IPL 2021: মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ঈশান কিষাণের পছন্দ বাঙালি খাবার, কী কী জানেন?
আইপিএলের পর টি ২০ বিশ্বকাপে ভারতের ড্রেসিংরুমে থাকবেন ঈশান কিষাণ। এই দিনটা হয়তো সম্ভবই হত না যদি না বাঙালি কোচ উত্তম মজুমদারের পরামর্শে ঈশান বিহার থেকে ঝাড়খণ্ডে না যেতেন। ঝাড়খণ্ডে ঈশান কিষাণ আরও সমৃদ্ধ হন মহেন্দ্র সিং ধোনিকে অধিনায়ক এবং মেন্টরের ভূমিকায় পেয়ে। সেই ধোনিও থাকবেন এবার টি ২০ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের মেন্টর হিসেবে। এটাই সবচেয়ে তৃপ্তি দিচ্ছে ঈশানের বাঙালি কোচকে। ওয়ানইন্ডিয়া বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে উঠে এল অনেক জানা-অজানা কথা।
দ্রাবিড়ের পরামর্শে সমৃদ্ধ
২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ভারতের অধিনায়ক ছিলেন ঈশান কিষাণ। সেবার ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে রানার-আপ হয় ভারত। এই দলে কোচ হিসেবে কোচ হিসেবে রাহুল দ্রাবিড়কে পেয়েছিলেন যেটা তাঁর কেরিয়ারকে এক অন্য দিশা দেখায়। ভারতের কিংবদন্তি এই ক্রিকেটারের পরামর্শে ব্যাটিং আরও উন্নত করায় মনোযোগী হন ঈশান।
ঈশানের বাঙালি কোচ
অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলে দেশে ফিরে এসে গুজরাট লায়ন্সের হয়ে আইপিএল খেলতে নামার আগে দিন দশেক তিনি অনুশীলন করেছিলেন কোচ উত্তম মজুমদারের হাত থেকে। আসানসোলে জন্ম উত্তমের। কলকাতায় ক্লাব ক্রিকেটে খেলেছেন। পরে বিহারের হয়েও খেলেন। পাটনায় উত্তমের কাছে কোচিং নিতেন ঈশানের দাদা রাজ। বছর পাঁচেকের ঈশান যখন বাবা ও দাদার সঙ্গে উত্তমের কাছে প্রশিক্ষণের জন্য এসেছিলেন জহুরির চোখ ঈশানের মতো রত্নকে চিনতে ভুল করেনি। তিনি কয়েকটা নকিং দেখেই বলেছিলেন এই ছেলে ইন্ডিয়া খেলবে।
কিষাণকে নিয়ে ধোনি
উত্তম মজুমদার বলছিলেন, ২০১৮ সালে রঞ্জিতে দিল্লির বিরুদ্ধে ঈশান ২৭৪ রান করেছিলেন, রেকর্ড সংখ্যক ১৪টি ছক্কা হাঁকিয়ে। সেই ইনিংস দেখে মহেন্দ্র সিং ধোনি বলেছিলেন, ঈশান যদি দুই বছরের মধ্যে জাতীয় দলে জায়গা করতে না পারেন তাহলে তাঁর প্রতিভার প্রতি সুবিচার হবে না। করোনা পরিস্থিতিতে ২০২০ সালে বিশেষ ক্রিকেট হয়নি। কিন্তু আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সর্বাধিক রান ছিল ঈশানের দখলে।
মিলেছে মাহির কথা
ধোনির কথা মিলিয়ে এ বছর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি ২০ অভিষেক হয়। ৩২ বলে ৫৬ রানের ইনিংস খেলে ঈশান ম্যাচের সেরাও হন। এই পুরস্কারটি তিনি উৎসর্গ করেছিলেন উত্তমের পিতাকে। উত্তমের পিতা ফুটবলার ছিলেন। ক্যান্সারে প্রয়াত হওয়ায় ঈশানের এই ইনিংস তাঁর দেখে যাওয়া সম্ভব না হলেও তিনি ঈশানকে বলেছিলেন, ২০২১ সালটা ঈশানের ভালো যাবে। টেম্পারামেন্টে আরও উন্নতি ঘটাতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই কোচের পিতাকে কার্যত মেন্টর হিসেবে পেয়ে তাঁর প্রয়াণের খবরে কিষাণ এতটাই বিচলিত ছিলেন যে আন্তর্জাতিক অভিষেকের ইনিংস ও ম্যাচের সেরার পুরস্কারটি তাঁকেই উৎসর্গ করেন।
