ডনের দেশে দাদাগিরি! অনভিজ্ঞ দল নিয়ে ভারতের সিরিজ জয়, ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে রূপকথার লড়াই
ডনের দেশে দাদাগিরি! অনভিজ্ঞ দল নিয়ে ভারতের সিরিজ জয়, ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে রূপকথার লড়াই
রূপকথার লড়াই! হ্যাঁ, ডনের দেশে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়কে এভাবেই ব্যাখ্যা করা যায়। বিরাট এক টেস্ট খেলে দেশে ফিরবেন! সরকারিভাবে এই ঘোষণার পরই ক্রিকেটপণ্ডিতরা ভারতকে ০-৪ হোয়াইটওয়াশ হতে দেখেছিলেন!
সেখানেই বিরাটের নেতৃত্বে অ্যাডিলেডে ভারতের ৩৬ রানে অলআউটের মহাবিপর্যয়! সেই বিপর্যয় যদি ইতিহাসে স্থান পায় তবে মহাপ্রত্যাবর্তনটা আরও বড় করে লেখা থাকবে।
যেখানে বিরাট দেশে ফেরার পর শামি-উমেশদের চোটে জর্জড়িত পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটন সুন্দর-শার্দুল ঠাকুর-নভদীপ সাইনি-মহম্মদ সিরাজদের মতো একঝাঁক তরুণদের কাঁধে চেপে ইতিহাস লিখল ভারত। ৩৬ এর ধ্বংস দেখে যারা ভারতের উপর আস্থা হারিয়েছিলেন, রাহানের নেতৃত্ব তরুণদের নয়া ভারতই যেন তাঁদের নতুন রূপকথার প্রত্যাবর্তন দেখালেন। ডনের দেশে এযেন নতুন ভারতের 'দাদাগিরি'। একনজরে ভারতের রূপকথায় লড়াইয়ে নায়ক কারা।
নায়ক ১, মহম্মদ সিরাজ
পিতৃবিয়োগের শোক ভুলে মোলবোর্নে টেস্ট অভিষেক। শামি-উমেশ-বুমরাহদের অনুপস্থিতিতে সেই সিরাজই সিরিজ নির্ণায়ক শেষ টেস্টে দলের বোলিং ব্রিগেডের নেতা। বোলিংয়ের নেতা হয়ে সামনে থেকে লড়লেন। ব্রিসবেন টেস্টে অজিদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার। সব মিলিয়ে সিরিজে ৩ টেস্ট খেলে সংগ্রহে ১৩ উইকেট। সিরিজে ভারতের হয়ে সিরাজই সবচেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছেন।
নায়ক ২ শার্দুল ঠাকুর
নেই শামি, নেই উমেশ, চোটে জর্জড়িত বুমরাহ। অজিভূমে এসে তিন টেস্টে তিন পেসার ছিটকে যেতে চতুর্থ টেস্টে শার্দুলের কাছে সুযোগ এসে পরে। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারতের ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ে রূপকথা লিখলেন শার্দুল। বল হাতে ম্যাচে ৭ উইকেট। ব্রিসবেন টেস্টে তিনিই দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, ব্যাটেও নায়ক শার্দুল। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট পরে যাওয়ার পর তরুণ ওয়াশিংটন সুন্দরকে নিয়ে সপ্তম উইকেটে শতরান পার্টনারশিপ। ব্যাটে শার্দুলের সংগ্রহ ছিল ৬৭ রান। কেরিয়ারের প্রথম টেস্ট হাফ সেঞ্চুরি, যা শেষ পর্যন্ত দেশের সিরিজ জয়ের বড় ভূমিকা রাখল, এই হাফ সেঞ্চুরি আর গাব্বায় বল হাতে ৭টি উইকেট, আজীবনে স্মৃতির সিন্দুকে তুলে রাখতে চাইবেন শার্দুল।
নায়ক ৩, ওয়াশিংটন সুন্দর
অভিষেক টেস্টে আর সেটাও আবার অজিভূমে সিরিজ নির্ণায়ক ফাইট! মেগা মহারণে এমন অভিষেকে আর পাঁচজন ক্রিকেটার হলে স্নায়ুর চাপে ভুগতেন, সেটাই স্বাভাবিক। সেখানেই ব্রিসবেন টেস্টে প্রথম ইনিংসে স্টিভ স্মিথকে আউট করা থেকে, বল হাতে সব মিলিয়ে ৪ উইকেট নেওয়া। সেই সঙ্গে ব্যাটে শার্দুলের সঙ্গে প্রথম ইনিংসে সপ্তম উইকেটে শতরান পার্টনারশিপ। সুন্দরের ব্যাটে ৬২ রানের ইনিংস না থাকলে রাহানের দলের প্রথম ইনিংসে তিনশোর বেশি রানের গণ্ডি পার করা কঠিন ছিল। টি-২০ স্পেশালিস্ট থেকে টেস্ট অভিষেকে নায়ক বনে যাওয়া! অজিভূমে ভারতের রূপকথার টেস্ট সিরিজ জয়ের মতো সুন্দরের এই জার্নিও এক রূপকথার সমান।
নায়ক ৪, ঋষভ পন্থ
দস্তানা হাতে উইকেটের পিছনে একাধিকবার ক্যাচ ফেলা নিয়ে, বারবার সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু দমে যাননি, আর দমে যাননি বলেই নতুন রূপকথা লিখলেন। ইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি, কেরিয়ারে একাধিকবার বিপজ্জনক শট খেলে দলকে ডুবিয়েছেন। কিন্তু অজিভূমে তাঁর ব্যাটই শেষপর্যন্ত ভারত-অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট জয়ের পার্থক্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিডনিতে ৯৭ হাঁকিয়ে সেদিন আউট না হলে, ম্যাচ জেতাতে পারতেন। আপসোস ছিলই, আর ব্রিসবেন সেই আপসোসই ঘুছিয়ে দিলেন পন্থ। তাঁকে নিয়ে যাবতীয় সমালোচনা যোগ্য জবাব দিয়ে ৮৯ রানে অপারজিত থেকে ভারতকে ব্রিসবেন টেস্ট জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন। ম্যাচ জেতানো ইনিংসের সুবাদে ম্যাচের সেরাও হলেন। টি-২০ স্পেশালিস্ট, ভুলে ভরা উইকেটকিপার থেকে টেস্টে ভারতের সিরিজ জয়ের কারিগর! ডনের দেশে ভারতের রূপকথার লড়াইয়ে ঋষভের মুকুটে জুড়ল নতুন পালক।
নায়ক ৫, শুভমান গিল
মেলবোর্নে অভিষেক, সেখান থেকেই ব্রিসবেন ৯১। অজি ভূমে টেস্টের অভিষেক সিরিজে ব্যাট হাতে হৃদয় জিতলেন শুভমান গিল। তিন টেস্টের ছয় ইনিংসে শুভমান যথাক্রমে ৪৫, ৩৫*, ৫০, ৩১, ৭, ৯১ রান হাঁকালেন। ভারতীয় দলের ওপেনিংয়ে নতুন প্রতিভা হিসেবে ভবিষ্যতের তারকা হওয়ার দাবি জানিয়ে দিলেন শুভমান। আইপিএলের মঞ্চে থেকে দেশের জার্সিতে টেস্ট সিরিজে নায়ক হওয়া ওঠা, এও এক রূপকথা হয়ে রইল!
গাব্বায় টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট, বিনয়ী তরুণদের কাছেই হার পোড় খাওয়া অস্ট্রেলিয়ার!