আইপিএল খেতাব জিততে ভারসাম্য বাড়িয়েছে পাঞ্জাব কিংস, রণকৌশল আর ক্রীড়াসূচি জেনে নিন
আগে ছিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। সেই দলই এবার আইপিএলে নিলামের আগে নাম পাল্টে হয়েছে পাঞ্জাব কিংস। গত আইপিএলে ছয়ে শেষ করেছিল প্রীতি জিন্টার দল। এখনও অবধি একবারও আইপিএল জয়ের স্বাদ পায়নি পাঞ্জাবের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি। তবে নিলামের পর দলে যে ক্রিকেটাররা এসেছেন তাতে ভারসাম্য বা বৈচিত্র্য অনেকটাই বেড়েছে বলে মনে করেন হেড কোচ অনিল কুম্বলে। শুধু নাম বদলই নয়। বদলেছে হেলমেটের রংও। এবার পাঞ্জাব কিংসের ক্রিকেটাররা মাঠে নামবেন কেকেআর, আরসিবি-র মতো হলুদ-সোনালি রঙের হেলমেট পরে। অর্থাৎ খেতাব দখলের লক্ষ্যে ভাগ্য বদলের জন্য এবার অনেক কিছুই বদলেছে আইপিএলে পাঞ্জাবের এই দলটির।
ভারসাম্য আসায় শক্তিশালী
পাঞ্জাব কিংসকে এবারও নেতৃত্ব দেবেন লোকেশ রাহুল। তিনিই সামলাবেন উইকেটকিপারের দায়িত্বও। তাঁর দলে রয়েছেন ময়াঙ্ক আগরওয়াল, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন, অর্শদীপ সিং, মুরুগান অশ্বিন, ক্রিস গেইল, হরপ্রীত ব্রার, মোজেস অনরিক্স, দীপক হুডা, জলজ সাক্সেনা, ক্রিস জর্ডন, সরফরাজ খান, ডেভিড মালান, মনদীপ সিং, রিলে মেয়ারডিথ, মহম্মদ শামি, দর্শন নালকান্দে, নিকোলাস পুরাণ, ঈশান পোড়েল, প্রভসিমরন সিং, রবি বিষ্ণোই, ঝাই রিচার্ডসন, সৌরভ কুমার, শাহরুখ খান ও উৎকর্ষ সিং। ডিরেক্টর অব ক্রিকেট অপারেশনস পদে থাকা অনিল কুম্বলেই দলের প্রধান কোচ। সহকারী কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, ব্যাটিং কোচ ওয়াসিম জাফর, ফিল্ডিং কোচ জন্টি রোডস এবং বোলিং কোচ ড্যামিয়েন রাইট।
সম্ভাব্য প্রথম একাদশ
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, জিমি নিশামরা এবার আর পাঞ্জাব কিংসে নেই। স্বভাবতই বদল আসছে প্রথম একাদশে। ময়াঙ্ক আগরওয়ালকে নিয়েই শুরু করতে পারেন লোকেশ রাহুল। আগেরবারের মতো তিনেই আসবেন বিধ্বংসী ক্রিস গেইল। চারে নিকোলাস পুরাণ, পাঁচে মনদীপ সিং। পাওয়ারহিটার শাহরুখ খান আসতে পারেন ছয়ে। শাহরুখকে ইতিমধ্যেই কায়রন পোলার্ডের সঙ্গে তুলনা করেছেন কুম্বলে, তাঁর মারকুটে ব্যাটিং দেখে। সাত নম্বরে লড়াই ক্রিস জর্ডন ও ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের মধ্যে। ঝাই রিচার্ডসন, মুরুগান অশ্বিন ও মহম্মদ শামিও প্রথম একাদশে নিশ্চিত। এগারো নম্বরের মধ্যে আবার লড়াই রবি বিষ্ণোইয়ের সঙ্গে অর্শদীপ সিংয়ের।
সমীহ করার মতো ব্যাটিং
বদল এসেছে দলে, তবে খুব বেশি বদলাবে না পাঞ্জাবের ব্যাটিংয়ের চরিত্র। যদিও পাঞ্জাব কিংসের ব্যাটিং শক্তিকে কিন্তু সমীহ করতেই হবে বিপক্ষকে। বিশেষ করে যখন রয়েছেন ক্রিস গেইল। তাছাড়া লোকেশ রাহুলও ইংল্যান্ড সিরিজের শেষের দিকে ফর্মে ফিরেছেন। ক্যারিবিয়ান উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নিকোলাস পুরাণ সদ্য শ্রীলঙ্কা সিরিজে খুব সফল না হলেও মারকুটে ইনিংস খেলতে দক্ষ। গত বছরের আইপিএলেও