খোলা মনে খেলা
গুজরাট লায়ন্সে আইপিএল অভিষেক। ২০১৮ সাল থেকে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে। ২০১৮ সালে ১৪টি এবং ২০১৯ সালে ৭টি ম্যাচ খেলেন। তবে সেরা মরশুম গিয়েছে ২০২০-র আইপিএল। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলের হয়ে সর্বাধিক ৫১৬ রান করেন, ৫৭.৩৩ গড়ে। এরপরই জাতীয় দলে অভিষেক। টি ২০ আন্তর্জাতিক অভিষেকে জোফ্রা আর্চারকে প্রথম বলেই চার মেরেছিলেন। রাহুল দ্রাবিড়ের প্রশিক্ষণাধীন ভারতীয় দলের হয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে একদিনের আন্তর্জাতিকে অভিষেকে ৩৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণই শুধু করেননি, এখানেও ধনঞ্জয় ডি সিলভার প্রথম বলে ছক্কা ও তার পরের বলেই চার মেরেছিলেন। প্রথম বলে বড় শট নেওয়ার প্রবণতা নিয়ে উত্তম বললেন, ঈশানকে আমার বলাই আছে যদি মনে করো প্রথম বলেও বাউন্ডারি মারা যায় দ্বিধা করবে না। নেমেই ডিফেন্স করতে হবে এমন কোথাও ধরাবাধা নিয়ম নেই।
বিশ্বকাপের আগে পরামর্শ
টি ২০ বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পাওয়ার পর ঈশানকে উত্তম শুধু বলেছেন রিল্যাক্স থাকবে, চাপ অনুভব করবে না। উত্তমের কথায়, ঈশান এখন যে জায়গায় নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন সেখানে টেকনিক্যালি খুব বেশি পরামর্শ দেওয়ার দরকার নেই। শুধু চাপমুক্ত থাকলেই তিনি স্বাভাবিক খেলা খেললেই যথেষ্ট। ফিল্ডার হিসেবে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে তিনি যেমন ভালো খেলেন, তাতে ভারতীয় দলেও ঋষভ পন্থের সঙ্গেই প্রথম একাদশে ঈশানকে রাখলে ভারতের শক্তি অন্যরকম জায়গায় পৌঁছে যাবে বলে নিশ্চিত উত্তম।
পছন্দ বাঙালি খাবার
ঈশান এখন ডায়েট চার্ট মেনে চলেন। নিজেকে ফিট রাখতে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও ভারতীয় দলে কড়া অনুশাসনের মধ্যে রেখেই নিজেকে উন্নত করছেন ঈশান। তবে তিনি ভালোবাসেন বাঙালি খাবার। সেটা উত্তমেরই সৌজন্যে। উত্তমের বাড়িতে কাটানোর ফাঁকে ঈশান মাছও খেয়েছেন। তবে কাঁটা বাছতে পারেন না। ফিস কাবাব খান। এমনিতে সব রকম কাবাব ভালোবাসেন। এখন মিষ্টি না খেলেও বাংলার রসগোল্লা, মিষ্টি দই, সন্দেশ, রাবড়ি ভালোবাসেন। আগে দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্ক থেকে ঈশানের জন্য মিষ্টি নিয়ে আসতেন উত্তম। তবে তিনি বলেন, ক্রিকেটে মিষ্টির খুব ডিসঅ্যাডভান্টেজ রয়েছে। তাই উঠতি ক্রিকেটারদের মিষ্টি থেকে দূরে থাকারই পরামর্শ দিয়ে থাকি।