দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন টিম ইন্ডিয়ার! আগুন ঝড়ালেন খলিল, ফের বিশাল ব্যবধানে জয়ের সরনিতে 'ব্যালান্সড'
মুম্বইয়ে ওয়েস্ট ভারত বনাম ইন্ডিজ চতুর্থ ওয়ানডে ম্যাচের প্রতিবেদন।
পুনের অপ্রত্যাশিত হারের পর দারুণভাবেই ফিরে এল টিম ইন্ডিয়া। হ্যাঁ, সোমবারের জয় কোনও বিরাট কোহলি বা রোহিত শর্মার একক প্রচেষ্টায় নয়, একেবারেই দল হিসেবে সঙ্বদ্ধ ক্রিকেট খেলল কোহলি ব্রিগেড।
শুরুতে রোহিত শর্মা (১৬২) ও রায়ডু (১০০)-০এর জোড়া শতরানের সৌজন্যে ৩৭৭ রান তুলে দেওয়ার পর অতি বড় ওয়েস্ট ইন্ডিজ সমর্থকও ভাবেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিততে পারে। কিন্তু, গত তিন ম্যাচের চমতকার পারফরম্যান্সের পর তাদের কাছ থেকে তুল্যমূল্য একটা লড়াই আশা করেছিল ক্রিকেট বিশ্ব। কিন্তু ভারতের রানের চাপে একেবারে আত্মসমর্পন করে বসল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারতীয় বোলারদের সামনে তারা ৩৬.২ ওভার ব্যাট করে গুটিয়ে গেল মাত্র ১৫৩ রানে। ২২৪ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতে ভারত সিরিজে ২-১ ফলে এগিয়ে গেল।
তাদের পরিকল্পনাহীন ব্যাটিং দেখে মনে হল এদিন থেকেই তারা টি২০ সিরিজের ব্যাটিং শুরু করে দিল। একমাত্র অধিনায়ক জেসন হোল্ডার (৫৪*) ছাড়া আর কেউ সামান্য প্রতিরোধও গড়তে পারলেন না। ব্যাটিং-এর পর বোলিং-এও ভারত দল হিসেবেই পারফর্ম করলো। একেবারে ইনিংসের শুরুর থেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের কব্জা করে ফেলেন ভারতীয়রা।
প্রথম স্পেলে দুর্দান্ত বল করেন জসপ্রীত বুমরা। একটিও উইকেট তুলতে না পারলেও পাটা ব্য়াটিং পিচে তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম পাওয়ার প্লে-তে হাতই খুলতে পারলেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্য়াটসম্যানরা। ৮ ওভার হাত ঘুরিয়ে এদিন বুমরা দেন মাত্র ২৫ রান। তাঁর জুড়ি ভূবনেশ্বর কুমার সামান্য রান দিলেও চন্দ্রপল হেমরাজকে (১৪) ভারতের হয়ে উইকেট শিকার করা শুরু করেন তিনিই।
আলাদা করে বলতে ভারতের ফিল্ডিং-এর কথাও। যার জন্য প্রথম ৭ ওভারেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৪/৩ হয়ে গিয়েছিল। কিয়েরন পাওয়েল (৪)-কে রানআউট করেন বিরাট কোহলি। আর কূলদীপের ক্ষিপ্রতার শিকার হয়ে এদিন কোনও রান না করেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের বড় ভরসা শাই হোপ।
তবে এদিনের স্টার বোলার খলিল আহমেদ। এশিয়া কাপেই অভিষেক হয়েছিল এই তরুণ বাঁহাতি পেসারের। জাহির খান কিন্তু বরাবরই খলিলকে নিয়ে আশাবাদী। এদিন তিনি দেখিয়ে দিলেন ভারতের পেস বোলিং বৈচিত্রে নতুন সংযোজন হিসেবে তিনি একেবারে তৈরি। শুরুর ধাক্কাটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সামলে উঠতে না উঠতেই মাত্র ৪ ওভারের ছোট্ট স্পেলে ১১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিংয়ের কোমর ভেঙে দেন খলিল।
তাঁর শিকারদের মধ্যে রয়েছে মার্লন স্যামুয়েলস (১৮), হেতমিয়ার (১৩) ও রোভম্যান পাওয়েল (১)। ফলে মাত্র ১৪ ওভারের মধ্যেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর দাঁড়ায় ৫৬/৬। সব মিলিয়ে ৫ ওভার বল করে তিনি ১৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন। এখান থেকে আর ম্যাচে ফেরা সম্ভব ছিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
তবে জয়ের গন্ধ পাওয়া ভারতীয় ক্রিকেটারদের হতাশা কিছুটা হলেও বাড়িয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক জোশন হোল্ডার। মূলত তাঁর জন্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস ১৫০ পার করে। শেষ দিকে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের তুলে নেন চায়নাম্যান কূলদীপ। তিনি ৮.২ ওভার বল করে ৪২ রান দিয়ে ৩ উইকেট দখল করেন।
তবে এদিনের নায়ক ফের ভারতের সহঅধিনায়ক রোহিত শর্মা। কেরিয়ারের ৭ নম্বর দেড়শ রান করে (১৩৭ বলে ১৬২) তিনিই এদিনের ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন চার নম্বরে নামা আম্বাতি রায়ডু (৮১ বলে ১০০)। ১৭ ওভারে ১০২/২ থেকে তাঁরা জুটিতে ভারতের রান নিয়ে যান ৪৩.৫ ওভারে ৩১২/৩ পর্যন্ত। ৩০ ওভার পর্যন্ত ধরে খেললেও তারপর প্রবল মারতে শুরু করেন দুজনেই। পরের ১১ ওভারে তাঁরা ১০০ রান তোলেন!
বিরাট কোহলি অবশ্য এদিন রান পাননি। কেমার রোচের একটি ভাল বল তাঁর ব্যাটের কানা ছুঁয়ে যায় উইকেটরক্ষকের হাতে। ১৭ বলে ১৬ করেই ফেরেন তিনি।
আলাদা করে বলতে হবে আরও একজনের কথা। তিনি মহেন্দ্র সিং ধোনি। সদ্য টি২০ ক্রিকেটে স্কোযাড থেকে বাদ পড়েছেন। একদিনের ম্যাচেও তাঁর থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছএ বিভিন্ন মহলে। এদিন কিন্তু তাঁর (১৫ বলে ২২) ও কেদার যাদব (৭ বলে ১৬)-এর ক্যামিও ইনিংসের জন্যই ভারত শেষ ১০ ওভারে ১১৬ রান তোলে। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে কূলদীপের বলে কিমো পল-এর আউটের সময় দেখা যায় উইকেটে পিছনে তাঁর ক্ষিপ্রতা। কিমো পলের উইকেটের ৬০ শতাংশ কৃতিত্ব তাঁরই বলা যায়।