আইপিএল নিলামে সর্বকালীন রেকর্ড, জীবন বদলানোর প্রতিক্রিয়া দামিদের গলায়
আইপিএল নিলামে সর্বকালীন রেকর্ড, জীবন বদলানোর প্রতিক্রিয়া দামিদের গলায়
আইপিএল নিলামে এবারই ঘটেছে অভিনব ঘটনা। একসঙ্গে এত বেশি ক্রিকেটার ১৪ কোটি বা তার বেশি দর পেয়েছেন তা আগে হয়নি। রেকর্ড গড়লেও এতো দর পাওয়া বিশ্বাসই হচ্ছে না দামি ক্রিকেটারদের।
নিলামে নয়া নজির
এই প্রথম আইপিএল নিলামে ১৪ কোটি বা তার বেশি টাকায় এতো বেশি ক্রিকেটারকে নিল বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি। ১৪ কোটি বা তার বেশি দর উঠেছে চারজনের। আইপিএল নিলামের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রেকর্ড দামে ক্রিস মরিসকে কিনেছে রাজস্থান রয়্যালস। তাঁর দর উঠল ১৬.২৫ কোটি টাকা। ১৫ কোটিতে কাইল জেমিসনকে নিয়েছে আরসিবি। আরসিবি ১৪.২৫ কোটি টাকায় গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকেও নিয়েছে। ঝাই রিচার্ডসনকে ১৪ কোটি টাকায় দলে নিয়েছে পঞ্জাব কিংস। এই নিরিখে এর আগে গত বছরের নিলামে প্যাট কামিন্সকে কেকেআর নিয়েছিল সাড়ে ১৫ কোটি টাকায়। ২০১৭ সালে রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টস সাড়ে ১৪ কোটিতে কিনেছিল বেন স্টোকসকে। তারও আগে ২০১৬ সালে যুবরাজ সিংয়ের দর উঠেছিল ১৬ কোটি টাকা, নিয়েছিল দিল্লি ডেয়ারডেভিলস।
নিলামে আট দলের সবচেয়ে দামি যাঁরা
চোখ রাখা যাক, এবারের আইপিএল নিলামে কোন দলের কোন ক্রিকেটার সবচেয়ে দামি সেই তালিকায়। আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার ক্রিস মরিসকে রাজস্থান রয়্যালস নিয়েছে ১৬.২৫ কোটি টাকায়। ১৫ কোটি টাকায় নেওয়া কাইল জেমিসন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার। পঞ্জাব কিংসের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার ঝাই রিচার্ডসন। নিলাম থেকে যাঁদের চেন্নাই সুপার কিংস নিয়েছে তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে দামি কৃষ্ণাপ্পা গৌতম, তাঁর দর উঠেছে ৯.২৫ কোটি টাকা। এই তালিকায় দিল্লি ক্যাপিটালসের টম কুরান (৫.২৫ কোটি টাকা) রয়েছেন। কেকেআর নিয়েছে শাকিব আল হাসানকে। নিলাম থেকে নেওয়া কেকেআরের ক্রিকেটারদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে দামি। এই তালিকায় রয়েছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কেদার যাদব, তাঁকে ২ কোটি টাকায় নিয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস।
ম্যাক্সওলের ম্যাক্সিমাম বৃদ্ধি
আইপিএলে পাঁচবার নিলামে উঠল গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের নাম। পাঁচটি নিলামে তিনি যে দর পেলেন তা যোগ করলে দাঁড়ায় ৪৫.৩ কোটি টাকা। প্রতিবারই বেড়ে চলেছে তাঁর দর। ২০১৩ সালে ৫.৩২ কোটি টাকার বিনিময়ে তাঁকে নিয়েছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। পরের বছর কিংস ইলেভেনে যান ৬ কোটিতে। ২০১৮ সালের নিলাম থেকে ম্যাক্সওয়েলকে নেয় দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। ২০২০ সালে তাঁকে দলে ফেরায় কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। সেবার তাঁর দর ওঠে ১০.৭৫ কোটি টাকা। গত আইপিএলে ম্যাক্সওয়েল তেমন জ্বলে উঠতে না পারলেও নিলামে এবারও তাঁর দর বাড়ার ধারা অব্যাহত রইল। পঞ্জাব কিংস থেকে তিনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে গেলেন ১৪.২৫ কোটি টাকায়।
চমক আনক্যাপডদের
জাতীয় দলের হয়ে না খেললেও যাঁরা চমকপ্রদ দাম পেলেন এবার তাঁদের মধ্যে প্রথমেই রয়েছেন কৃষ্ণাপ্পা গৌতম। ৯.২৫ কোটিতে তাঁকে নিয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস। দামি আনক্যাপডদের তালিকায় ২০১৮ সালে ৮.৮০ কোটিতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে যাওয়া ক্রুনাল পান্ডিয়ার রেকর্ড ভাঙলেন গৌতম। আবার বেস প্রাইস ও চূড়ান্ত দরের শতকরা নিরিখেও এবার মুরুগান অশ্বিনের রেকর্ড ভাঙলেন তিনি। ২০ লক্ষ বেস প্রাইস থেকে ৯ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা দর পেলেন তিনি, শতকরা বৃদ্ধির হার ৪৬.২৫ শতাংশ। দামি আনক্যাপডদের তালিকায় পবন নেগি ও বরুণ চক্রবর্তীর পর পাঁচে আছেন অস্ট্রেলিয়ার রাইলে মেয়ারডিথ, ৮ কোটিতে এবার তাঁকে নিয়েছে পঞ্জাব কিংস। বিদেশি আনক্যাপডের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার।
স্মরণীয় রাত জেমিসনের
ঘুম থেকে উঠে ক্রাইস্টচার্চে মাঝরাতে নিলামে চোখ রাখেন নিউজিল্যান্ডের ৬ ফুট ৮ ইঞ্চির পেসার কাইল জেমিসন। ১৫ কোটিতে তাঁর দর পৌঁছাবে, এটা যেন তাঁর কাছে অবাস্তব মনে হচ্ছিল। তিনিই এখন আইপিএলে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার। ভাঙলেন কেকেআরে খেলা ট্রেন্ট বোল্টের ৫ কোটির রেকর্ড। নিলামে এমন দর পেয়ে প্রথমে ফোন করে বান্ধবীকে জাগান। পরে বাবা-মাকেও। নিউজিল্যান্ডের ডলারে কত মূল্য হতে পারে তা ভাবতে ভাবতেই তাঁকে শুভেচ্ছা জানান শেন বন্ড। যিনি আবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলের সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে রয়েছেন। পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে থিতু হয়ে তারপর ঘুমোতে যান জেমিসন। নিজের খেলায় ফোকাস ঠিক রেখে সাফল্য পেতে চান। বিরাটদের তারকাখচিত ড্রেসিংরুম শেয়ার করে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করতে চান। ৬ রানের বিনিময়ে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি টি ২০ ম্যাচে ২০১৯ সালে। নিজের দরের প্রতি জেমিসন সুবিচার করবেন বলে নিশ্চিত নিউজিল্যান্ডের বোলিং কোচ শেন জুর্গেনসেন।
বিশ্বাসই হচ্ছে না পঞ্জাব পেসারদের
এতো দর পেয়েছেন বিশ্বাস হচ্ছে না ঝাই রিচার্ডসনের। তিনি জানিয়েছেন, প্রথমদিকে তাঁকে নিয়ে কেউ আগ্রহ না দেখানোয় হতাশ হয়েছিলেন। উৎকণ্ঠা বাড়ছিল। অনেকে মেসেজ করছিলেন। সমস্ত আবেগ, উত্তেজনা মিলেমিশে একাকার হয়েছিল। পরে তাঁর এতো দর ওঠা এখনও কার্যত বিশ্বাস হচ্ছে না। ম্যাক্সওয়েলের মতো তিনিও বলেছেন, এটা যেন জীবন বদলে দেওয়ার মতো ঘটনা। আইপিএল নিলাম দেখছিলাম, তবে কী হচ্ছিল কিছুই যেন বুঝতে পারছিলাম না। দল পাওয়ার পর নিজেকে মনসিকভাবে এতটাই ক্লান্ত লাগছিল যে মনে হচ্ছিল গতকালই ম্যাচ খেলেছি। ঝাইয়ের মতো মেয়ারডিথও রাতে বেশি ঘুমোতে পারেননি আইপিএল নিলাম দেখবেন বলে। মাঝেমধ্যে দুজনেই পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছিলেন, কথা হচ্ছিল বান্ধবীদের সঙ্গেও। মেয়ারডিথ বলেন, নিলামে ঝাইয়ের দর যেভাবে বাড়ছিল তা অবিশ্বাস্য ছিল। পরে একই অবস্থা আমারও হয়। এমন দর পাব আশা ছিল না। ভারতের মাটিতে ঝাই, মেয়ারডিথ দুজনেই নিজেদের সেরাটা দিয়ে পঞ্জাবকে সাফল্য এনে দিতে চান।
শাকিবকে কি পুরো আইপিএলে পাবে কেকেআর, জল্পনার মধ্যেই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ বোর্ডের