অস্ট্রেলিয়ার থেকে এটা শেখা উচিত, চেন্নাইয়ের নায়কের গলায় অভিমানের সুর
অস্ট্রেলিয়ার থেকে এটা শেখা উচিত, চেন্নাইয়ের নায়কের গলায় অভিমানের সুর
চেন্নাইয়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্ট স্মরণীয় হয়ে থাকল রবিচন্দ্রন অশ্বিনের কাছে। প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট-সহ ম্যাচে ৮ উইকেট। সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ শতরান। সেটাও এসেছে বছর পাঁচেক পর। স্বাভাবিকভাবেই তিনিই ম্যাচের সেরা। যদিও এই পুরস্কার রোহিত শর্মার সঙ্গে যুগ্মভাবে অশ্বিনকে দেওয়া যেত বলে মনে করেন প্রজ্ঞান ওঝা। অশ্বিনের কৃতিত্বকে কোনওভাবে খাটো না করেই ওঝা বলেন, এই পিচে ব্যাটসম্যানদের চ্যালেঞ্জ কঠিন ছিল। ফলে ভারতের জয় অনেকটাই নিশ্চিত করে দেয় প্রথম ইনিংসে রোহিত শর্মার দাপুটে শতরান। অশ্বিনের শতরানের অবদানও কম নয়। কিন্তু ততক্ষণে ইংল্যান্ড বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছে। ফলে ম্যাচের রাশ ভারতের হাতে এনে দিয়েছেন রোহিতই। ফলে দুজনকেই যুগ্মভাবে ম্যাচের সেরা দেওয়া যেত। ওঝার চোখে এই ম্যাচের সেরা রোহিতই। যদিও চেন্নাই খুশি ঘরের ছেলের সাফল্যে।
নায়কের অভ্যর্থনা
করোনা-পর্ব কাটিয়ে স্বাভাবিক হচ্ছে ক্রিকেট দুনিয়া। চেন্নাইতে দ্বিতীয় টেস্টেই বিধি মেনে মাঠে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ৫০ শতাংশ দর্শককে। এই স্মরণীয় জয় তাঁদের প্রতিই উৎসর্গ করেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তিনি বলেন, আমাকে গ্যালারি থেকে যেভাবে দর্শকরা ভালোবাসায় ভরিয়ে দিচ্ছিলেন প্রতি মুহূর্তে, তাতে তাঁরা আমাকে যেন নায়কের মতো অভ্যর্থনা দিচ্ছিলেন। ভাষায় বোঝাতে পারব না কী অনুভূতিটাই হচ্ছে। যাঁরা এই কদিনে আমাকে সমর্থন করেছেন, শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাঁদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ক্রীড়ামোদী চেন্নাইয়ের দর্শকদের কথা বিশেষ করে উল্লেখ করব, যাঁরা আমাকে নায়কের অনুভূতি দিয়েছেন। এই জয়, সাফল্য তাঁদেরই উৎসর্গ করছি।
আট বছর বয়সে ছিলাম গ্যালারিতে
অশ্বিন বলেন, ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম চিপকে খেলছি, দর্শকরা আমার খেলা দেখে হাততালি দিচ্ছেন। আট বছর বয়সে এই মাঠের গ্যালারিতে বসে প্রথম খেলা দেখি। বাবা আমাকে নিয়ে এসেছিলেন। আজ আমি ভাযা হারিয়েছি। এই মাঠে চারটি টেস্ট খেললাম। এটা সবচেয়ে স্পেশ্যাল। নায়কের মতো মনে হচ্ছিল। বল করা বা বল করতে আসার আগে প্রতিবার আলাদা অনুভূতি হচ্ছিল। মাঠে প্রচুর দর্শক এসেছিলেন। করোনা নিয়ে তাঁদের মধ্যে ভয় দেখিনি। মাস্ক পরতে ভুলে গেলেও তাঁরা হাততালি দিয়ে ক্রিকেটারদের উৎসাহিত করতে ভুল করেননি। তাঁরা যেভাবে এই কটা দিন সমর্থন করেছেন তাতে এই জয় তাঁদের উৎসর্গ করছি। মাঠ দর্শকশূন্য থাকা অবস্থায় আমরা সিরিজে ০-১-এ পিছিয়ে পড়ি। তাঁরা মাঠে আসতেই সিরিজ ১-১ হয়েছে। আমেদাবাদেও দর্শক থাকবেন, আশা করি তাঁদের সমর্থন পাব একইভাবে।
অভিমানী অশ্বিন
ভারতের ক্রিকেট সংস্কৃতি অস্ট্রেলিয়ার থেকে শেখা উচিত বলেও এদিন মন্তব্য করেন অভিমানী অশ্বিন। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে সিরিজ শুরুর আগে ক্যামেরন গ্রিনকে এমনভাবে দেখানো হয়েছিল যে বিশাল একজন ক্রিকেটার সিরিজে নামবেন। একটা হাফ সেঞ্চুরি করলেও উইকেট পাননি। বলার মতো পারফর্ম না করলেও তার পাশে সব সময় থেকেছে অস্ট্রেলিয়া। এই সংস্কৃতিটা আমাদের এখানে নেই। ভালো ক্রিকেটাররাই জাতীয় দলে সুযোগ পান। দলে বা দলের বাইরে আরও অনেক ক্রিকেটার আছেন। তবে আমাদের দেশে মতামত দিতে অনেকেই এগিয়ে আসেন। কিন্তু ক্রিকেটারের কী মত, তাঁর কী দরকার, সেই ভালো-খারাপ না দেখেই। এতে আপত্তি নেই, কিন্তু আমরা কোনটা নেব সেটা আমরা ঠিক করে রাখি। অশ্বিনের কথায়, আমি ২০১৬ সালে শেষ শতরান করি ক্যারিবিয়ান সফরে। তারপর টেস্ট শতরান না আসায় অনেকেই আমার ব্যাটিং দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁরা জানেন না ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোরের পরামর্শে কোভিড লকডাউনেও জোরকদমে ব্যাটিং অনুশীলন করেছি, সুইপ-সহ বিভিন্ন শট প্র্যাকটিস করেছি।
ঋষভের পাশে
এক সময় ভারতে ঋষভ পন্থকে ভিলেন মনে করা হতো। মাঠে নামলেই ধোনির নামে জয়ধ্বনি দেওয়া হতো। ঋষভের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্বিন বলেন, ঋষভ একজন ভালো ক্রিকেটার। তবু মাঠে নামলেই তাঁকে উদ্দেশ করে যা বলা হতো তা একজন ক্রিকেটারের নিজেকে উন্নত করার পথে ব্যাঘাত তৈরি করে। সমর্থন পেলে নিজেকে উন্নত করতে যত কম সময় লাগে, তেমনই কেউ সব সময় ভুল, ত্রুটি খুঁজে সরব হলে তা কোনও ক্রিকেটারের মনে চাপ তৈরি করে। নিজেকে উন্নত করতে আরও বেশি সময় লাগে। ঋষভ ভালো ক্রিকেটার বলেই তো জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছে। ফলে অস্ট্রেলিয়ায় যেমন সকলে ক্রিকেটারদের পাশে থাকেন ভারতেও তেমনটাই হওয়া উচিত।
চোট সারিয়ে ভারতীয় দলে ফিরছেন শামি-সাইনি, কবে জেনে নিন