IPL 2022: অনুজ সমৃদ্ধ সচিন-বিরাটের পরামর্শে, কৃষক পরিবারের সন্তান কতটা পথ পেরিয়ে আরসিবি ওপেনার?
আইপিএল কেরিয়ারের প্রথম অর্ধশতরান করে দলকে জিতিয়ে ম্যাচের সেরা হয়েছেন আরসিবির ওপেনার অনুজ রাওয়াত। তিনি উইকেটকিপারও, কিন্তু দীনেশ কার্তিক থাকায় আরসিবিতে উইকেটের পিছনে দাঁড়াতে হচ্ছে না। আইপিএলে এটি তাঁর তৃতীয় মরশুম। ২০২০ সালে তাঁকে রাজস্থান রয়্যালস ৮০ লক্ষ টাকায় কিনেছিল। কিন্তু অনুজের অভিষেক হয় গত আইপিএলে। রাজস্থান রয়্যালসের শেষ ম্য়াচে কেকেআরের বিরুদ্ধে পাঁচে নেমে প্রথম বলেই শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। ৩.৪ কোটি টাকায় অনুজকে আরসিবি নিয়েছে।
মন জয় করেছেন অনুজ
দিল্লির এই ২২ বছরের উইকেটকিপার-ব্যাটার বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ওপেন করলেও রঞ্জিতে টিম কম্বিনেশনের জন্য মিডল অর্ডারে খেলেন। টপ বা মিডল অর্ডারে আগ্রাসী স্ট্রোকপ্লেয়ার না থাকাতেই অনুজকে মেগা নিলাম থেকে নিয়েছিল আরসিবি। আরসিবির হয়ে এখন ওপেনই করছেন। অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসি বলেন, আমি টুর্নামেন্টের আগেই অনুজের দক্ষতা সম্পর্কে বলেছিলাম। ম্যাচের নানা পরিস্থিতি অনুয়ায়ী কীভাবে খেলা হয় তা নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা হয়। ভবিষ্যতে আরও ভালো ক্রিকেটার হয়ে উঠবেন অনুজ। ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেয়ে অনুজ বলেছেন, দলের জয়ে ব্যাট হাতে অবদান রাখলে ভালোই লাগে। প্রসেস ঠিক রাখার উপর জোর দিয়েছি। আগের ম্যাচগুলিতে ভালো শুরুর পরও বড় রান পাচ্ছিলাম না। ফিনিশ করতে সমস্যা হচ্ছিল। আজ বড় শটও খেলতে পেরেছি। আশা করব এই ফর্ম ধরে রাখতে পারব। আমি ম্যাচ ফিনিশ না করতে পারলেও আরসিবিতে সকলে পাশে থেকেছেন। বিরাট ভাইয়া ও ফাফের সঙ্গে থাকতে পারা উপভোগ করছি।
|
সচিনের পরামর্শ
অনুজ পরে সতীর্থ মহম্মদ সিরাজের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ভালো শুরুর পরও ফিনিশ করতে পারছিলাম না। এই বিষয়টি মাথায় ছিল। এদিন সেটা করতে পেরে ভালো লেগেছে। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে পারলে আরও ভালো লাগতো। রান আউট হয়ে যাওয়ায় সেটা সম্ভব হয়নি। বিরাট কোহলির কাছে ব্য়াটিংয়ের খুঁটিনাটি পরামর্শ পাই। ম্যাচের শেষে কথা হয়েছে সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গেও। সচিন অনুজকে পরামর্শ দিয়েছেন, অনেকে অনেক পরামর্শ দেবেন তাঁদের ভাবনাচিন্তা অনুসারে। তবে কীভাবে আউট, বল ব্যাটে ঠিকঠাক লাগানো সম্ভব হচ্ছে কিনা, এই সব বিষয়ে নিজেরই নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে। তাহলেই সুফল মিলবে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালেও সচিনের পরামর্শ নিয়েছিলেন অনুজ। সেই ছবি রয়েছে তাঁর ইনস্টাগ্রামেও।
চলতি আইপিএলে
চলতি আইপিএলে পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে ২টি চার ও একটি ছয়ের সাহায্যে ২০ বলে ২১ রান করে রাহুল চাহারের বলে বোল্ড হন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে ২ বলে শূন্য রানে উমেশ যাদবের বলে কট বিহাইন্ড। রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে করেন ২৫ বলে ২৬, মেরেছিলেন চারটি চার, সেই ম্যানেও নভদীপ সাইনির বলে কট বিহাইন্ড। এরপর গতকাল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ৪৭ বলে ৬৬ রান করে ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হলেন। ১৫২ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে বিরাট কোহলির সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করলেন ৮০ রান। ২টি চার ও ছয়টি চারের সাহায্যে ৬৬ রান করার পর রান আউট হলেন। এই ইনিংস নিশ্চিতভাবেই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে অনুজের।
কৃষক পরিবারের সন্তান
অনুজের উত্থানের সঙ্গে ঋষভ পন্থ, ঈশান কিষাণদের মিল রয়েছে। জন্ম উত্তরাখণ্ডে হলেও ভবিষ্যতে উন্নতির বেশি সুযোগ থাকায় ১০ বছর বয়সে দিল্লিতে চলে এসেছিলেন নৈনিতালের রামনগরের অনুজ। তিনি উইকেটকিপার-ব্যাটার, প্রথম থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করতে ও ছক্কা মারতে ভালোবাসেন। অনুজের পিতা কৃষক, মা গৃহবধূ। রামনগরে জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক থাকলেও ক্রিকেটের পরিকাঠামো মোটেই ভালো নয়। তাই ছেলে ক্রিকেট নিয়ে এগোতে চায় জেনে প্রথমেই দিল্লি পাঠানোর বিষয়ে মনস্থির করে ফেলেন অনুজের পিতা। ২০১৬-১৭ মরশুমে দিল্লি অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সুযোগ। পরের মরশুমেই রঞ্জি অভিষেক। ২০১৭ সালে ১৮ বছর পূর্ণ করার আগেই। এরপর অনূর্ধ্ব ১৯ এশিয়া কাপের দলে জায়গা পান অনুজ।
রামনগর টু আইপিএল ভায়া দিল্লি
ঘরোয়া ক্রিকেটে সাদা বলের ক্রিকেটে দারুণ সফল অনুজ। এবারের সৈয়দ মুস্তাক আলি টি ২০-তে ৫ ম্যাচে ১৬৭ রান করেন যার মধ্যে রয়েছে ১৫টি চার ও ১০টি ছয়। এই রান করেন ৩৩.৪০ গড় ও ১২৮.৪৬ স্ট্রাইক রেট রেখে, একটি অর্ধশতরান-সহ। বিজয় হাজারে ট্রফিতে ৫ ম্যাচে ১৭৫ রান করেন, গড় ৫৮.৩৩, যা দিল্লি দলে সর্বাধিক। ২০১৮ সালে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে প্রথম রঞ্জি শতরান অনুজ করেছিলেন দল বেকায়দায় থাকা সত্ত্বেও। ৩৬ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল দিল্লি। এরপর ১৮৩ বলে ১৩৪ রানের ইনিংস খেলে দিল্লিকে বড় লিড নিতে সাহায্য করেন, দিল্লি সেই ম্যাচ জিতেছিল ৯ উইকেটে। নিজের প্রথম দুটি রঞ্জি ম্যাচেও অর্ধশতরান করেন অনুজ। আইপিএলে ভালো পারফর্ম করে অনুজের টার্গেট ভারতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়া।