প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে আপ্রাণ লড়াই নাইটদের, তবু জয়ের হ্যাটট্রিকে শীর্ষে চেন্নাই সুপার কিংস
আইপিএলের হাই স্কোরিং ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ১৮ রানে হারাল চেন্নাই সুপার কিংস। চার ম্যাচে ছয় পয়েন্ট নিয়ে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে চলে গেলেন ধোনিরা। প্রাথমিক বিপর্যয় সত্ত্বেও নাইটরা শেষ অবধি লড়াই চালাতে পারল আন্দ্রে রাসেল, দীনেশ কার্তিক ও প্যাট কামিন্সের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের সুবাদে। যদিও শেষরক্ষা হলো না। ১৯.১ ওভারে ২০২ রানে অল আউট হয়ে যায় কেকেআর। আটে নেমে ৩৪ বলে ৬৪ রান করে অপরাজিত থাকেন প্যাট কামিন্স। চারটি চার ও ছটি ছক্কা রয়েছে তাঁর ইনিংসে। শেষ ওভারে ২০ রান দরকার ছিল। প্রথম বলেই দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। এতে সিএসকে-র যেমন জয়ের হ্যাটট্রিক হলো তেমনই টানা তিনটি ম্যাচে হারল কেকেআর। কাটল না ওয়াংখেড়ের দুঃস্বপ্ন। দীপক চাহার চারটি ও লুঙ্গি এনগিডি ২৮ রানে তিন উইকেট নেন। কেকেআরের প্রাপ্তি বলতে রাসেল-কার্তিক-কামিন্সের বিস্ফোরক ব্যাটিং। পরাজয়ের জন্য পাওয়ারপ্লেতে খারাপ ব্যাটিংকেই দায়ী করেছেন নাইট অধিনায়ক।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
জয়ের জন্য ২২১ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ৫.২ ওভারে ৩১ রানের মধ্যেই পাঁচ উইকেট হারাল কলকাতা নাইট রাইডার্স। যার মধ্যে চার উইকেটই দীপক চাহারের। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে শূন্য রানে শুভমান গিল আউট হন। তৃতীয় ওভারে পঞ্চম বলে নীতীশ রানা চাহারের বলেই কট বিহাইন্ড হন। পঞ্চম ওভারের তৃতীয় ও শেষ বলে যথাক্রমে ইয়ন মর্গ্যান ও সুনীল নারিনের উইকেট তুলে নেন চাহার। এই ওভারের পর তাঁর বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ৩ ওভারে ১৩ রানে ৪ উইকেট। ডোয়েইন ব্র্যাভোর জায়গায় সুযোগ পেয়ে এদিন রাহুল ত্রিপাঠির উইকেট তুলে নেন লুঙ্গি এনগিডি। এই ক্যাচটিও ধরেন ধোনি। আইপিএলে উইকেটের পিছনে এদিনই ১৫০তম শিকার পূর্ণ হলো তাঁর। চার ওভারে ২৯ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে এবারের আইপিএলে আটটি উইকেট পেলেন তিনি, সর্বাধিক উইকেটশিকারীর দৌড়ে রইলেন যুগ্মভাবে দ্বিতীয় স্থানে। আইপিএলে এদিন তিনি ৫০তম উইকেটটিও পেয়েছেন।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
এরপরই পাওয়ারপ্লে-তে এই বিপর্যয় কাটানোর চেষ্টা করেন আন্দ্র রাসেল ও দীনেশ কার্তিক। ১১তম ওভারে ১০০ রান টপকায় কেকেআর। ২১ বলে অর্ধশতরান পূর্ণ করেন আন্দ্রে রাসেল। এরপরই গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু দেন স্যাম কারান। কারানের বল লেগ সাইডে ওয়াইড ভেবে জাজমেন্ট দিতে গিয়ে বোল্ড হন রাসেল। ৩টি চার ও ছয়টি ছক্কার সাহায্যে ২২ বলে ৫৪ করেন রাসেল। ১১.২ ওভারে ১১২ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে ফের চাপে পড়ে যায় কেকেআর।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
২০০তম আইপিএল ম্যাচে একা কুম্ভ রক্ষার চেষ্টা চালালেও ১৫তম ওভারের শেষ বলে ২৪ বলে ৪০ রান করে দীনেশ কার্তিক আউট হতেই কেকেআরের যাবতীয় আশা শেষ হয়ে যায়। কার্তিকের ইনিংসে ছিল চারটি চার ও দুটি ছয়। এরপর ঝোড়ো ব্যাটিং করতে থাকেন প্যাট কামিন্স। ১৬তম ওভারে স্যাম কারানের বলে টানা তিনটি ছক্কা-সহ চারটি ছয় হাঁকান তিনি, এই ওভারে আসে ৩০ রান। শেষ চার ওভারে দরকার ছিল ৪৫ রান।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
এদিন টস জিতে চেন্নাই সুপার কিংসকে ব্যাট করতে পাঠান কলকাতা নাইট রাইডার্স অধিনায়ক ইয়ন মর্গ্যান। শতরানের ওপেনিং জুটির সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ২২০ রান তোলে চেন্নাই সুপার কিংস। ৯টি চার ও চারটি ছয়ের সাহায্যে ৬০ বলে ৯৫ করে অপরাজিত থাকেন ফাফ দু প্লেসি। এবারের আইপিএলে এদিনই সবচেয়ে বেশি রান উঠল চেন্নাই সুপার কিংসের ওপেনিং জুটিতে। ১২.২ ওভারে যখন ঋতুরাজ গায়কোয়াড়কে আউট করলেন বরুণ চক্রবর্তী সিএসকে তখন ১১৫ রান তুলে ফেলেছে। ৪২ বলে ৬৪ রান করে আউট হন ঋতুরাজ। ছটি চার ও চারটি ছয় মেরেছেন চেন্নাই সুপার কিংসের এই ওপেনার। আগের তিনটি ম্যাচে ফর্মে ছিলেন না। এদিন ফর্মে ফিরলেন দারুণভাবেই।
(ছবি- বিসিসিআই/আইপিএল)
এবারের আইপিএলে প্রথম তথা আইপিএল কেরিয়ারে ১৭তম অর্ধশতরান পেলেন অপর ওপেনার ফাফ দু প্লেসি। ষষ্ঠ দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার হিসেবে এদিন টি ২০-তে ৬ হাজার রানও পূর্ণ করেন তিনি। দরকার ছিল ১ রান, প্যাট কামিন্সের বলে চার মেরে এদিন খাতা খোলার পাশাপাশি ছয় হাজারের মাইলস্টোনও স্পর্শ করেন দু প্লেসি। ঋতুরাজের আউটের পর মঈন আলির সঙ্গে ৫০ রানের পার্টনারশিপও গড়েন। ১২ বলে ২৫ রান করে আউট হন মঈন। দুটি চার ও একটি ছয়ের সাহায্যে ৮ বলে ১৭ রান করেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। রবীন্দ্র জাদেজা শেষ বলে ছক্কা মেরে অপরাজিত থাকেন। সুনীল নারিন, বরুণ চক্রবর্তী ও আন্দ্রে রাসেল একটি করে উইকেট দখল করেন। প্যাট কামিন্স চার ওভারে ৫৮ ও প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ চার ওভারে ৪৯ রান দেন।