সঞ্জুর শতরান-সহ পাঞ্জাব কিংস-রাজস্থান রয়্যালস থ্রিলারে গড়ল যেসব নয়া নজির
আইপিএলে আরও একটি রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ। এবার মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। রাজস্থান রয়্যালস বনাম পাঞ্জাব কিংস ম্যাচের ফলাফল নির্ধারিত হলো শেষ বলে। অধিনায়কোচিত ঝোড়ো শতরান করে কার্যত অসাধ্য সাধন করে ফেলছিলেন সঞ্জু স্যামসন। শেষ বলে তিনি আউট হওয়ায় অবশ্য জয় থেকে চার রান দূরে থামতে হলো রাজস্থান রয়্যালসকে। ৬৩ বলে ১১৯ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা হয়েছেন সঞ্জু স্যামসনই।
ম্যাচের সেরা সঞ্জু
সঞ্জু স্যামসন নিজের ব্যাটিংয়ে খুশি হলেও দলকে জেতাতে না পারার আক্ষেপ রয়েছে। ২ বলে যখন ৫ রান দরকার তখন তাঁর রান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটার অবশ্য মনে করছেন, সঞ্জু সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন স্ট্রাইক নিজের কাছে রেখে। সঞ্জু এ প্রসঙ্গে বলেন, আমার ইনিংসের দ্বিতীয়ার্ধে আমি যেভাবে খেলেছি তা আমার বিচারে সেরা। প্রথম দিকে টাইমিংয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছিল। বোলারদের সমীহ করে সিঙ্গলস নিয়ে তাই ছন্দ পাওয়ার চেষ্টা করেছি। তারপর শট খেলতে শুরু করি। এমন ব্যাটিং উপভোগ করেছি, তবে বাস্তবের মাটিতে পা রেখেই। আমি এভাবেই খেলতে পছন্দ করি। জয়ের কাছাকাছি চলে এসেছিলাম। কিছু বলার নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে জিততে পারলাম না। তবে আমি মনে করি এর চেয়ে ভালো কিছু এদিন আর সম্ভব ছিল না। শেষ বলটায় ছক্কা মারার চেষ্টাই করেছিলাম। টাইমিংও হলো। কিন্তু ফিল্ডারের উপর দিয়ে পাঠাতে পারলাম না। এটা খেলার অঙ্গ। উইকেট যেভাবে ক্রমাগত ভালো আচরণ করছিল, তাতে জেতা সম্ভব ছিল। হয়নি। কিন্তু আমরা দল হিসেবে ভালোই খেলেছি।
সঞ্জুর নজির
আইপিএলে অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচেই সর্বাধিক রানের নজির গড়লেন সঞ্জু স্যামসন। এর আগে অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক ম্যাচে কেউ শতরান করেননি। ২০১৮ সালে দিল্লির অধিনায়ক হিসেবে শ্রেয়স আইয়ারের ৪০ বলে ৯৩ রানের ইনিংসই ছিল আইপিএলে অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক ম্যাচে কারও সর্বোচ্চ রান। এদিন সেই রেকর্ড টপকে গেলেন সঞ্জু। আর ১ রান করলেই তিনি রান তাড়া করতে নেমে আইপিএলে সর্বাধিক রানের রেকর্ডটিও স্পর্শ করতে পারতেন। চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে ৬৩ বলে ১২০ রান করা পল ভালতাতির এই রেকর্ড ভেঙে যেত শেষ বলে সঞ্জুর ক্যাচ ফিল্ডারের হাতে জমা না পড়লেই। রাজস্থান রয়্যালসের হয়েও ব্যক্তিগত সর্বাধিক রান করলেন সঞ্জু। তবে রান তাড়া করতে গিয়ে ২০১০ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ইউসুফ পাঠানের শতরানের মতো এদিন সঞ্জুর শতরানও দলকে জেতাতে পারল না। আইপিএলে এই নিয়ে তৃতীয় শতরান হলো সঞ্জু স্যামসনের। একমাত্র বিরাট কোহলিরই তাঁর চেয়ে বেশি পাঁচটি শতরান রয়েছে আইপিএলে।
