পোলার্ডের পাওয়ারহিটিংয়ে অবিশ্বাস্য জয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের, ক্যাচ মিসকে দুষলেন ধোনি
টার্গেট ২১৯। ১০ ওভারে রান ৩ উইকেটে ৮১। সেখান থেকে বিধ্বংসী ইনিংস খেলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে শেষ বলে চার উইকেটে ম্যাচ জেতালেন কায়রন পোলার্ড। আটটি ছয় ও চারটি চারের সাহায্যে ৩৪ বলে ৮৭ রানে অপরাজিত রইলেন। এবারের আইপিএলে এটিই পোলার্ডের প্রথম অর্ধশতরান। তার আগে ১২ রানে ২ উইকেট নিয়েছিলেন। অসাধ্যসাধন করে ম্যাচের সেরা পোলার্ডই। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি রান তুলেও চেন্নাই সুপার কিংস জিততে পারল না একাধিক ক্যাচ ফেলার খেসারৎ দিয়ে। সাত ম্যাচের শেষে ১০ পয়েন্টেই দাঁড়িয়ে রইল চেন্নাই সুপার কিংস। সমসংখ্যক ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের পয়েন্ট ৮, রোহিতরা রইলেন চারে।
আইপিএলে নজির
জয়ের জন্য দরকার ছিল ২১৯। এদিন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে চেন্নাই সুপার কিংস নিজেদের সর্বাধিক রান (২১৮) তুলেছিল। শেষ ১০ ওভারে দরকার ছিল ১৩৮ রান। পোলার্ডের পাওয়ারহিটিং, সেই সঙ্গে পাণ্ডিয়া ভাইদের যোগ্য সঙ্গতে শেষ বলে চার উইকেটে ম্যাচ জেতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। আইপিএলের ইতিহাসে রান তাড়া করে জয়ের নিরিখে রোহিতদের এই জয় রইল দ্বিতীয় স্থানে। শেষ ১০ ওভারে রান তাড়া করে জেতার নিরিখে টি ২০-তে এই জয় রইল তৃতীয় স্থানে। শেষ ১০ ওভারে ১৪৪ রান করে জিতেছিল ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্স। ১৩৯ রান তাড়া করে জিতেছিল জামাইকা তালাওয়াহস। তার পরেই রইল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
মুম্বইয়ের রান তাড়া
জয়ের জন্য ২১৯ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও কুইন্টন ডি কক। পাওয়ারপ্লে-তেও ধোনিদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন রোহিতরা। ৭.৪ ওভারে দলের ৭১ রানের মাথায় শার্দুল ঠাকুরের বলে আউট হন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স অধিনায়ক। চারটি চার ও একটি ছয়ের সাহায্যে ২৪ বলে ৩৫ রান করেন রোহিত। কোচ দীনেশ লাডের অপর ছাত্র শার্দুলের কাছেই হার মানলেন তিনি। এরপর ১০ রানের ব্যবধানে সূর্যকুমার যাদব ও কুইন্টন ডি ককের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ৩ বলে ৩ রান করে রবীন্দ্র জাদেজার বলে আউট হন সূর্য। দুরন্ত ক্যাচ ধরেন ধোনি। চারটি চার ও একটি ছয়ের সাহায্যে ২৮ বলে ৩৮ রান করে মঈন আলির বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হন কুইন্টন ডি কক। ১০ ওভারে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের স্কোর ছিল ১ উইকেটে ৮১।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
পোলার্ড ও পাণ্ডিয়া ব্রাদার্স
এরপরই ঝড় তোলেন কায়রন পোলার্ড। তাঁকে সঙ্গত দিতে থাকেন ক্রুণাল পাণ্ডিয়া। তাঁকে নিয়ে পোলার্ড যোগ করেন ৮৯ রান। ১৬.৩ ওভারে ১৭০ রানের মাথায় ক্রুণালকে ফেরান স্যাম কারান। ২৩ বলে ৩২ রান করেন তিনি। এরপর পোলার্ডের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলের রান দুশো পার করে দেন হার্দিক। ১৯তম ওভারে তাঁকে আউট করেন কারানই। ৭ বলে ১৬ রান করেন হার্দিক। দুই বল পরেই জিমি নিশামের উইকেট তুলে নিয়ে চেন্নাইয়ের জয়ের আশা জিইয়ে রেখেছিলেন স্যাম কারান।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
শেষ হাসি পোলার্ডের
শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৬ রান। নন স্ট্রাইকিং এন্ডে ধবল কুলকার্নির উপর আস্থা না রেখে ৬টি বলই খেলেন পোলার্ড। লুঙ্গি এনগিডির ভালো বলগুলিকেও অবলীলায় সীমানা পার করালেন। শেষ বলে দুই রান নিয়ে দলকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেন পোলার্ড। যে ইনিংস দেখে ইয়ান বিশপ টুইটে লিখেছেন, পোলার্ড কিংবদন্তি। নিজের খেলায় খুশি টিমম্যান পোলার্ড বললেন, টানা দুটি ম্যাচ জিতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারা আগামী ম্যাচগুলিতে কাজে লাগবে। অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, আমার জীবনের সেরা টি ২০ ম্যাচের সাক্ষী থাকলাম। পোলার্ডও তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস খেললেন। উল্লেখ্য, ১৭ বলে অর্ধশতরান পূর্ণ করে পোলার্ড এই ম্যাচে চলতি আইপিএলের দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরিও করলেন। তাঁর ইনিংসে ছিল ছটি চার ও আটটি ছয়। স্ট্রাইক রেট ২৫৫.৮৮!
