IPL 2022: বিরাট কোহলি দুঃসময় নিয়ে কতটা উদ্বিগ্ন? আরসিবি তারকা জানালেন খেলা ছাড়ার সময়ও
বিরাট কোহলির ২০০৮ সালের পর চলতি আইপিএলই সবচেয়ে খারাপ গেল। যা পরিস্থিতি, তাতে আরসিবি যদি আজ জেতে এবং দিল্লি ক্যাপিটালস তাদের শেষ ম্যাচ না হারে, তবে আরও একবার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন চুরমার হবে। বিরাট কোহলি এবারের আইপিএলে ১৩ ম্যাচে ২৩৬ রান করেছেন। সর্বাধিক গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে ৫৩ বলে ৫৮, সেই ম্যাচে হেরে গিয়েছিল আরসিবি। গড় ১৯.৬৬, স্ট্রাইক রেট ১১৩.৪৬। তিনটি গোল্ডেন ডাক। হাফ সেঞ্চুরি একটি। লিগ পর্বের শেষ তথা চলতি আইপিএলে সম্ভাব্য শেষ ম্যাচ খেলতে নামার আগে বিরাটের দাবি, তাঁর কেরিয়ারে এটা নাকি সেরা সময়!

বিরাট দার্শনিক উপলব্ধি
স্টার স্পোর্টসের ইনসাইড আরসিবি শো-তে বিরাট কোহলি তাঁর দীর্ঘ ব্যাড প্যাচ প্রসঙ্গে বলেন, এই অভিজ্ঞতা আমার কাছে খুবই বিশুদ্ধ। এই সময়কালে বা তার আগেও আমি নিজেকে একজন ব্যক্তির চেয়ে বেশি কিছু ভেবে নিজের মূল্যায়ন করিনি। যেটা আরও বেশি করে উপলব্ধি করছি তা হলো, এমন এক পরিচিতি রয়েছে যেটা বিশ্বের মানুষ তৈরি করেছেন, যা বাস্তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির চেয়ে অনেক আলাদা। ফলে আমি এই অভিজ্ঞতা থেকে নিজের সম্পর্কে আরও বেশি মূল্যায়নে সচেষ্ট হতে পেরেছি, আগের চেয়ে নিজের ভালো থাকার বিষয়ে অনেক যত্নশীল হতেও পেরেছি। এক কথায় আমি জীবনের সবচেয়ে সুখের পর্যায়টি এখন অতিবাহিত করছি।

খেলা ছাড়ার সময়
বিরাট আরও বলেন, মাঠে আমি যা করছি তা থেকে নিজস্ব মূল্য নির্ধারণ করছি না। সেই পর্যায়টি কাটিয়ে এসেছি। এখন আমার কেরিয়ারের বিবর্তনের সময়। তবে এটাও নয় যে, আমার খেলার প্রতি কর্মশক্তি বা উদ্যম এতটুকু কমেছে, এটা কমার নয়। যখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলব, নিশ্চিতভাবেই তখন আর খেলব না। তেমন পরিস্থিতি এলে কখনোই কমবে না। এটাও মাথায় রাখতে হবে, অনেক বিষয়ের উপরই আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু যেগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো মাঠে কঠোর পরিশ্রম করা। জীবনেও এমন বিষয়গুলি রয়েছে। এই নিরিখে বলতে পারি, আমি খুব সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিস্থিতিতে রয়েছি। আমি নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট, যেভাবে জীবন অতিবাহিত করছি তা নিয়েও। মাঠে যা হচ্ছে তা থেকে যেমন উৎসাহের কিছু অনুভব করি না, তেমনই হতাশও হই না। তবে একটা বিষয়ে খারাপ লাগছে, দলের সাফল্যে প্রত্যাশিতভাবে অবদান রাখতে পারছি না। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে ভাবি না। কিন্তু দল খারাপ জায়গায় থাকবে, সেটা কখনোই মানতে পারি না।

নেতৃত্ব ছেড়ে উপভোগ
অধিনায়কত্ব ছেড়ে তিনি আবার আরসিবিতে সাধারণ ক্রিকেটার হিসেবে খেলছেন। এই বিষয়েও মুখ খুলেছেন আরসিবির মুখ বিরাট। তিনি বলেন, এই অভিজ্ঞতা নিশ্চিতভাবেই আলাদা। তবে কঠিন কিছু নয়। আমার সঙ্গে ফাফের সম্পর্ক খুব ভালো। আমাদের দলে লিডারশিপ গ্রুপ রয়েছে। সেখানে আমরা চিন্তা-ভাবনা, পরামর্শ আদান-প্রদান করি। ফাফ যখন ধরুন দূরে ফিল্ডিং করছে এবং আমি পিচের কাছাকাছি রয়েছি তখন ফিল্ডিং অ্যাঙ্গেল, কোথায় ফিল্ডার রাখা দরকার, এই বিষয়গুলি আমি দেখভাল করি। যেটা প্রয়োজন সেটা নিশ্চিত করার স্বাধীনতা ফাফ আমাকে দিয়েছেন। তবে একইসঙ্গে অধিনায়ক যে ফাফ, সেটা সম্পর্কে সব সময় সজাগ থেকেই সব কিছু করি। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে খেলার সময়েও এমনটা আগে করেছি, ফলে সেই ভূমিকা পালনে অসুবিধা হচ্ছে না। বিরাট আরও বলেন, অধিনায়ক হিসেবেও যেমন খেলা উপভোগ করতেন তেমনটা সাধারণ ক্রিকেটার হিসেবেও উপভোগ করছেন। দলকে নানাভাবে সহযোগিতা করাই তাঁর প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য থাকে। অধিনায়ককে প্রয়োজনীয় ইনপুটও দিয়ে থাকেন। মাঠে নামার উত্তেজনা সব সময়ই আগের মতোই অনুভব করেন।

ভক্তদের বার্তা
বিরাট কোহলির ফর্ম নিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁর ভক্তরা। ২০১৯ সালের পর থেকে কোহলির ব্যাটে শতরানও আসেনি। ভক্তদের প্রতি বিরাটের বার্তা, যে ভালোবাসা ও সমর্থন সকলে উজাড় করে দিয়েছেন, সেজন্য সকলকে ধন্যবাদ। লিগের আরও একটি ম্যাচ রয়েছে, সেদিকে সকলে তাকিয়ে রয়েছি। মাঠে এসে আপনারা সমর্থন করুন, আপনাদের এনার্জি, পজিটিভিটি আমাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে আরও সহায়ক হবে। যে ভালোবাসা, যত্ন, সহানুভূতি দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে পেয়েছেন তাতে সমর্থকদের প্রতি তিনি যে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন বলেও জানিয়েছেন। তাঁর ও ভক্তদের মধ্যে যে অকৃত্রিম বন্ধন রয়েছে সেটাই সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি দেয় বিরাটকে।