হুডার মাইলস্টোন
জাতীয় দলের হয়ে না খেলা কোনও ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলে দ্বিতীয় দ্রুততম অর্ধশতরান পূর্ণ করলেন দীপক হুডা। পাঞ্জাব কিংসের এই ব্যাটসম্যান রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ২০ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন। ২০১৮ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে ঈষান কিষাণ ১৭ বলে অর্ধশতরান করেছিলেন। অল্পের জন্য সেই রেকর্ড ভাঙতে না পারলেও আরেকটি নজির গড়লেন হুডা। রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ১৯ বলে দ্রুততম অর্ধশতরানের রেকর্ডটি রয়েছে ডেভিড মিলারের। তাঁর পরেই রইলেন দীপক হুডা।
এলিট ক্লাবে রাহুল
রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ৯১ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেন লোকেশ রাহুল। এই ইনিংস খেলার ফাঁকেই আইপিএলে দুই হাজার রান পূর্ণ করে ফেলেন পাঞ্জাব কিংস অধিনায়ক। পাঞ্জাবের ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে ৪৩ ইনিংসে তাঁর রান ২০১৩। তাঁর আগে রয়েছেন শন মার্শ (২৪৭৭)। এদিন নতুন লুকের পাঞ্জাব কিংসের জার্সি দেখে অনেকেই মজা করে বলছেন, লাল আর সোনালি রঙা জার্সির সঙ্গে মিল রয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের। এক সময় আরসিবিতে থাকা অনেকেই এই দলেও রয়েছেন। তাই একে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স পাঞ্জাবও বলা যেতেই পারে!
রাহুলের তৃপ্তি
হৃদস্পন্দন বেড়েছিল শেষের দিকে। তবে জয় দিয়েই আইপিএল অভিযান শুরু করা তৃপ্তি দিচ্ছে লোকেশ রাহুলকে। পাঞ্জাব কিংসের অধিনায়ক বললেন, আমি এবং আমাদের কয়েকজন ক্যাচ ফেলাতেই ম্যাচ এই জায়গায় গিয়েছিল। তবে বিশ্বাস ছিল জিতবই। ১১-১২ ওভার অবধি আমরা ভালো বোলিং করেছি। ব্যাটিং ও বোলিং ভালোই হয়েছে। যেটুকু ত্রুটিবিচ্যুতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠব। লেংথে কিছু সমস্যা হয়েছে, যা থেকে তরুণরা শিক্ষা নেবেন। আমাদের দলে অনেক তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার রয়েছেন। দীপক হুডার ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করে রাহুল বলেন, এমন অসাধারণ, ভয়ডরহীন ক্রিকেটই আমরা আইপিএলে দেখতে চাই। দলের চাহিদা অনুযায়ীই ব্যাটিং করেছেন গেইল ও হুডা।
দুই বোলার নজরকাড়া
আইপিএল অভিষেক দারুণ হলো রাজস্থান রয়্যালসের পেসার চেতন সাকারিয়ার। চার ওভারে ৩১ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিলেন। ষষ্ঠ ভারতীয় বোলার হিসেবে আইপিএল অভিষেকেই তিনি তিন উইকেট নিলেন। পাঞ্জাব কিংসের হয়ে তিন উইকেট নিয়ে নজর কাড়লেন অর্শদীপ সিং। শেষ ওভারেও অনবদ্য বোলিং করলেন। অধিনায়ক রাহুল বললেন, চাপের মুখে বোলিং করতে ভালোবাসেন অর্শদীপ। সে কারণে তাঁকেই শেষ ওভারে বল দিই। যেভাবে বারবার অর্শদীপ নিজের দক্ষতার প্রতি সুবিচার করে আমাদের আস্থার মর্যাদা দিচ্ছেন তা ভেবে ভালো লাগছে।