IPL 2022: কার্তিক-ম্যাজিকে কেকেআরের বিরুদ্ধে রুদ্ধশ্বাস জয় আরসিবির, উজ্জ্বল বাংলার শাহবাজ ও আকাশ দীপ
শেষ ২ ওভারে দরকার ছিল ১৭। আন্দ্রে রাসেলের পুরো কোটা যে শেষ হবে না সেটা বোঝা গিয়েছিল ১৮তম ওভার টিম সাউদি করতে আসায়। এই ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে ম্যাচ জমান তিনি। ১৯তম ওভারে ভেঙ্কটেশ আইয়ার বল করতে আসেন। প্রথম বলে এক রান হয়, দ্বিতীয় বলে রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া করে কেকেআর। তৃতীয় বলে চার মারেন হর্ষল প্যাটেল। পরের দুটি বল মিস। শেষ বলে ফের চার। শেষ ওভারে আরসিবির দরকার ছিল ৭ রান। আন্দ্রে রাসেলের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান কার্তিক। দ্বিতীয় বলেই উইনিং শট আসে প্রাক্তন নাইট অধিনায়কের ব্যাট থেকে। কেকেআর পয়েন্ট তালিকার পাঁচে নেমে গেল, আরসিবি উঠে এসেছে ষষ্ঠ স্থানে।
শুরুতে চাপে আরসিবি
জয়ের জন্য ১২৯ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফেরেন অনুজ রাওয়াত। আরও একবার আইপিএলে প্রথম ওভার করতে গিয়েই আঘাত হানলেন উমেশ যাদব। তৃতীয় বলে দলের ১ রানের মাথায় শূন্য রানে কট বিহাইন্ড হন অনুজ। এর পরের দুটি বলেই দুরন্ত শটে জোড়া বাউন্ডারি মারেন বিরাট কোহলি। পরের ওভারে টিম সাউদির বলে বিরাট তিন রান নেন। এই ওভারের পঞ্চম বলে দারুণ বাউন্ডারি মারেন ফাফ দু প্লেসি। কিন্তু তার পরের বলেই রাহানের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট আরসিবি অধিনায়ক। তিনি ৪ বলে ৫ রান করেন। ২ ওভারে আরসিবির স্কোর দাঁড়ায় ১৭। ঠিক তার পরের বলেই বিরাট কোহলির উইকেটটি তুলে নেন উমেশ যাদব, তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে। অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দেন বিরাট। তিনি ৭ বলে ১২ রান করেন। পাওয়ারপ্লেতে ৬ ওভারের শেষে আরসিবির স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ৩৬।
লক্ষ্যের দিকে
সেখান থেকে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন ডেভিড উইলি ও শেরফান রাদারফোর্ড। ১১তম ওভারের শেষ বলে নারিনের বলে আউট হন উইলি, করেন ২৮ বলে ১৮। এরপর রাদারফোর্ডের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন বাংলার অলরাউন্ডার শাহবাজ আহমেদ। ১৩তম ওভারে শাহবাজ আন্দ্রে রাসেলের বলে দুটি ছক্কা-সহ ১৫ রান নিয়ে আরসিবিকে লড়াইয়ে রাখেন। শেষ ৫ ওভারে আরসিবির জেতার জন্য দরকার ছিল ৩৬ রান। ষোড়শ ওভারে বরুণ চক্রবর্তী প্রথম চার বলে ২ রান দেওয়ার পর স্ট্রাইক পেয়েই স্টেপ আউট করে ছক্কা হাঁকান শাহবাজ। পরের বলে তিনি স্টাম্প আউট হন। ২০ বলে ২৭ রান করেন শাহবাজ, তিনি আউট হওয়ায় আরসিবির স্কোর দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১০১ রান। বরুণ চক্রবর্তী চার ওভারে ৩৩ রান দিয়ে একটিই উইকেট পান। শেষ চার ওভারে জিততে দরকার ছিল ২৮। ১৭তম ওভারে নারিন মাত্র চার রান খরচ করেন। চার ওভারে ১২ রানের বিনিময়ে তাঁর ঝুলিতে ১টি উইকেট। উমেশ যাদব ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন।
|
রুদ্ধশ্বাস পরিসমাপ্তি
শেষ তিন ওভারে দরকার ছিল ২৪ রান। বাকি ছিল আন্দ্রে রাসেলের দুটি এবং টিম সাউদির এক ওভার। ১৮তম ওভারে টিম সাউদিকে বল দিলেন নাইট অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার। ফলে রাসেলের চার ওভারের কোটা সম্পূর্ণ করার অবকাশ ছিল না। দ্বিতীয় বলেই শেরফান রাদারফোর্ড (৪০ বলে ২৮)-এর ক্যাচ অনবদ্য দক্ষতায় তালুবন্দি করলেন উইকেটকিপার শেল্ডন জ্যাকসন। চতুর্থ বলে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বাউন্ডারি স্বস্তি আনে আরসিবি শিবিরে। পরের বলেই হাসারঙ্গার ক্যাচ ধরলেন রাসেল। ১৭.৫ ওভারে আরসিবির স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১১১ রান। কেকেআরের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে সাউদি ৪ ওভারে ১৬ রানের বিনিময়ে নিলেন ২ উইকেট। শেষ অবধি ৩ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় আরসিবি, ৪ বল বাকি থাকতেই।
লড়াইয়ে খুশি শ্রেয়স
এর আগে, টস জিতে কেকেআরকে ব্যাট করতে পাঠান আরসিবি অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসি। শুরু থেকেই ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ১৪.৩ ওভারে ১০১ রানে ৯ উইকেট হারিয়েছিল নাইটরা। উমেশ যাদব ও বরুণ চক্রবর্তী আইপিএলে দশম উইকেট জুটিতে চতুর্থ সর্বাধিক রান যোগ করায় ১৮.৫ ওভারে কেকেআর ১২৮ রানেই গুটিয়ে যায়। সর্বাধিক ২৫ রান করেন আন্দ্রে রাসেল। উমেশ করেন ১৮। ওয়ানিন্দু হাসারঙ্গা ৪টি, আকাশ দীপ ৩টি এবং হর্ষল প্যাটেল ২টি উইকেট দখল করেন। হেরে গেলেও দলের লড়াকু চরিত্রে খুশি শ্রেয়স আইয়ার। তিনি বলেন, কম রানের পুঁজি নিয়ে দলকে যে লড়াই করা, চরিত্র দেখানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন তাতে সাড়া দিয়েছেন সতীর্থরা। ১৮তম ওভারে সেরা বোলারকে বল দেওয়ায় কোনও ভুল করেননি বলেও দাবি শ্রেয়সের। তিনি জানান, ভেঙ্কটেশের উপরে ভরসা রেখে ঠিকই রেখেছেন। মাঝের ওভারগুলিতে রানের গতি ঠিক রেখে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে দিতে পেরে খুশি শাহবাজও।