পারথ টেস্টে ভারতকে দুরমুশ অস্ট্রেলিয়ার, সিরিজ এখন ১-১
কোনও মিরাক্যল ঘটল না। আশঙ্কাকে সত্যি করেই পারথ টেস্টে হার মানল ভারত। আর সেই সঙ্গে টেস্ট সিরিজে সমতা ফেরানোর সুযোগ পেল অস্ট্রেলিয়া।
কোনও মিরাক্যল ঘটল না। আশঙ্কাকে সত্যি করেই পারথ টেস্টে হার মানল ভারত। আর সেই সঙ্গে টেস্ট সিরিজে সমতা ফেরানোর সুযোগ পেল অস্ট্রেলিয়া। ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সিরিজ এখন ১-১। টেস্টের চতুর্থদিনেই ভারত ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল। ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকরা আশা করছিলেন যদি কিছু আশ্চর্য ঘটে যায় তার। কিন্তু, পঞ্চম দিনের খেলা শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে। আর সেই সঙ্গে পারথ টেস্টে ১৪৬ রানে হার মানে ভারত।
মঙ্গলবার খেলা শুরু হতেই ভারত মাত্র ৩৪ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে। এদিন ভারত প্রথমেই যে উইকেটই হারায় তা ছিল ঋষঊ পন্থের। ৬১ বলে ৩০ রানের একটা ইনিংস খেললেও ম্য়াচ বাঁচানোর পক্ষে তা যথেষ্ট ছিল। টিপিক্যাল টেস্ট-ব্যাটসম্য়ানশিপ-এর মনোভাব না থাকলে যে পারথ-এর মতো গতিসম্পন্ন উইকেটে ম্য়াচ বাঁচানো কঠিন তা এই ভারতীয় দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই যে বোঝেন না তা স্পষ্ট। হনুমা বিহারীও নাই-নাই করে অনেকগুলো সুযোগই পেলেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দেখে মনে হচ্ছে না যে তাঁর মধ্যে টেস্ট ব্যাটসম্যান হওয়ার মতো রসদ মজুত আছে। টেস্ট ক্রিকেটে ফ্রন্ট-ফুট যে একটা বড় অস্ত্র তা ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের দেখে মনে হয়নি যে তাঁরা এটা বিশ্বাস করেন। এখন পর্যন্ত যে দুটি টেস্ট খেলা হয়েছে তাতে বিরাট, পূজারা এবং রাহানে ছাড়া কারোর ব্যাটিং-এই কোনও পরিকল্পনার ছাপ মেলেনি। অস্ট্রেলিয়ার মতো পেস ও স্পিন ভারসাম্যে শক্তিশালী বোলিং লাইন-আপ-কে কীভাবে সামলানো যাবে তা নিয়ে কোনও চর্চা হয়েছে বলে মনে হয় না। ম্যাচের ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় মাইকেল ক্লার্ক-ও এই জায়গাটি উল্লেখ করেছেন। তিনি সাফ জানিয়েছেন, অজি দল যখন-ই কোনও বিদেশ সফরে যায় তখন-ই তাঁরা স্থানীয় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ-কে ভাড়া করে। কারণ ওই ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ-বলে দিতে পারেন কোন পিচ কেমন? সেখানে স্থানীয় বোলাররা কেমনভাবে সুবিধা আদায় করে এবং তাদের প্রতিরোধের পন্থাটাও কী হতে পারে। ভারতীয় দল এমন কাউকেই অস্ট্রেলিয়ায় ভাড়া করেনি। পারথ টেস্টে তারই ফল ভুগতে হল বলে মনে করছেন ক্লার্ক।
অ্য়াডিলেড টেস্টে ভারত প্রথম ইনিংস বাঁচিয়েছিল চেতেশ্বর পূজারার শতরানে এবং বোলারদের জন্য। দ্বিতীয় ইনিংসে একটা সমবেত প্রচেষ্টা দেখা দেখা গিয়েছিল। আর বোলাররা দুরন্ত বোলিং করে ভারতকে জয় এনে দিয়েছিল। বিশেষ করে অশ্বিন যথেষ্ট উজ্জ্বল ছিলেন। চোট পেয়ে অশ্বিনের ছিটকে যাওয়াটা পারথ টেস্টে ভারতকে যে ব্যাকফুটে রাখছে তা স্পষ্ট ছিল। তাই ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা আশা করেছিলেন রবীন্দ্র জাদেজার অন্তর্ভুক্তি পাকা। কিন্তু সে জায়গায় দলে আসেন উমেশ যাদব। আর রোহিতের স্থানে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসাবে হনুমা বিহারী। এই জায়গায় রবীন্দ্র জাদেজা হাসতে-হাসতে থাকতে পারতেন বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, জাদেজা অলরাউন্ডার শুধু নন, তাঁর স্পিন বোলিং ভারতীয় দলের ভারসাম্যে একটা শক্তি জোগানোর ক্ষমতা রাখে। অশ্বিনের সঙ্গে ২০১৭-তে ভারতের সেরা টেস্ট স্পিনার জুটির সদস্য ছিলেন জাদেজা।
পারথ টেস্টে প্রথম ইনিংসে বিরাট ও রাহানে ছাড়া ব্য়াটসম্য়ান হিসাবে কেউ সফল নন। তারমধ্যে টেল-এন্ডারদের কাছ থেকেও ব্যাটে সেভাবে কোনও অবদান পাওয়া যাচ্ছে না। ঋদ্ধিমান সাহা ও আর অশ্বিন যেভাবে টেল-এন্ডার ব্য়াটিং-এ একটা ভরসা জুগিয়েছিলেন তা এখন হচ্ছে না। চোটের জন্য দলের বাইরে চলে যাওয়া ঋদ্ধি-র এখনও কামব্যাক ঘটেনি। ঋষভ পন্থের মধ্যে রবি শাস্ত্রী প্রতিভা-র বহর দেখলেও তা টেস্টের পক্ষে কতটা সহায়ক তা নিয়ে বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে। এখনকার টেস্ট অবশ্যই ঠুকঠুক করে রান ওঠে না। কিন্তু, প্রয়োজনে যে ঠুকঠুক করে ব্যাটিং-এর ক্ষমতা দেখাতে হবে, তা টি-২০ স্পেশালিস্ট হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া ঋষভ পন্থরা কতটা দেখা পারবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
বলতে গেলে বক্সিং ডে- টেস্ট-এক আগে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অপরিকল্পনার দর্শন-টা ফের সামনে চলে এল। লড়াকু মেজাজ যেদিন কাজ করবে না সেদিন ম্যাচটা কে বাঁচাবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বিরাট-কে বলতেই হবে- 'আমরা খারাপ খেলেছি, আর বিপক্ষ ভালো খেলেছে বলেই জয় পেয়েছে।' কিন্তু, এই আপ্তবাক্য আর ক'দিন। কেন ভারতের মতো একটা পেশাদার টিমের অপরিকল্পনা নিয়ে বারবার কথা হবে? বক্সিং-ডে টেস্ট অস্ট্রেলিয়ার কাছে মর্যাদার লড়াই। সেখানে বিরাটরা এবার সম্মানের জয় নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে পরাজয়ের গ্লানি-র মধ্যে ফেলতে পারবে? আপাতত এই উত্তরের অপেক্ষায় বক্সিং-ডে-র দিকে তাকিয়ে তামাম ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমী।