বিলি বাউডেন নন তিনি কুমার ধর্মসেনা - পুদুচেরির মাঠে শুনতে চান 'ম্যাডাম' ডাক
লিঙ্গের বাধা ভেঙে মুম্বইয়ের বৃন্দা রথি হলেন ভারতের প্রথম জাতীয় স্তরের মহিলা আম্পায়ার।
২৯ বছরের বৃন্দা রথিকে প্রায়শয়ই মাঠে টিনএজ ক্রিকেটারদের মুখে শুনতে হয় 'স্যার' সম্বোধন। তবে এতে তিনি খুব একটা অসন্তুষ্ট হন তা নয়। তাঁর ছোটও করে কাটা চুল, বা কালো প্যান্ট সাদা শার্টকে ব্যঙ্গ করে দতাঁকে স্যার সম্বোধন করা হয়, এমনটা মনে করেন না তিনি। তাঁকে স্যার সম্বোধন শুনতে হয়, কারণ মাঠে আম্পায়ারকে স্যার বলে ডাকতেই অভ্যস্ত ক্রিকেটাররা।
হ্যাঁ, বৃন্দা রথি ভারতের প্রথম মহিলা আম্পায়ারদের একজন। সম্প্রতি বোর্ডের আম্পায়ারিং-এর লেভেল ২ পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় আম্পায়ারের মর্যাদা পেয়েছেন তামিলনাড়ুর এন জনিনি-ও। ফলে এখন থেকে ভারত জুড়ে মহিলাদের ক্রিকেট ম্যাচ ও জুনিয়র বয়েজ ম্য়াচে আম্পারিং করতে পারবেন তাঁরা।
ওড়িশা (১০)
এই রাজ্যে ৩৪.৮৯ শতাংশ নিরক্ষর মানুষ রয়েছে।
আম্পায়ারিং-এর ভাবনা
নবি মুম্বইয়ে ফিটনেস কোচের কাজ করতেন বৃন্দা। সপ্তাহান্তে বিভিন্ন স্থানীয় ম্যাচে স্কোরারের কাজ করতেন। ২০১৩ সালে ভারতে মহিলাদের ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলাকালীন বৃন্দা প্রথম এক মহিলা আম্পায়ারকে দেখেছিলেন - নিউজিল্যান্ডের প্রাণোচ্ছল, তাঁর মতো ছোট করে চুল কাটা ক্যাথি ক্রস। সেই থেকেই তাঁর মাথায় আম্পায়ারিং করার ভুত চেপেছিল।
অন্ধ্রপ্রদেশ (৯)
দক্ষিণ ভারতের মধ্যে এই রাজ্যটি সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। এখানকার ৩৭.৮৫ শতাংশ মানুষের কাছে এখনও শিক্ষার আলো পৌঁছয়নি।
যেমন ভাবা তেমন কাজ
এরপরই স্কোরার থেকে আম্পায়ারে উন্নীত হওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগেন বৃন্দা। স্থানীয় ও রাজ্য স্তরে আম্পায়ার হওয়ার পরীক্ষা দেন তিনি। পাসও করেন। শুরু হয় তাঁর আম্পায়ারিং জীবন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল মাসে মধ্যে মুম্বই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে অন্তত ৬০টি করে ম্যাচ খেলান তিনি।
উত্তরপ্রদেশ (৮)
ভারতের সবচেয়ে বড় ও জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশের ৩৮.১৮ শতাংশ মানুষ রয়েছে অশিক্ষার অন্ধকারে।
বিলি বাউডেন নন, তিনি কুমার ধর্মসেনা
আম্পায়ারিং-এর ক্ষেত্রে বৃন্দা একেবারেই বিলি বাউডেনের মতো নন, বরং বলা যেতে পারে অনেকটাই কুমার ধর্মসেনার মতো। যিনি মাঠে স্পটলাইটের বাইরে প্রায় অদৃশ্যই থাকতে চান। বৃন্দার কথায়, 'শরীরি ভাষা, যোগাযোগের দক্ষতা - ভাল আম্পায়ারিং-এর জন্য এসবের থেকেও বেশি প্রয়োজনীয় বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নেওয়া'।
অরুণাচল প্রদেশ (৭)
উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যটি বহুদিক দিয়েই পিছিয়ে রয়েছে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এই রাজ্যে ৩৯.৩১ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর।
ক্রিকেট এবং বৃন্দা
ক্রিকেট নিয়ে বরাবরই আগ্রহী ছিলেন বৃন্দা। আম্পায়ার হতে গেলে যে ক্রিকেচট খেলতেই হবে তার কোনও মানে নেই। কিন্তু কলেজে পড়াকালীন বৃন্দা মিডিয়াম পেস বল করতেন। চার বছর তিনি বিশ্ববিদ্য়ালয় স্তরে মুম্বই ইউনিবার্সিটির প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
ঝাড়খণ্ড (৬)
আদিবাসী অধ্যুসিত, পাহাড় ঘেরা, মাওবাদী কবলিত ঝাড়খণ্ডে অশিক্ষিত মানুষের হার শতকরা ৩৯.৩১ জন।
মহিলা বলে আম্পায়ারিং-এ সুবিধা আছে
বৃন্দার মতে যদি কেউউ মাঠে গিয়ে নিজের কাজটা ঠিকঠাকভাবে করে তাহলে সে মহিলা না পুরুষ সেই প্রশ্নই কারোর মাতায় আসে না। তবে মহিলা হওয়াতে আম্পায়ার হিসেবে তাঁর কিন্তু বাড়তি কিছু সুবিধা আছে বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মতে আম্পায়ারদের ইগো-হীন হতে হয়। মহিলারা অনেকবেশি নমনীয় হওয়ায় এই ব্য়াপারে সুবিধা রয়েছে। পাশাপাশি অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানিয়েছেন, 'মহিলা আম্পায়ার থাকলে ছেলেরাও তাদের আগ্রাসনের উপর অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ রাখে।'
জম্মু ও কাশ্মীর (৫)
ভারতের উত্তরপ্রান্তের অশান্ত এই উপত্যকাতেও শিক্ষার আলো পর্যাপ্তভাবে পৌঁছয়নি। উপত্যকার ৩৯.৫২ শতাংশ মানুষ তাই শিক্ষাকে আপন করতে পারেননি।
তেলেঙ্গানা (৪)
অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে বেরিয়ে এসে নবগঠিত তেলেঙ্গানায় অশিক্ষার হার প্রতি একশো জনে ৪০.৪২ জন।
বিহার (৩)
ভারতের এই রাজ্যটি আইন-শৃঙ্খলা সহ বহুকিছুতেই পিছিয়ে রয়েছে। তার সঙ্গে অবশ্যই রয়েছে শিক্ষার বিষয়টি। বিহারে প্রতি শতকরা হিসাবে ৪৩.৮৫ জন।
মধ্যপ্রদেশ (২)
ব্যাপম কাণ্ড নিয়ে সম্প্রতি খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে মধ্যপ্রদেশ। তবে অশিক্ষার ক্ষেত্রেও সারা দেশে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এই রাজ্য। এখানে অশিক্ষিত মানুষের সংখ্য়া প্রতি একশো জনে ৪৪.১৯ জন।
রাজস্থান (১)
ললিত মোদী কাণ্ডে সম্প্রতি বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া। তবে এই রাজ্য নিরক্ষরতার দিক থেকেও সারা ভারতে প্রথম স্থানে রয়েছে। শতকরা ৪৭.৫৮ শতাংশ মানুষের কাছে এই রাজ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছয়নি।
জাতীয় স্তরের আম্পায়ার হিসেবে তিনি তাঁর কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন পুদুচেরিতে অনুর্ধ ১৬ ছেলেদের ম্য়াচ দিয়ে। বিসিসিআইয়ের পরীক্ষা পাস করার পর সেই ম্যাচে ছেলেরা তাঁকে ম্য়াডাম বলে ডাকুক এমনটাই চাইছেন ভারতের প্রথম জাতীয় মহিলা আম্পায়ার।