
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ভারতের ভাগ্য নির্ভর করবে এই পাঁচ বোলারের উপর
বিগত তিন-চার বছরে টেস্ট ক্রিকেটে দাপিয়ে বেড়িয়েছে ভারত। ঘরের মাঠেই হোক কিংবা প্রতিপক্ষ দেশের মাটিতে, সর্বোত্র দাপয় দেখিয়েছে বিরাট কোহলি'র দল। টেস্টে ভারতীয় দলের এই ধারাবাহিক সাফল্যে মূল কারিগর বোলার'রা। এই মুহূর্তে যাঁরা ভারতের জার্সিতে খেলেন তাঁদের ক্ষমতা আছে প্রতিপক্ষের ২০টি উইকেটেরই পতন ঘটানোর।বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে ভারতীয় বোলিং ইউনিট প্রতিপক্ষের ঘুম কেড়ে নিতে সিদ্ধহস্ত। দলের পেসাররাই হোক কিংবা স্পিনার'রা প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে যে কোনও পরিস্থিতি থেকে দলকে ম্যাচে ফেরিয়ে বিজয়ীর জায়গায় পৌঁছে দিতে।২৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে চলা ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা'র টেস্ট সিরিজেও গোটা দেশের নজর থাকবে মহম্মদ শামি-জসপ্রীত বুমরা'দের উপর।তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের আগে দেখে নিন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বর্তমান ভারতীয় দলের কোন কোন বোলার'রা বারবার দাপট দেখিয়েছেন।

রবিচন্দ্রন অশ্বিন:
২০২১-এ টেস্ট ক্রিকেটে দারুণ ছন্দে রয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ৮ ম্যাচে ৫২ উইকেট নিয়ে আত্মবিশ্বাসের শীর্ষে রয়েছেন এই অফ-স্পিনার। একের পর এক মাইলস্টোন পেরিয়ে ভারতের সাফল্যের অন্যতম কাণ্ডারী হয়ে উঠেছে অশ্বিন। হরভজন সিং-কে পিছনে ফেরে টেস্ট ক্রিকেটে ভারতীয়দের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহারী এখন তিনিই।
ইংল্যান্ড সফরে একটিও টেস্টে সুযোগ না পেলেও প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে রবিচন্দ্রন অশ্বিন বাজি হয়ে উঠতে পারেন বিরাট কোহলি'র। চোটের কারণে এই সফরে নেই অক্ষর পটেল। রবীন্দ্র জাডেজার সঙ্গে স্পিন ডিপার্টমেন্ট সামলানোর দায়িত্ব অশ্বিনের উপরই থাকবে।
প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় সফররত ভারতীয় দলের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহকারী অশ্বিন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১০টি ম্যাচে অশ্বিনের সংগ্রহ ৫৩টি উইকেট। তাঁর বোলিং গড় ১৯.৭৫। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পাঁচ ইনিংসে পাঁচ বার পাঁচ উইরেট সংগ্রহ করেছেন অশ্বিন। এক ম্যাচে সেরা বোলিং ফিগার ১২/৯৮ এবং এক ইনিংসে সেরা ফিগার ৭/৬৬।

মহম্মদ শামি:
বিগত বেশ কয়েক বছর ভারতীয় বোলিং লাইনআপের প্রধান ভরসা শামি। একের পর সিরিজ একার হাতে উতরে দিয়েছেন এই পেসার। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মতোই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেও শামির সেরা পরফরম্যান্সের একাধিক নজির রয়েছে। প্রোটিয়া'দের বিরুদ্ধে ৮টি টেস্ট খেললেও শামির উইকেট সংখ্যা ৩৪। দক্ষিণ আফ্রিকায় সফররত বর্তমান ভারতীয় দলের পেসারদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি। ২০১৩ থেকে ২০১৮-এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ৫ ম্যাচে ২১টি উইকেট নিয়েছেন শামি। তাঁর ২৮ রানে ৫ উইকেটের উপর ভর করেই ২০১৮-এ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে জোহানেসবার্গের টেস্টে জয় পেয়েছিল ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দু'বার এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন শামি। এই দলের বিরুদ্ধে তাঁর সেরা বোলিং ফিগার এক ম্যাচে ৬/৭৪ এবং এক ইনিংসে ৫/২৮।

ইশান্ত শর্মা:
অভিজ্ঞ পেসার ইশান্ত শর্মা এই দলের সব থেকে অভিজ্ঞ বোলার। ভারতের হয়ে এটা ইশান্তের চতুর্থ দক্ষিণ আফ্রিকা সফর হতে চলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে ইশান্তের অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে ভারতের কাছে। তা ছাড়া টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে তাঁর উইকেট শিকারের দক্ষতা কারোর অজানা নয়। ১৫ ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ৪৩.৫১ গড়ে ৩১টি উইকেট নিয়েছেন ইশান্ত। এর মধ্যে ২০টি উইকেট দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে পেয়েছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা'র বিরুদ্ধে তাঁর এক ম্যাচে সেরা বোলিং ফিগার ৫/৭৩ এবং এক ইনিংসে ৪/৭৯।

উমেশ যাদব:
জাতীয় দলে নিয়মিত না হলেও যখন সুযোগ পেয়েছেন নতুন এবং পুরনো বল হাতে দলকে উইকেট এনে দিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দলে তাঁর জায়গা পাওয়াটাও অনেকটা প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে তাঁর পরিসংখ্যানের ফসল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে উমেশের রেকর্ড বিরাট'কে দল গঠনের ক্ষেত্রে বারবার ভাবতে বাধ্য করবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে চারটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন উমেশ, তাঁর উইকেট সংখ্যা ১৬। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে উমেশের ১২.১২ গড় চোখ ধাঁধানো। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রতিটা উইকেটই তিনি পেয়েছেন ভারতের মাটিতে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এক ম্যাচে তাঁর সেরা বোলিং ফিগার ৬/৫৯ এবং এক ইনিংসে ৩/৯।

জসপ্রীত বুমরা:
বুমরার কেরিয়ারে এটা দ্বিতীয় দক্ষিণ আফ্রিকা সফর হতে চলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে মাত্র ৩টি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন বুমরা। ৩ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ১৪টি উইকেট। বুমরার ভাল পারফরম্যান্স স্বত্ত্বেও ২০১৮ সফরে ভারত ২-১ ব্যবধানে হেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। এই ১৪টি উইকেটই বুমরা পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম সফরে। প্রোটিয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে এক ম্যাচে তাঁর সেরা বোলিং ফিগার ৭/১১১ এবং এক ইনিংসে তাঁর সেরা ফিগার ৫/৫৪।
১৯৯২ থেকে টেস্ট ক্রিকেটে মোট ৩৯টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। এর মধ্যে ভারত জিতেছে ১৪টি ম্যাচে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা জয় পেয়েছে ১৫টি ম্যাচে। দশটি ম্যাচ ড্র হয়েছে।