টি ২০ বিশ্বকাপ আসছে বছর আবার হবে! ভারতের সামনে ঠাসা ক্রীড়াসূচির চ্য়ালেঞ্জ কি থাকছে?
দীর্ঘ জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকার মানসিক ক্লান্তি গ্রাস করেছে ভারতীয় দলকে। বিশ্রাম দরকার। গতকাল দুবাইয়ে নিউজিল্যান্ডের কাছে জঘন্য পরাজয়ের পর সে কথা বলেছেন ভারতের পেসার জসপ্রীত বুমরাহ। কথাটা অযৌক্তিক নয়। টানা খেলে চলেছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। টি ২০ বিশ্বকাপের আগে আইপিএল যেখানে আশীর্বাদ হওয়ার কথা ছিল, সেটাই দেখা যাচ্ছে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ক্লান্তি যখন ব্যর্থতার কারণ
সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর গরমে ঘনঘন ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের ম্যাচ খেলে ভারতীয় ক্রিকেটাররা যে ক্লান্ত তা পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড ম্যাচে বডি ল্যাঙ্গুয়েজেও বোঝা গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এতদিন ধরে বিশ্বকাপের আগে দুবাইয়ে কাটিয়েও কেন মানিয়ে নিতে পারছে না ভারত? বিরাট কোহলি টস জেতার ভাগ্য নেই ঠিক কথা, তাই বলে ম্যাচ কেন হেরে বসে থাকতে হবে টস হারলেই! মানসিক ক্লান্তির কথা আসছে, জৈব সুরক্ষা বলয়ে থেকে টানা খেললে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিশ্বকাপের কথা ভেবে কেন ক্রিকেটারদের রোটেশন পদ্ধতি মেনে খেলাল না বিসিসিআই? ইংল্যান্ড যেটা করে, অস্ট্রেলিয়াও বিশ্বকাপের আগে তারকাদের তরতাজা রাখতে বিশ্রাম দিয়েছিল। বিরাট কোহলিরা যখন ইংল্যান্ডে তখন শ্রীলঙ্কায় ওয়ান ডে ও টি ২০ সিরিজ খেলতে পাঠানো হল দল। কিন্তু তাতেও যে লাভের লাভ কিছু হয়নি তা বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সেই পরিষ্কার।
চলতি মাসেই আসছে নিউজিল্যান্ড
আগামী বছর অক্টোবর-নভেম্বরে টি ২০ বিশ্বকাপের আসর বসবে অস্ট্রেলিয়ায়। তারপর ২০২৩ সালে ফেব্রুয়ারি-মার্চে ভারতে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ। কিন্তু আইসিসি-র ফিউচার ট্যুরস প্রোগ্রাম অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, ভারতকে সেই ঠাসা ক্রীড়াসূচির চ্য়ালেঞ্জ সামলাতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের কথা ভেবে তারকাদের বিশ্রাম দিয়ে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ড সিরিজ খেলবে ভারত। নতুন সম্ভাব্য কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের তত্ত্বাবধানে। কিন্তু কাকে ছেড়ে কাকে বিশ্রাম দেওয়া হবে? টি ২০ বিশ্বকাপ ফাইনাল ১৪ নভেম্বর। তারপরই ভারত সফরে আসবে কিউয়িরা। ১৭ নভেম্বর জয়পুর, ১৯ নভেম্বর রাঁচি ও ২১ নভেম্বর ইডেনে তিনটি টি ২০ আন্তর্জাতিক। এরপর ভারত-নিউজিল্যান্ড প্রথম টেস্ট ২৯ নভেম্বর থেকে কানপুরে, ৭ ডিসেম্বর থেকে দ্বিতীয় টেস্ট মুম্বইয়ে।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফর
এরপরই ভারত রওনা হবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। নিভৃতবাস কাটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২১ ডিসেম্বর থেকে জোহানেসবার্গে প্রথম টেস্ট, ৩০ ডিসেম্বর থেকে সেঞ্চুরিয়নে দ্বিতীয় টেস্ট, ৭ জানুয়ারি থেকে জোহানেসবার্গে তৃতীয় টেস্ট। ১১ জানুয়ারি পার্লে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক, ১৪ ও ১৬ জানুয়ারি কেপটাউনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় একদিনের আন্তর্জাতিক। ১৯ ও ২১ জানুয়ারি কেপটাউনেই ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম দুটি টি ২০ আন্তর্জাতিক খেলবে। ২৩ ও ২৬ জানুয়ারি পার্লে হবে ওই সিরিজের তৃতীয় ও চতুর্থ টি ২০ আন্তর্জাতিক।
