IPL 2022: উমরান মালিক ক্রিকেটকেই কেন আঁকড়ে ধরেন? মুগ্ধ গাভাসকর ধার বাড়াতে দিলেন বিরাট পরামর্শ
উমরান মালিক। চলতি আইপিএলে সবচেয়ে দ্রুতগতির বল করে চমকে দিয়েছেন। আইপিএলের ইতিহাসে কোনও ভারতীয় পেসার এত জোরে (ঘণ্টায় ১৫৩.৩ কিলোমিটার) বল করতে পারেননি। গতকাল শেষ ওভারটি করতে গিয়ে তিনটি উইকেট তুলে নেন, এটি হয় মেডেন ওভারও। চমকপ্রদ পারফরম্যান্সে টি ২০ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে ঢোকার দাবি জোরালো করেছেন জম্মুর এই স্পিডস্টার।
সব্জি বিক্রেতার পুত্রের লড়াই
জম্মুর গুজ্জরনগরের বাসিন্দা আবদুল রশিদ। তাঁর এক পুত্র উমরান, রয়েছে দুই কন্যাসন্তানও। পাঁচজনের সংসার চালাতে রোজ ভোর ৫টায় বেরিয়ে সব্জির দোকানে যান উমরানের বাবা। ফিরতে ফিরতে রাত ১২টা বেজে যেত। স্টার স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়ে উমরান বলেছিলেন, বেশিরভাগ দিনই বাবা বিশ্রাম নেওয়ারও অবকাশ পেতেন না। তখনই মনে মনে ঠিক করি, ক্রিকেট খেলতে হবে। বাড়ির কাছেই ছিল তাউই মাঠ। সেখানে বল করে অনেক সিনিয়রের নজরে পড়ি। আমাকে বিভিন্ন দলের বিরুদ্ধে ওই মাঠেই খেলতে ডাকা হতো, সেই দলের হয়ে ম্যাচ জেতাতাম। সেখান থেকেই বোলিং শুরু।
উমরানের উত্থান
উমরান আরও জানান, জেলাস্তরে না খেলায় রাজ্য দলের অনূর্ধ্ব ১৯ দলের ট্রায়ালে যেতে ভয় পেতাম। আমি প্রথমদিকে ট্রায়ালে যেতামও না। কিন্তু পরে মত বদলাই। জম্মু ও কাশ্মীরের ট্রায়ালে গিয়ে প্রথম যে বলটা করেছিলাম তাতেই নির্বাচকরা আমাকে নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে যান। তাঁরা জানতে চেয়েছিলেন কীভাবে এত জোরে বল করতে পারি? সেই থেকেই পেশাদার ক্রিকেটে যাত্রা শুরু। পরিবারের সকলে পাশে থেকেছেন। উল্লেখ্য, জম্মু ও কাশ্মীরের হয়ে খেলা ও মেন্টরের ভূমিকা পালনের সময় ইরফান পাঠানেরও নজরে পড়েন উমরান। ইরফান বলেছেন, উমরানের বোলিং দেখে আমার ওয়াকার ইউনিসের কথা মনে পড়েছিল।
নজর কেড়েছেন আবির্ভাবেই
২০১৮ সালে সানরাইজার্স দলের নেট বোলার নির্বাচিত হন। গত বছরের আইপিএলের দ্বিতীয়ার্ধে টি নটরাজন কোভিড আক্রান্ত হওয়ায় উমরান সানরাইজার্স হায়দরাবাদ দলে আসেন। কেকেআরের বিরুদ্ধে অভিষেকে ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে উইকেট না পেলেও ঘণ্টায় ১৫০ বা ১৫৩ কিলোমিটার বেগে বল করে নজর কাড়েন। পরের ম্যাচেই ঘণ্টায় ১৫৩ কিলোমিটার বেগে বল করেছেন। ঘণ্টায় দেড়শো কিলোমিটারের আশেপাশে বল করা কম কথা নয়! টি ২০ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে নেট বোলার হিসেবে ছিলেন। পরে ভারতীয় এ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা এ দলের বিরুদ্ধে খেলতে প্রোটিয়াদের দেশে গিয়েছিলেন। এবার তাঁর লক্ষ্য ভারতীয় দলে অভিষেক।
সানির পরামর্শ
সুনীল গাভাসকর বলেছেন, উমরান মালিক তাঁর গতি দিয়ে তো নজর কেড়েছেনই, আমি সবচেয়ে খুশি হয়েছি তাঁর অভ্রান্ত নিশানা দেখে। সঠিক জায়গায় ধারাবাহিকভাবে বল করতে পারেন। দ্রুতগতিতে বল করতে গিয়ে অনেকে ছন্দ ঠিক রাখতে পারেন না, কিন্তু উমরান খুব কমই ওয়াইড বল করেন। যদি লেগ সাইডে ওয়াইড করা বন্ধ করতে পারেন তাহলে উমরান আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবেন। কেন না, তখন আরও বেশি স্টাম্প লক্ষ্য করে তিনি বল করতে পারবেন। যা খেলা ব্য়াটারদের পক্ষে সহজ হবে না। যদি উইকেট-টু-উইকেট বল উমরান ধারাবাহিকভাবে করতে পারেন, তাহলে তাঁকে সামলানো ব্যাটারদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে যাবে। উমরান নিশ্চিতভাবেই ভারতের হয়ে খেলবেন বলেও জানিয়ে দেন সানি।
ইরফান-স্টেইনরা মুগ্ধ
ইরফান পাঠান উমরান প্রসঙ্গে বলেছেন, যখন কোনও বোলার অতিরিক্ত গতি দিয়ে বোলিং করেন তখন ব্যাটাররাও অস্বস্তি বোধ করেন। যত খেলবেন, তত উন্নতি করবেন উমরান। বোলিংয়ের সময় তাঁর সামনের পা সোজা থাকে, তাঁর ফলো থ্রুও খুব ভালো। রান-আপ অনবদ্য। এগুলিই তাঁকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ায় লাল বলে কীভাবে বোলিং করতে হয় সে বিষয়েও উমরানের অভিজ্ঞতা বাড়ছে। গতির সঙ্গে বল স্যুইংও করানোর চেষ্টা করেন উমরান। বল ছাড়ার সময় সিম পজিশনও খু ভালো থাকে, সবমিলিয়ে উমরান স্পেশ্যাল প্লেয়ার। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বোলিং কোচ ডেল স্টেইনের পরামর্শেও সমৃদ্ধ হচ্ছেন উমরান। তাঁর বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন স্টেইন। পরামর্শ দিয়েছেন, জোরে দৌড়ে এসে ব্যাটারদের বিভিন্নভাবে খেলতে বাধ্য করানোর জন্য। ব্যাটাররা কী রণকৌশল নিতে পারেন সে বিষয়ে যাতে আগাম ধারণা উমরানের থাকে সে বিষয়েও সচেতন করছেন।