পাওয়ারপ্লেতে বেশ ধারাবাহিক ছিল পাঞ্জাব কিংস। তবে প্রথম চারের ঠিক পরেই ম্যাক্সওয়েল বা নিশামের অভাব কতটা পূরণ করতে পারেন ক্রিকেটাররা গত বছরও প্রথম চারের পরের ব্যাটিং সমস্যা তাড়া করেছিল পাঞ্জাব কিংসকে। সেদিকে এবারও নজর থাকবে। ভালো বিকল্প হয়ে উঠতেই পারেন টি ২০-তে বিশ্বের এক নম্বর ডেভিড মালান বা অভিজ্ঞ মোজেস অনরিক্স। তাঁরা পরে আসবেন জেনে খোলা মনে খেলতে পারবেন রাহুল। আবার অ্যালেন ও শাহরুখ খানের উপরও ফিনিশিংয়ের জন্য ভরসা দেখাতে পারে পাঞ্জাব কিংস। টপ অর্ডার ভালো খেললে তুলনায় অনভিজ্ঞদের উপর আস্থা রাখা যেতেই পারে। ফলে খুব বেশি ঝুঁকি যে পাঞ্জাব নেবে না তা বলাই যায়।
বোলিং আগের চেয়ে শক্তিশালী
এবারের নিলামে ফাস্ট বোলার ঝাই রিচার্ডসন ও রিলে মেয়ারডিথের জন্য প্রচুর টাকা খরচ করেছে পাঞ্জাব কিংস। এতেই স্পষ্ট বোলিং বিভাগকে আগের চেয়েও শক্তিশালী করতে চেয়েছেন অনিল কুম্বলে। গত বছর ফাস্ট বোলারদের সামগ্রিক ইকনমি খুব ভুগিয়েছে রাহুলের দলকে। প্রথম দিকে ভালো করলেও ডেথ ওভারের বোলিংয়ে অনেক ম্যাচ হারতেও হয়েছে। যে দল গঠন হয়েছে তাতে বোঝাই যাচ্ছে পাঁচ বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়েই নামবে পাঞ্জাব কিংস। ভারতীয় ব্যাটসম্যান খেলালে বিদেশি বোলার খেলানোর রাস্তা খুলে যাবে। ঝাই রিচার্ডসন প্রথম একাদশে থাকছেনই। মহম্মদ শামিও অনেক দিন পর মাঠে ফিরছেন। মুরুগান অশ্বিন, আর্শদীপ সিং, রবি বিষ্ণোইদেরও উইকেটের চরিত্র অনুযায়ী ব্যবহার করা হবে। মোজেস অনরিক্সকে ষষ্ঠ বোলারের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যেতেই পারে। আবার স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে প্রথম একাদশে জায়গা পাওয়ার দৌড়ে অ্যালেন জর্ডনের চেয়ে এগিয়ে থাকছেন। আবার রিচার্ডসন ও মেয়ারডিথ দুজনেই দলে থাকলে সাত নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখা যেতেই পারে জলজ সাক্সেনা বা উৎকর্ষ সিংকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক উত্তরপ্রদেশের বাঁহাতি স্পিনার সৌরভ কুমারকেও কয়েকটি ম্যাচে প্রথম একাদশে দেখা যেতেই পারে। ফলে বোলিং অপশন বাড়িয়ে দলে এবার ভালোই ভারসাম্য এনেছে পাঞ্জাব কিংস।
পাঞ্জাব কিংসের প্রতিপক্ষ
১২ এপ্রিল- রাজস্থান রয়্যালস, ১৬ এপ্রিল- চেন্নাই সুপার কিংস, ১৮ এপ্রিল- দিল্লি ক্যাপিটালস, ২১ এপ্রিল- সানরাইজার্স হায়দরাবাদ (বিকেল সাড়ে ৩টে), ২৩ এপ্রিল- মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, ২৬ এপ্রিল- কলকাতা নাইট রাইডার্স, ৩০ এপ্রিল- রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর, ২ মে- দিল্লি ক্যাপিটালস, ৬ মে- রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর, ৯ মে- চেন্নাই সুপার কিংস (বিকেল সাড়ে ৩টে), ১৩ মে- মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (বিকেল সাড়ে ৩টে), ১৫ মে- কলকাতা নাইট রাইডার্স, ১৯ মে- সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, ২২ মে- রাজস্থান রয়্যালস