আইপিএলের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কা সিরিজ
দেশে ফিরেই ভারত খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। ফেব্রুয়ারির ৬, ৯ ও ১২ তারিখ তিনটি একদিনের আন্তর্জাতিক যথাক্রমে আমেদাবাদ, জয়পুর ও কলকাতায়। টি ২০ সিরিজের ম্যাচগুলি ১৫, ১৮ ও ২০ ফেব্রুয়ারি যথাক্রমে কটক, বিশাখাপত্তনম ও তিরুঅনন্তপুরমে। এই সিরিজ শেষ হতেই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজ শুরু। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বেঙ্গালুরুতে প্রথম টেস্ট। ৫ মার্চ থেকে দ্বিতীয় টেস্ট মোহালিতে। মার্চের ১৩, ১৫ ও ১৮ তারিখ টি ২০ আন্তর্জাতিক যথাক্রমে চণ্ডীগড়, ধরমশালা ও লখনউয়ে। ভারত-শ্রীলঙ্কা সিরিজ শেষেই আইপিএল। আইপিএলে দল বাড়ছে, ম্যাচ বাড়ছে।
আইপিএল থেকে টি ২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত
আইপিএল শেষ হওয়ার পর জুনের ৯, ১২, ১৪, ১৭ ও ১৯ তারিখ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পাঁচটি টি ২০ আন্তর্জাতিক খেলবে ভারত যথাক্রমে চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, নাগপুর, রাজকোট ও দিল্লিতে। তারপর রওনা হবে ইংল্যান্ড সফরে। ১ জুলাই থেকে এজবাস্টনে সিরিজের পঞ্চম টেস্ট। জুলাইয়ের ৭, ৯ ও ১০ তারিখ সাউদাম্পটন, এজবাস্টন ও ট্রেন্ট ব্রিজে তিনটি টি ২০। ১২, ১৪ ও ১৭ জুলাই তিনটি একদিনের আন্তর্জাতিক যথাক্রমে ওভাল, লর্ডস ও ওল্ড ট্রাফোর্ডে। সেপ্টেম্বরের তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহজুড়ে পাকিস্তানে এশিয়া কাপ হওয়ার কথা। টি ২০ বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপ হবে টি ২০ ফরম্যাটে। অক্টোবর-নভেম্বরে টি ২০ বিশ্বকাপের আসর বসবে অস্ট্রেলিয়ায়।
সূচি চূড়ান্ত নয়
আইসিসি-র এফটিপি অনুযায়ী, ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার ভারত সফরে আসার কথা। চারটি টেস্ট ও তিনটি টি ২০ আন্তর্জাতিক হবে। সেই সিরিজের ক্রীড়াসূচি এখনও চূড়ান্ত নয়, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বেরর মধ্যে এই সিরিজের উইন্ডো রয়েছে। সেপ্টেম্বরেই হতে পারে এই সিরিজ। তারপর টি ২০ বিশ্বকাপ। নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরে গিয়ে ২টি টেস্ট ও তিনটি একদিনের আন্তর্জাতিক খেলার কথা রয়েছে ভারতের। ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ভারতের দেশের মাটিতেই পাঁচটি একদিনের আন্তর্জাতিক খেলার কথা। ফেব্রুয়ারি-মার্চে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ শুরুর আগে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিনটি করে একদিনের আন্তর্জাতিক খেলার কথা রয়েছে ভারতের। যদিও সেগুলি কবে হবে এখনও সেই সূচি প্রকাশিত হয়নি। বিশ্বকাপ শেষ হলে ২০২৩ সালের আইপিএল। চলতি টি ২০ বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর ভারত কীভাবে ঠাসা ক্রীড়াসূচির চ্যালেঞ্জ সামলে ক্রিকেটারদের শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্রিকেটের বড় আসরের জন্য তৈরি রাখার পরিকল্পনা করে সেটাই দেখার।