সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্বপ্নের 'ভিশন ২০২০'-র ফলই রঞ্জিতে বাংলার এই সাফল্য?
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্বপ্নের 'ভিশন ২০২০'-র ফলই রঞ্জিতে বাংলার এই সাফল্য?
শুরুটা হয়েছিল ২০১৫ সালে। ভারতীয় ক্রিকেটের চাণক্য জগমোহন ডালমিয়ার প্রয়াণের পর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন বেঙ্গল বা সিএবি-র দায়িত্ব হাতে পেয়েছিলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ইডেনের মন্থর পিচের খোলনলচে পাল্টে দেওয়াই ছিল নতুন সিএবি সভাপতির কাছে প্রথম চ্যালেঞ্জ। তিনি পেরেছিলেন। ক্রিকেটের নন্দন কাননের ২২ গজের হাল-হকিকত পুরোপুরি পাল্টে দিয়ে বিশ্বে তাক লাগিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তৈরি করে ফেলেছিলেন স্পোর্টিং ট্র্যাক। ২০১৬-র পুরুষ ও মহিলাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল হয়েছিল ওই পিচেই।
অন্যদিকে প্রায় তলানিতে গিয়ে পৌঁছনো বাংলা ক্রিকেটকে চাঙা করতেও বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হওয়া মহারাজ, ছয় বছর আগে 'ভিশন ২০২০' স্বপ্ন দেখে নতুন প্রকল্প চালু করেছিলেন। কাকতালিয় হলেও এটাই সত্যি, দীর্ঘ ১৩ বছর পর ২০২০-তেই রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে পৌঁছলো বাংলা। এই সাফল্যকে কি প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়কের দূরদৃষ্টি বলা যেতে পারে? অন্তত তেমনটাই মনে করছে বাংলার ক্রিকেট মহল।
শেষবার রঞ্জি
১৯৮৯-১৯৯০'র মরশুমে ঘরের মাঠ ইডেন গার্ডেন্সে দিল্লিকে হারিয়ে রঞ্জি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলা। ওই শেষ। তারপর থেকে কার্যত নিচের দিকেই নেমেছে বাংলা ক্রিকেটের গ্রাফ। ২০০৬-২০০৭ মরশুমে রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল খেলেছিল বাংলা। দলের অধিনায়ক ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
২০১৪-র সেই সময়
২০১৪ সালে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়শন অফ বেঙ্গল বা সিএবি-র যুগ্ম সচিবের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তখনই বাংলার ক্রিকেটের হাল ধরার সিদ্ধান্ত নেন মহারাজ। কিন্তু রাতারাতি তো আর বাংলাকে রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন করা সম্ভব নয়। তাই কিছুটা সময় অতিবাহিত করার সিদ্ধান্ত নেন সৌরভ। ছকে ফেলেন 'ভিশন ২০২০'।
ভিশন ২০২০
ভারতীয় ক্রিকেটের চাণক্য জহমোহন ডালমিয়া তখন সিএবি সভাপতি। তাঁর সঙ্গে দেখা করে নিজের পরিকল্পনার কথা জানান অ্যাসোসিয়শনের তৎকালীন যুগ্ম সচিব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ২০২০ সালকে লক্ষ্য বানিয়ে কীভাবে বাংলার প্রত্যন্ত প্রান্ত থেকে প্রতিভা তুলে এনে, তাঁদের দিয়েই দল তৈরি করা যায়, সেই পরিকল্পনার ব্লু-প্রিন্ট জগমোহন ডালমিয়াকে দিয়েছিলেন মহারাজ। সেই পরিকল্পনায় আস্থা রেখেছিলেন প্রাক্তন বিসিসিআই সভাপতি। প্রকল্প রূপায়নের জন্য সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কেই বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন সিএবি সভাপতি।
কী করেছিলেন মহারাজ
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিভা তুলে আনাই শুধু নয়, তাদের সঠিক পথে পরিচালনার জন্য একটি দল তৈরি করেছিলেন। তাতে রণদেব বোস, সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অরুণলালের মতো রাজ্য তথা দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটারদের রেখেছিলেন। এটুকুতেই সন্তুষ্ট না হয়ে বাংলার ব্যাটিং ও বোলিং পরমার্শদাতা হিসেবে যথাক্রমে লেজেন্ড ভিভিএস লক্ষ্মণ এবং শ্রীলঙ্কার ও পাকিস্তানের কিংবদন্তি মুথাইয়া মুরলীধরন ও ওয়াকার ইউনুসকে নিয়োগ করেছিলেন সৌরভ।
উঠে এলেন বেশ কিছু ক্রিকেটার
বলা যায়, 'ভিশন ২০২০'-র হাত ধরেই অভিমন্যু ইশ্বরণ, অভিষেক রমন, মুকেশ কুমার, আকাশ দ্বিপ, ঈশান পোড়েলের মতো ক্রিকেটারদের উত্থান ঘটে। আজ তারাই বাইশ গজ কাঁপাচ্ছেন। ভারতীয় এ দলের নিয়মিত সদস্য হয়ে গিয়েছেন ইশ্বরণ। ভারত এ-র হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন সুদীপও। ২০১৮-র অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ভারতের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছিলেন ঈশান। আজ তাঁরাই বাংলার অন্যতম সম্পদ। অন্যদিকে ২০১৯ সালে অনূর্ধ্ব ২৩ রঞ্জি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলা। দুই মরশুম আগে সিনিয়ারদের রঞ্জি ট্রফির সেমিফাইনালেও পৌঁছয় বাংলা ক্রিকেট দল।
কৃতিত্ব কি সৌরভের
তাই বাংলার এই সাফল্যের জন্য বর্তমান বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে কিন্তু কৃতিত্ব দেওয়া হলে কিন্তু ভুল হবে না। ঠিক যেভাবে ২০০০ সালে ম্যাচ ফিক্সিং-এ বিপর্যস্ত ভারতীয় ক্রিকেটকে টেনে তুলেছিলেন, লর্ডসের মাঠে জার্সি উড়িয়েছিলেন, যুবনীতি আমদানি করেও অভিজ্ঞ জভাগাল শ্রীনাথকে ফিরিয়ে ভারতীয় দলকে ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছিলেন কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাদেরই চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছিলেন, একই ভাবে বাংলার ক্রিকেটকেও কার্যত আইসিইউ থেকে তুলে আনার ক্ষেত্রে মহারাজ যে অদ্বিতীয়ম, তা মেনে নিচ্ছেন দেশের ক্রিকেট মহল।