ তাঁর নামের সঙ্গে পরিচিত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ফাইনালে তাঁর অবদব্য পারফরম্যান্সের প্রশংসা শোনা যাচ্ছে প্রাক্তন ক্রিকেটারদের মুখেও। কিন্তু জানলে অবাক হবেন এই ছেলেটাই দশ বছর বয়স পর্যন্ত ক্রিকেটের প্রতি আকৃষ্ট ছিল না। বরং অনেক বেশি পছন্দ করত ভাংড়ার তালে পা মেলাতে। স্কুলেও মেধাবি ছাত্র হিসেবেও সুনাম রয়েছে তাঁর। ক্রিকেটের প্রতি রাজের আকর্ষণের নেপথ্যে একটি ছোট ঘটনা রয়েছে।
এক দিন ধর্মশালায় ম্যাচ দেখাতে ছেলে রাজকে নিযে যান চণ্ডিগড়রের ক্রিকেট কোচ সুখবিন্দর সিং বাওয়া। ওই ম্যাচের পরই রাজের মধ্যে একটু একটু পরিবর্তন দেখা যায়। এই পরিবর্তন বাবার নজর এডায়নি। ক্রিকেটের দিকে আকৃষ্ট হতে শুরু রেন রাজ এবং তার প্রভাব এখন গোটা বিশ্ববাসীর জানা। অপর সঙ্গী রবি কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধে অ্যান্টিগুয়ার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন রাজ। রাজের পাঁচ উইকেটের পাশাপাশি বাংলার রবি কুমার পেয়েছেন চারটি উইকেট।
5️⃣ wicket haul for Raj Bawa in #U19CWC final. 🔥
— Lucknow Super Giants (@LucknowIPL) February 5, 2022
The #BoysInBlue need 1️⃣9️⃣0️⃣ to win their 5th Under 19 title. Let's goooo! 💪
📸: @BCCI#TeamIndia #U19WorldCup pic.twitter.com/gIL5PUk5XR
চণ্ডিগড়ে নিজের বাড়ি থেকে পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজের বাবা সুখবিন্দর বলেছেন, "ওর যখন ১১ বা ১২ বছর বয়স তখন খেলা (ক্রিকেট) শুরু করে। তার আগে ক্রিকেটের প্রতি ও আকৃষ্ট ছিল না। টেলিভিশনে পঞ্জাবি গান শুনতে এবং সেই গানের তালে পা মেলাতেই বেশি পছন্দ করত ও। ধর্মশালায় আমার সঙ্গে গিয়েছিল ও এবং সেখানে একাধিক হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ দেখেছিল (আমার সঙ্গে বসে)। এর পর থেকে আমার সঙ্গে টিম মিটিং-এও থাকত এবং সেখান থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ওর আগ্রহ বেড়ে ওঠে। এর পর থেকে সিরিয়াস ভাবে ক্রিকেট খেলা শুরু করে ও।"
শনিবারের ফাইনালে ইংল্যান্ডের তরুণ দলকে একাই নাড়িয়ে দিয়েছে রাজ। গর্বিত বাবা টিভির পর্দায় ছেলের সেই সাফল্যের সাক্ষী থাকছিলেন। ফাইনালে যে পাঁচ উইকেট রাজ পেয়েছেন সেটা শুধু তাঁর একার নয়, এটা একই রকম ভাবে সুখবিন্দরেরও। যিনি তাঁর ছেলের মধ্যে দিয়ে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করছেন।
ক্রীড়া ক্ষেত্রে দেশের মুখ উজ্জ্বল করার ঐতিহ্য বংশ পরম্পরায় রয়েছে বাওয়া বংশে। রাজের ঠাকুরদা তারলোচন সিং বাওয়া ছিলেন বলবীর সিং সিনিয়র, লেসলি ক্লডিয়াস, কেশব দত্তের মতো কিংবদন্তিদের সতীর্থ। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন ভারতের অলিম্পিকে পদক জয়ী হকি দলের সদ্য ছিলেন তারলোচন। সেই সময়ে জন্মাননি সুখবিন্দরও।
12 Aug 1948: Trilochan Singh Bawa was part of the Indian hockey squad that won (4-0 vs Great Britain) the Gold medal at the London Olympics.
— Mohandas Menon (@mohanstatsman) February 5, 2022
5 Feb 2022: Grandson Raj Bawa is now part of the Indian winning squad (in the final vs England) the ICC #U19CWC2022 title in Antigua.
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাজের আদর্শ যুবরাজ সিং। ভারতেক হয়ে টি-২০ বিশ্বকাপ এবং পঞ্চাশ ওভার ক্রিকেটের বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম সদস্য যুবিকে একটা সময়ে অনুশীলন করাতেন রাজের বাবা সুখবিন্দর। বালক বয়সে রাজ দেখেছেন তাঁর বাবাকে যুবরাজাকে অনুশীলন করাতে দেখেছে রাজ। তখন থেকে তাঁর আদর্শ হয়ে উঠেছিলেন ২০১১ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের নায়ক। যুবরাজকে আদর্শ মানার বিষয়ে জানাতে গিয়ে একবার রাজ বলেছিলেন, "আমার বাবা যুবরাজ সিংকে প্রশিক্ষণ দিত। আমি যখন ছোট ছিলাম ওনাকে অনুশীলন করতে দেখতাম। ব্যাটিং করার সময়ে যুবরাজ সিং-কে অনুকরণ করার চেষ্টা করি। ওঁর একাধিক ব্যাটিং ভিডিও দেখেছি আমি। উনি আমার রোল মডেল।"
ডান হাতি রাজ কখনও মেনে নিতে পারেনি তাঁর আইডল বাম হাতি আর তিনি ডান হাতে ব্যাট করবেন। তাই ছোট বয়সে নিজের আদর্শের মধ্যে দিয়ে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজ বাম হাতে ব্যাটিং করা শুরু করেন। ডান হাতে বোলিং বা থ্রো করা রাজের প্রসঙ্গে সুখবিন্দর বলেন, "রাজ যখন ছোট ছিল ও যুবরাজের খেলা দেখত। অ্যাকাডেমিতে নেট প্র্যাকটিসের জন্য আসত ও এবং প্রথম হিরোই সেই তরুণদের হৃদয়ে স্থায়ী ভাবে জায়গা করে নিয়েছে। রাজ যখন ব্যাট ধরত তখন বাম হাতে ব্যাটিং করত কিন্তু বাকি সব কিছুই ডান হাতে করত ও। আমি ওকে শুধরে দিতে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আমি যখন ফিরে আসতাম তখন দেখতাম ও আমার বাম হাতে ব্যাট ধরেছে। তার পর আমি আর কিছু বলিনি। যেমনটা ওর পছন্দ তেমনটাই হতে দেওয়া হোক।"
সুখবিন্দর জানিয়েছে, তিনি কখনও-ই চান না তাঁর ছেলে এমন একজন ক্রিকেটার হন যিনি মূলত বোলার কিন্তু ব্যাটিংটাও করতে পারেন। যুবরাজের মতো ব্যাটসম্যান এবং কপিল দেবের মোত বোলার হিসেবে নিজেদের ছেলেকে দেখতে চান তিনি। তাঁর কথায়, "একজন পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার হিসেবে আমি ওকে দেখতে চাই। এর ফলে ওকে ব্যাটিংটাও ভাল করতে হবে।"