মোতেরায় জয়ের পর বেসুরো যুবরাজ, পিচের জন্য ভারতের পয়েন্ট কাটা নিয়ে জল্পনা
আমেদাবাদের মোতেরায় নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্ট শেষ হতে লেগেছে পাঁচ সেশনের কিছু বেশি। পুরো দুই দিনও লাগেনি। এই অবস্থায় ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পিচ। ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জো রুট এমন ফলাফলের জন্য পিচকে দায়ী না করে ব্যাটিংয়ের টেকনিক, ব্যাটসম্যানদের মনঃসংযোগের অভাবকে দায়ী করেছেন। এসজি গোলাপি বলের শক্ত সিম ও বিশেষ কোটিং বা আস্তরণ কাজে লাগিয়ে স্পিনাররা বাড়তি গতি আদায় করে ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলেন বলে দাবি করেন রুট। যদিও পিচ নিয়ে সরব প্রাক্তনরা। যাতে যোগ দিলেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার যুবরাজ সিংও।
বেসুরো যুবরাজ
যুবরাজ সিং টুইটে লিখেছেন, দুই দিনে টেস্ট শেষ হয়ে গেল, এটা টেস্ট ক্রিকেটের পক্ষে কতটা ভালো সে সম্বন্ধে ধারণা নেই। তবে অনিল কুম্বলে ও হরভজন সিং এমন পিচ পেলে তাঁদের টেস্ট উইকেটের সংখ্যা ৮০০ হতো বলে মনে করেন যুবরাজ। তবে শততম টেস্ট খেলা ইশান্ত শর্মা ও চারশো টেস্ট উইকেটের মালিক হওয়া রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন যুবি। প্রশংসা করেছেন অক্ষর প্যাটেলের অসাধারণ বোলিংয়ের।
রোহিতের যুক্তি
ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সুনীল গাভাসকর বলেন, এই পিচ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কোনও বল ঘুরছিল, কোনও বল সোজা জোরে আসছে। এতে সব ব্যাটসম্যানের রান পাওয়া কঠিন। ভারতের রোহিত শর্মা দুই ইনিংসেই যেভাবে ব্যাট করেছেন সেটাই দুই দলের ফারাক গড়ে দিয়েছে। তবে পিচ নিয়ে অভিযোগ মানতে চাইছেন না রোহিত শর্মা। ম্যাচের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে কি এই ম্যাচের ফলে পিচের কোনও ভূমিকা নেই। বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান সোজা বলে আউট হয়েছেন। শুধু ইংল্যান্ড নয়, প্রথম ইনিংসে আমরাও ভালো ব্যাটিং করিনি, অনেক ভুলত্রুটি রয়েছে। পিচে কোনও জুজু ছিল না। ব্যাটিংয়ের পক্ষে ভালো পিচ ছিল। পিচে থিতু হতে পারলেই রান করা সম্ভব হতো। এর আগে একই ধরনের কথা শোনা গিয়েছিল ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির গলাতেও।
ইংল্যান্ডের প্রাক্তনদের মতানৈক্য
দুই দল ভালো ব্যাটিং করলে এই টেস্ট তিন বা চারদিনে গড়াতো বলেই মনে করেন প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক কেভিন পিটারসেন। যদিও পিচ নিয়ে বিরাটের যুক্তি উড়িয়ে দিয়েছেন ২০১২ সালে ভারত সফরে ইংল্যান্ডকে টেস্ট সিরিজ জেতানো অধিনায়ক অ্যালেস্টার কুক। তাঁর মতে, এই পিচে যে বল ঘুরেছে ভারতের পিচের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘুরেছে। আবার একইরকম বল সোজাও ব্যাটসম্যানদের দিকে ধেয়ে এসেছে। এই পিচে ব্যাট করা সত্যিই কঠিন ছিল। অনেক ক্রিকেটার আছেন যাঁদের স্পিন খেলা আরও উন্নত করতে হবে। কিন্তু এই পিচে তো বিরাট কোহলি, জো রুট যাঁরা স্পিন ভালো খেলেন তাঁরাও সুবিধা করতে পারেননি। এই পিচে সঠিকভাবে খেলা সত্যিই কার্যত অসম্ভব ছিল। বিরাট কোহলি যেভাবে পিচকে ঢাল করতে যুক্তি দিচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে তিনি বিসিসিআইয়ের কাজ করছেন। ব্যাটিং ও বোলিংয়ের মধ্যে যে ভারসাম্য প্রত্যাশা করা হয় এই পিচে তা ছিল না বলে মত আরেক প্রাক্তন অধিনায়ক অ্যান্ড্রু স্ট্রসের। তাঁর মতে, এতে স্পিনারদের জন্যই বাড়তি সুবিধা ছিল। স্পিন ভালো খেলা রুট ১৯ রান করেছেন, তার আগেও ২-৩ বার তিনি আউট হতে পারতেন।
পয়েন্ট কাটা যাচ্ছে না
আমেদাবাদের পিচ নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই জল্পনা শুরু হয় ভারতের পয়েন্ট কাটা যাবে কিনা তা নিয়ে। তবে বিরাট কোহলিদের চিন্তার কিছু নেই। টেস্ট ম্যাচ মাঝপথে বন্ধ হয়নি, পিচ বা আউটফিল্ডকেও আনফিট বলা হয়নি। তাই আমেদাবাদের পিচ খারাপ বলে চিহ্নিত হলেও ভারতের পয়েন্ট কাটা যাবে না বলেই আইসিসি সূত্রে খবর। ফলে শেষ টেস্ট ড্র রাখলেই বিরাটরা লর্ডসে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার ছাড়পত্র পেয়ে যাবেন। তবে কোনওভাবে হারা যাবে না। সেক্ষেত্রে সিরিজ ড্র হলে অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে ফাইনালে।