গুজরাতের ঋদ্ধি-শামির কেকেআরকে সপাটে জবাব, একনজরে বাংলার ক্রিকেটারদের আইপিএল পারফরম্যান্স
আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্স বাংলার কোনও ক্রিকেটারকে দলে নেয়নি। অথচ প্লে অফে পৌঁছানো দুটি দলে ছিলেন বাংলার চার ক্রিকেটার। চ্যাম্পিয়ন গুজরাত টাইটান্সের প্রথম একাদশেও বাংলার দুই তারকার উজ্জ্বল উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। আইপিএলে নবাগত হার্দিকের টাইটান্সের হয়ে এবারের আইপিএলে যথেষ্ট সপ্রতিভ ছিলেন ঋদ্ধিমান সাহা ও মহম্মদ শামি। নাইট-ধারণায় ধাক্কা দিয়ে ফের প্রমাণ করা গিয়েছে, বাংলার ক্রিকেটাররাও জেতাতে পারেন। দলকে চ্যাম্পিয়নও করাতে পারেন।
গুজরাতে বাংলার প্রতিনিধি
ঋদ্ধিমান সাহার জন্য এবারের আইপিএলে একেবারেই আগ্রহ দেখায়নি কলকাতা নাইট রাইডার্স। ঋদ্ধি প্রথমে অবিক্রিত থাকলেও পরে তাঁকে নিতে ঝাঁপায় গুজরাত টাইটান্স ও চেন্নাই সুপার কিংস। শেষ অবধি ১.৯০ কোটি টাকায় ঋদ্ধিমানকে নেয় গুজরাত টাইটান্স। মেগা নিলামে মহম্মদ শামির জন্য শুরু থেকে আগ্রহ দেখাতে থাকে গুজরাত টাইটান্স ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। পরে যোগ দেয় লখনউ সুপার জায়ান্টস। লখনউ যখন ৪.২০ কোটি দর দিয়েছে তারপর শামির জন্য ঝাঁপায় কেকেআর। তবে ৫.২৫ কোটি শেষ দর দেওয়ার পর কেকেআর আর এগোয়নি। শেষ অবধি আরসিবিকে টেক্কা দিয়ে গুজরাত টাইটান্স ৬.২৫ কোটিতে নেয়। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, বাংলার ক্রিকেটারদের নিতে কেকেআরের অ্যালার্জি আছে। তাদের অকশন স্ট্র্যাটেজিও ক্রিকেটীয় যুক্তির ঊর্ধ্বে। স্বাভাবিকভাবেই ফের নাইটদের ব্যর্থতার পর চ্যাম্পিয়ন দলে শামি-ঋদ্ধির উপস্থিতি নাইটদের কাছে কাটা ঘায়ে নুনের ছিঁটের মতোই!
দুরন্ত ঋদ্ধিমান
এবারের আইপিএলে ফাইনাল-সহ ১১টি ম্যাচ খেলেছেন ঋদ্ধিমান সাহা। প্রথমদিকে ম্য়াথু ওয়েড দলে থাকায় তাঁকেই উইকেটকিপার হিসেবে খেলানো হচ্ছিল। এরপর ওপেনার হিসেবে ঋদ্ধিকে নামিয়েই বাজিমাত গুজরাতের। ঋদ্ধি ১১ ইনিংসে ১ বার অপরাজিত থেকে ৩১৭ রান করেছেন। সর্বাধিক স্কোর ৬৮। গড় ৩১.৭০, স্ট্রাইক রেট ১২২.৩৯ তিনটি অর্ধশতরান করেছেন। ১১টি স্টাম্প আউট করার পাশাপাশি ২টি ক্যাচ ধরেছেন। ডিআরএস নেওয়ার ক্ষেত্রেও ঋদ্ধির ইনপুট দারুণ সাহায্য করেছিল। ঋদ্ধি গতকালের ফাইনালের পর বলেন, এই নিয়ে পাঁচটি ফাইনাল খেললাম। চ্যাম্পিয়ন হলাম ২ বার। আইপিএল শুরুর আগে অনেকে বলেছিলেন, আমাদের দল ভালোভাবে তৈরি করা হয়নি। তাঁদের ভুল প্রমাণ করতে পেরেছি। ফলে জিতে ভালোই লাগছে। ঋদ্ধির ওপেনার হিসেবে সাফল্য প্রসঙ্গে শামি বলেন, আমরা ২০ বছর ধরে একসঙ্গে রয়েছি। শুধু সুযোগ পাওয়াটার অপেক্ষা করছিলাম। ঋদ্ধির কী দক্ষতা রয়েছে তা সকলের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
শামির দাপট
গুজরাত টাইটান্সের প্রথম ম্য়াচ ছিল লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে প্রথম ওভারের প্রথম বলেই লোকেশ রাহুলকে আউট করেছিলেন মহম্মদ শামি। ঋদ্ধির কথায়, ওটাই আমাদের আইপিএলে মোমেন্টাম তৈরি করে দেয়। উল্লেখ্য, পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে শামি দুরন্ত বোলিং করেছেন। ১৬ ম্যাচে তিনি ২০টি উইকেট নিয়েছেন। উইকেটপ্রাপ্তির নিরিখে ভারতীয় পেসারদের মধ্যে তিনি রয়েছেন উমরান মালিক (২২)-এর পরেই। শামি বলেন, আইপিএলের আগে আমরা হোম গ্রাউন্ডে ভালোভাবে অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছি। লক্ষ্য ছিল সঠিক লাইন, লেংথে বল করা, ভালো শুরু করা।
নজর কাড়লেন শাহবাজ
বাংলার অলরাউন্ডার শাহবাজ আহমেদ রয়্যাল চ্য়ালেঞ্জার্স অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসি থেকে বিরাট কোহলি-সহ অনেকেরই প্রশংসা আদায় করে নিয়েছেন। এবারের আইপিএলে তিনি ১৬টি ম্যাচেই খেলেছেন। ২১৯ রান করেছেন, সর্বাধিক স্কোর ৪৫। গড় ২৭.৩৮, স্ট্রাইক রেট ১২০.৯৯। আটটি ক্যাচ ধরেছেন, তার কয়েকটি অসামান্য দক্ষতায়। চারটি উইকেটও পেয়েছেন। সেরা বোলিং ২৬ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট।
আরসিবির আকাশ দীপ
আরসিবির প্রথম একাদশে প্রথম থেকে সুযোগ পাচ্ছিলেন আকাশ দীপ। তিনি এবারের আইপিএলে পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে অভিষেক ম্যাচ-সহ ৫টি ম্যাচ খেলেছেন। বাংলার এই পেসার বল করেছেন মোট ১৮.৫ ওভার, পাঁচটি উইকেট পেয়েছেন। সেরা বোলিং কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে ৪৫ রানে তিন উইকেট। পাঞ্জাব কিংস ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে একটি করে উইকেট নিয়েছেন। এবারের আইপিএলে শেষ ম্য়াচটি তিনি খেলেন চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে তিনি চার ওভারে ৫৮ রান দেন, কোনও উইকেট পাননি।