ইংল্যান্ড থেকেই দেশের করোনা-যোদ্ধাদের নেতৃত্ব দিয়ে সঙ্কটে মানুষের পাশে হনুমা
আইপিএলে দল না পেয়ে কাউন্টি খেলতে গিয়ে এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডেই রয়েছেন হনুমা বিহারী। আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ টেস্টের দলে তিনি আছেন। ৩ জুন ভারতীয় দল ইংল্যান্ডে পৌঁছালে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। তবে ইংল্যান্ডে থেকেও তিনি সর্বতোভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন কোভিড-যুদ্ধে। সঙ্কটাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টটিকে কাজে লাগাচ্ছেন নানা তথ্য আদান-প্রদানের কাজে। একশো জনকে নিয়ে করোনা মোকাবিলায় একটি দল গড়ে মানুষের পাশে থাকার উদ্যোগও নিয়েছেন হনুমা।
ভাবনার বাইরে
কঠিন পরিস্থিতিতে বহু ম্যাচ বাঁচানো বা জেতানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে ২৭ বছরের হনুমার। তবে তাঁর ভাবনাতেই ছিল না বেড পেতে এত কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার কথা। তিনি বলেছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালে বেড পেতে যা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে তা কল্পনাতীত। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার ফলোয়ারদের মধ্যে থেকেই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অন্তত ১০০ জন সঙ্কটে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। উল্লেখ্য, টুইটারে ১ লক্ষ ১০ হাজারের বেশি ফলোয়ার রয়েছে হনুমার। তাই তিনিও বহু তথ্য রিটুইট করছেন। এতে উপকারও পাচ্ছেন অনেকে। হনুমা যে তথ্য শেয়ার করছেন বা কোনও সুপারিশ করছেন সঙ্গে সঙ্গে সেই সমস্যা সমাধানে ঝাঁপিয়ে পড়ছে হনুমার টিম। অন্ধ্রপ্রদেশের কয়েকজন সতীর্থ ছাড়াও এই প্রয়াসে সামিল হয়েছেন হনুমার স্ত্রী এবং বোন। যাতে অভিভূত ভারতীয় দলের মিডল অর্ডারের এই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান।
চলছে কর্মযজ্ঞ
হনুমার স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যাঁরা মানুষের পাশে রয়েছেন তাঁরা মূলত অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও কর্নাটকের। তথ্য পেয়েই তাঁরা প্লাজমা, অক্সিজেনের ব্যবস্থা করছেন। পৌঁছে দিচ্ছেন খাবার, হাসপাতালের বেডও জোগাড় করে দিচ্ছেন। হনুমা জানাচ্ছেন, আপাতত এইটুকু করতে পারছি। পরে আমাদের পরিষেবা আরও বাড়াব। হনুমার উদ্যোগে সামিল রয়েছে তাঁর পরিবার, অন্ধ্রপ্রদেশ দলে তাঁর সতীর্থ পৃথ্বীরাজ ইয়ারা, দিল্লির কংগ্রেস নেতা বিভি শ্রীনিবাসের মতো বন্ধুবান্ধবরাও। একশো জনের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। হনুমা বলেন, আমি একজন ক্রিকেটার। কিন্তু মানুষের পাশে থাকতে পারছি স্বেচ্ছাসেবকদের নিরলস কঠোর পরিশ্রমের ফলেই। হনুমা বলেন, আমি প্রথমে নিজে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করছিলাম। তারপর কয়েকজনকে অনুরোধ করি। যেভাবে আমার বন্ধু ও ফলোয়াররা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এগিয়ে এসেছেন তাতে কোনও প্রশংসা যথেষ্ট নয়। সোশ্যাল মিডিয়ার সব প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই সঙ্কটে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ইংল্যান্ডে ছয় টেস্ট নিয়ে
কাউন্টিতে এখনও অবধি বলার মতো কিছু করতে পারেননি হনুমা। ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে নটিংহ্যামের বিরুদ্ধে ০ ও ৮ রান করেছিলেন। এসেক্সের বিরুদ্ধে করেন ৩২ ও ৫২। ডারহামের বিরুদ্ধে দুই ইনিংসে আউট হন ৮ ও শূন্য রানে। তবে ইংল্যান্ডে ভারত যে ছটি টেস্ট খেলতে তাতে ভালো পারফর্ম করার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী হনুমা। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট উপেক্ষা করে সাড়ে তিন ঘণ্টার লড়াকু ইনিংস খেলে সিডনি টেস্টে ভারতের পরাজয় বাঁচানো হনুমা বলেন, দল যেভাবে আমাকে চাইবে আমি তৈরি। এমনকী ওপেন করতে বললেও রাজি। আমি টপ অর্ডারেও নেমেছি। তাই সব চ্যালেঞ্জ নিতেই প্রস্তুত। সিডনি টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৭ মিনিট ক্রিজে থেকে ১৬১ বলে ২৩ রান করেছিলেন হনুমা। ১২৮ বলে ৩৯ রান করা অশ্বিনের সঙ্গে তিনিও অপরাজিত ছিলেন। ২০১৮-১৯ মরশুমে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের হয়ে ওপেনও করেছেন হনুমা বিহারী। চোটের কারণে অস্ট্রেলিয়া সফরে সব টেস্ট খেলতে পারেননি। পরে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও খেলতে পারেননি ফিট না হওয়ায়। ওয়াশিংটন সুন্দর ভারতীয় দলে ভালো ব্যাটিং করলেও হনুমা বলেন, সুন্দর যেভাবে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন তা প্রশংসনীয়। আমিও নিজের খেলায় ফোকাস রাখছি। নিজের অফ-ব্রেক বোলিং নিয়েও খাটছি।
টেস্ট প্রস্তুতি
ইংল্যান্ডে ঠাণ্ডার সঙ্গে মানিয়ে নিতে বার্মিংহ্যামে অনুশীলন সারছেন হনুমা বিহারী। অ্যালেস্টার কুকের এসেক্সের বিরুদ্ধে অর্ধশতরান করা তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। ২০১৮ সালে ওভালেই টেস্ট অভিষেক হয়েছিল হনুমার, অর্ধশতরান করেছিলেন। সফর ভালোই গিয়েছিল। ইংল্যান্ডে খেলা ভালোই উপভোগ করেন তিনি। হনুমার কথায়, মরশুমের শুরুতে ইংল্যান্ডে খেলাটা চ্যালেঞ্জিং। তবে কাউন্টিতে খেলার অভিজ্ঞতা ভালোই। পিচ ও পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতেই কাউন্টিতে খেলতে আসা। আশা করি এই অভিজ্ঞতা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে পারব।