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
ক্যাচ মিসকেই দুষলেন ধোনি
ম্যাচ হেরে মহেন্দ্র সিং ধোনি বলেন, ভালো উইকেট। ক্লোজ গেম হবে জানতাম। আমাদের বোলিংয়ের পরিকল্পনা ঠিকঠাকভাবে প্রয়োগ করা হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাচ ফেলাও সমস্যা তৈরি করল। তবে এ সব থেকেই শিক্ষা নিতে হবে। চাপের মুখে বোলারদের এই ম্যাচ থেকে নেওয়া শিক্ষা আগামী ম্যাচ, প্লে অফে কাজে লাগবে। আমরা প্লে অফ নিয়ে ভাবছি না। একটা ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চাই। এই হারের পরও আমরা পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষেই রইলাম। ক্লোজ গেম জিতব যেমন হারতেও হবে। ছোটো মাঠে এমন ভালো উইকেটে শট খেলা সহজ। আশা করি, বোলাররা এই ম্যাচের শিক্ষা নিয়ে সামনের ম্যাচগুলিতে প্রয়োগ করবে।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
চেন্নাইয়ের প্রাপ্তি অম্বাতি
এদিন, টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে চেন্নাই সুপার কিংস তুলেছিল চার উইকেটে ২১৮ রান। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ধোনিদের এটাই সর্বোচ্চ রান। আর তা সম্ভব হলো, অম্বাতি রায়ুডু ২০ বলে অর্ধশতরান পূর্ণ করায়। নিজের কুড়িতম আইপিএল অর্ধশতরান করে ২৭ বলে ৭২ রানে অম্বাতি অপরাজিত রইলেন। মেরেছেন চারটি চার ও সাতটি ছক্কা। জাদেজা অপরাজিত থাকেন ২২ বলে ২২ করে। শেষ ৮ ওভারে অম্বাতি-জাড্ডু তোলেন ১০২ রান।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
বল হাতেও পোলার্ড সফল
প্রথম ওভারে চার রানে ঋতুরাজ গায়কোয়াড় আউট হওয়ার পর অবশ্য দলের বড় রানের ভিত গড়েছিলেন ফাফ দু প্লেসি ও মঈন আলি। পাওয়ারপ্লে-তে ৬ ওভারে সিএসকে-র স্কোর ছিল ১ উইকেটে ৪৯। দু প্লেসি ও মঈন যোগ করেন ১০৮ রান। ১০.৫ ওভারে মঈন আলিকে আউট করেন জশপ্রীত বুমরাহ। পাঁচটি করে চার ও ছক্কা মেরে ৩৬ বলে ৫৮ রান করে কট বিহাইন্ড হন মঈন। এরপর দ্বাদশ ওভারে পরপর দুই বলে দু প্লেসি ও সুরেশ রায়নার উইকেট তুলে নেন কায়রন পোলার্ড। ২টি চার ও চারটি ছক্কার সাহায্যে ২৮ বলে ৫০ করে আউট হন দু প্লেসি। টানা তিন ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি এল সিএসকে-র প্রোটিয়া ওপেনারের ব্যাট থেকে। নিজের ২০০তম আইপিএল ম্যাচে রায়না করেন চার বলে ২। সেই চাপ কেটে ধোনিরা দুশো পেরোন অম্বাতি ও জাড্ডুর ব্যাটে ভর করে। এদিন বুমরাহ আইপিএলে নিজের সবচেয়ে খারাপ বোলিং করলেন। ৪ ওভারে দিলেন ৫৬। পেলেন একটি উইকেট। ২ ওভারে ১২ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন পোলার্ড।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)