Ishan Kishan 210: ধোনির কোন কথা বদলে দেয় ঈশানকে? কেমন অনুশীলনে বাজিমাত? জানালেন কোচ উত্তম
বাংলাদেশকে ২২৭ রানে হারিয়ে ওডিআই সিরিজ হোয়াইটওয়াশ এড়াল ভারত। ওপেনার ঈশান কিষাণের একার রানই তুলতে পারল না লিটন দাসের বাংলাদেশ। একের পর এক রেকর্ড ভেঙে ২৪টি চার ও ১০টি ছক্কার সাহায্যে ঈশান করলেন ১৩১ বলে ২১০ রান! স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত তাঁর ছোটবেলার কোচ তথা বাংলার ছেলে উত্তম মজুমদার।
বিধ্বংসী ঈশান
ঈশান কিষাণ চলতি বছর একদিনের আন্তর্জাতিকে ভারতের হয়ে ভালোই খেলছেন। এদিন চট্টগ্রামের ইনিংস বিশ্বকাপের দলে তাঁর জায়গা পাকা করে দেবে বলেও অভিমত অনেক বিশেষজ্ঞের। অগাস্টে জিম্বাবোয়ে সফরে ঈশান দুটি ইনিংস খেলেন, রান করেন যথাক্রমে ৬ ও ৫০। এরপর দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে যথাক্রমে ২০, ৯৩ ও ১০ রান করেছিলেন। এদিন কেরিয়ারের দশম একদিনের আন্তর্জাতিকে প্রথম ওডিআই শতরান হাঁকালেন অবিস্মরণীয় ইনিংস খেলে।
উচ্ছ্বসিত উত্তম
ঈশান কিষাণের কোচ উত্তম মজুমদার এদিন প্রিয় ছাত্র, যাঁকে 'আপনা বাচ্চা' বলে অভিহিত করেন, তাঁর বিধ্বংসী, রেকর্ড ব্রেকিং শতরানটি দেখেছেন গ্রেটার নয়ডায় নিজের আকাদেমিতে। শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ফাঁকে চোখ রেখেছিলেন টিভিতে। উত্তম মজুমদার এদিন ফিরে গেলেন জুনের ঘটনায়। দিল্লিতে তখন ভারতের টি ২০ সিরিজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। কোচকে টিম হোটেলে ডেকে নেন ঈশান। এরপর হোটেলের রুমে চলতে থাকে শ্যাডো প্র্যাকটিস। কোচকে প্রতিদিন দিল্লির হোটেলে আসতে বলেছিলেন ঈশান। তাঁর তত্ত্বাবধানে শর্ট বল খেলার জন্য মাথার পজিশন, দেহের ভারসাম্যের বিষয়গুলি নিখুঁত করে নেওয়ার তালিম চলতে থাকে। শ্রীলঙ্কার পেসার লাহিরু কুমারার বল ঈশানের মাথায় লেগেছিল। কনকাসনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই শর্ট বল যাতে সমস্যার কারণ না হয় সেজন্য মানসিকভাবেও নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হোটেলের রুমে উত্তমের তত্ত্বাবধানে চলতে থাকে পুল মারার শ্যাডো প্র্যাকটিস। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে প্রথম ম্যাচেই তিনি করেছিলেন ৫৯ বলে ৭৬।
নিরলস পরিশ্রমেই সাফল্য
ডিসেম্বরের ৭ তারিখ জন্মদিন গিয়েছে উত্তমের। এদিন কিষাণের দ্বিশতরানটিকে বার্থ ডে গিফট হিসেবেই ভাবছেন তাঁর ছোটবেলার কোচ। এদিন যেভাবে ঈশান ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন, ইবাদত হোসেনের ১৪০ কিলোমিটার বেগের বলে অবলীলায় পুল হাঁকিয়েছেন তাতে তাঁর শর্ট বল খেলার টেকনিক নিয়ে আর প্রশ্ন উঠবে না বলেই মনে করেন উত্তম। কখনও পুল, কখনও ড্রাইভে যে বিশাল বিশাল ছক্কা এদিন কিষাণ মেরেছেন তাতে মুগ্ধ কোচ উত্তম। তাঁর কথায়, ওই ১০টি ছক্কা দেখলে বোঝা যাবে অল্প সময়ের মধ্যে কতটা পাওয়ার দিয়ে তিনি শটগুলি মেরেছেন। এটা হঠাৎ করে হয়নি। মাসের পর মাস দুটি সেশনে ৫০০ থেকে ৬০০ বল নিয়মিত ফেস করেছেন ঈশান। এর মধ্যে ২০০টি বল থাকতো পাওয়ারহিটিংয়ের জন্য। আমি সব সময়ই তাঁকে বড় শট খেলার পরামর্শ দিই, এটা যতক্ষণ ঠিকঠাক চলবে ততক্ষণ অন্য কিছু করার প্রয়োজনই নেই। ঈশানের বয়স এখন ২৪। এরই মধ্যে অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষী থেকেছেন। যা তাঁকে মানসিকভাবেও শক্তিশালী করেছে।
মাহির পরামর্শে বদলে যাওয়া
উত্তম মজুমদার জানিয়েছেন, তিনি সব সময় ঈশানকে বলেন অতীত ভুলে যেতে। সামনের দিকে তাকাতে। আগে যখন খেলার ফাঁকে সময় থাকতো নয়ডায় উত্তমের বাড়িতে থেকে অনুশীলন করতেন ঈশান। এখন জাতীয় দলের বাইরে থাকলে বেঙ্গালুরুতে ন্যাশনাল ক্রিকেট আকাদেমিতে থাকতে হয়। তবু কোচের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। উত্তমের কথায় উঠে এসেছে কীভাবে মহেন্দ্র সিং ধোনির কথা ঈশানের মনে প্রভাব ফেলেছিল। ধোনি ঈশানকে বলেছিলেন, "তোমার যা প্রতিভা তাতে ভারতীয় দলের হয়ে অভিষেকে যদি দেরি হয়, মনে রাখবে সেটা তুমিই নিজের প্রতি অবিচার করছো।"