
আইপিএলে কাল কলকাতার সামনে মুম্বই, যে কারণে রোহিতরা 'দুঃস্বপ্ন' নাইটদের কাছে
মঙ্গলে আইপিএলের মহা-ম্যাচ। কলকাতা নাইট রাইডার্স মুখোমুখি হবে আইপিএলের সফলতম দল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স টানা নয় বছর আইপিএলে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারের পর নাইট-বধ সেরেই ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া। পরিসংখ্যানেও এগিয়ে তাঁরাই। তবে যে দাপটের সঙ্গে খেলে গতকাল সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে হারিয়েছে কেকেআর, তাতে রোহিতদের কাজ খুব একটা সহজও হবে না।

পরিসংখ্যানে এগিয়ে মুম্বই
আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের পারস্পরিক সাক্ষাতের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে কয়েক যোজন এগিয়ে রোহিত শর্মারাই। শেষ বারোটি সাক্ষাতে নাইটরা মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে জয় পেয়েছে মাত্র একবার। সামগ্রিক পরিসংখ্যানে ২১-৬ ব্যবধানে এগিয়ে গত দুই বারের চ্যাম্পিয়ন তথা আইপিএলের সফলতম দল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। কিন্তু এবার প্রথম ম্যাচেই ইয়ন মর্গ্যানের নেতৃত্বে যে ফিয়ারলেস বা ভয়ডরহীন ক্রিকেট নাইটরা খেলেছেন তাতে কালকের ম্যাচে তুল্যমূল্য লড়াইয়েরই সম্ভাবনা।

আত্মবিশ্বাসী নাইট শিবির
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ম্যাচে নীতীশ রানা ও রাহুল ত্রিপাঠির ব্যাটিং বিস্ফোরণই ফারাক গড়ে দিয়েছে। শুভমান গিল ১৩ বলে ১৫ করে আউট হলেও নীতীশ রানার সঙ্গে তাঁর ওপেনিং জুটিতে ৭ ওভারে ৫৩ রান ওঠে। কাজে দিয়েছে এই বাঁহাতি-ডানহাতি কম্বিনেশন। পরে রানের গতি বাড়িয়ে তিনে নামা রাহুল ত্রিপাঠি ২৯ বলে ৫৩ রান করেন। ৫৬ বলে ৮০ রান করেন রানা। রানা ও রাহুলের জুটিতে ওঠে ১০৪ রান। ১৫ ওভারে নাইটদের রান ছিল ১ উইকেটে ১৪৪। দলের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে নিয়ে খুশি অধিনায়ক ইয়ন মর্গ্যান। তিনি বলেন, আমাদের দলের অন্যতম শক্তি হলো ভারতের দুই দারুণ প্রতিভাবান আমাদের হয়ে ওপেন করছেন।

উইনিং কম্বিনেশন
টপ অর্ডারের সাফল্য, সেই সঙ্গে দীনেশ কার্তিকের ৯ বলে ২২ রানের অপরাজিত ক্যামিওর সুবাদে নাইটদের বড় রান তুলতে বেগ পেতে হয়নি। রাসেল, মর্গ্যান বা শাকিব ব্যর্থ হলেও নাইটরা চেন্নাইয়ের উইকেটে ৬ উইকেটে ১৮৭ তুলেছে। কালকের ম্যাচে তাই নাইটদের প্রথম একাদশে পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। অর্থাৎ এবারের আইপিএলে নামার জন্য সুনীল নারিনকে হয়তো আরও কয়েক দিন অপেক্ষাই করতে হবে। ডেথ ওভারে রাসেলের বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন মর্গ্যান। আর রাসেল, কার্তিক, মর্গ্যান, শাকিবরা যে কোনও প্রতিপক্ষের কপালেই ভাঁজ ফেলতে যথেষ্ট। হরভজনকে এক ওভার বল করানো নিয়ে মর্গ্যান বলেন, প্রতিপক্ষ অনুযায়ী আমাদের পরিকল্পনা বদলাবে। হরভজনকে প্রথম ওভার করানোও সেই পরিকল্পনার অঙ্গ ছিল। ভাজ্জি ওই ওভারে কপাল ভালো থাকলে উইকেটও পেতে পারতেন। অর্থাৎ এতেই স্পষ্ট অভিজ্ঞ ভাজ্জিকে সুকৌশলেই ব্যবহার করতে চান নাইট অধিনায়ক।

ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া
শেষ বলে হারতে হয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের কাছে। মূলত হর্ষল প্যাটেলের বিধ্বংসী স্পেল আর এবি ডি ভিলিয়ার্সের ক্যালকুলেটিভ ব্যাটিংয়ের কাছেই পরাস্ত হয়েছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। তবে সেই ম্যাচ ভুলে মঙ্গলবারই জয়ের রাস্তায় ফিরতে বদ্ধপরিকর রোহিত শর্মার দল। ক্রিস লিন সফল হয়েছেন। কুইন্টন ডি কক কোয়ারান্টিন পর্ব কাটিয়ে অনুশীলন শুরু করলেও প্রথম একাদশে থাকবেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। ফলে কালকের ম্যাচেও রোহিতের সঙ্গে লিনই ওপেন করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। দলে বড় রদবদলের সম্ভাবনা বা প্রয়োজন কোনওটাই নেই। মিডল অর্ডারে সূর্যকুমার যাদব, ঈষান কিষাণ, হার্দিক পাণ্ডিয়া রয়েছেন। আজ জাহির খান স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কাঁধে সামান্য চোট থাকলেও উদ্বেগের কিছু নেই। হার্দিক খুব শিগগিরই বোলিং শুরু করবেন এবং কারয়ন পোলার্ডই তাঁদের ষষ্ঠ বোলার। অলরাউন্ডার পোলার্ডের পাশাপাশি মার্কো জেনসেনেরও প্রশংসা করেছেন জাহির।

ট্রাম্প কার্ড
সানরাইজার্স হায়দরাবাদের তুলনায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বোলিং বিভাগ আরও শক্তিশালী। ফলে শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের সামনে কালই নাইটদের বড় পরীক্ষা। জাহির বলে দিয়েছেন, বুমরাই আমাদের ট্রাম্প কার্ড। টি ২০-তে শুভমান গিলের ব্যাটিং সামান্য হলেও চিন্তায় রাখছে কেকেআরকে। কালকের ম্যাচে বুমরাহ ও বোল্টের আক্রমণ তিনি কীভাবে সামলান সেটাও দেখার। ক্রুণাল পাণ্ডিয়া ও রাহুল চাহারের বোলিংয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও জাহির বলেছেন, পীযূষ চাওলার মতো স্পিনারের অভিজ্ঞতাও এই টুর্নামেন্টে দলের কাজে আসবে। উল্লেখ্য, আগের ম্যাচে রাহুল চাহার আহামরি বোলিং করেননি। অন্যদিকে, লিনের মতো চাওলাও কেকেআরে খেলেছেন। অনেকের শক্তি, দুর্বলতা সম্বন্ধেও জানেন। হার্দিক সম্ভবত কালকের ম্যাচেও বোলিং করবেন না। চিপকের ডিউ ফ্যাক্টরদের দিকেও তাকিয়ে জাহিররা। ফলে কালকের ম্যাচে মুম্বইয়ের প্রথম একাদশে চাওলাকে দেখা গেলে যে অবাক হওয়ার কিছু নেই, তার ইঙ্গিত মিলেছে জাহিরের কথাতেই।