বিতর্কের মধ্যেই ভারত গেল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে, বিরাটের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের পথে বোর্ড?
তিনটি টেস্ট ও তিনটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের সিরিজ খেলতে ভারতীয় দল রওনা দিল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। তবে বিতর্ককে সঙ্গী করেই। বিরাট কোহলির সাংবাদিক বৈঠকের পর যেভাবে তাঁর সঙ্গে বিসিসিআই, আরও স্পষ্ট করে বললে বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সংঘাতের চিত্রটি সামনে এসেছে তা ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে যথেষ্ট ক্ষতিকর বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারতীয় ক্রিকেটে অচেনা সংস্কৃতি
বিরাট কোহলি সাংবাদিক সম্মেলনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কেই মিথ্যাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। বোর্ড সভাপতিকে কোনও ক্রিকেটার বা কোনও অধিনায়ক এভাবে আক্রমণ করছেন, এমন নজির নেই ভারতীয় ক্রিকেটে। শ্রীলঙ্কা কিংবা পাকিস্তানের ক্রিকেটে এমনটা মাঝেমধ্যে হলেও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সেই পরিবেশ ভারতীয় ক্রিকেটে আমদানি করতে চাইলেন বিরাট। সৌরভ বলেছিলেন, তিনি নিজে বিরাট কোহলিকে টি ২০ অধিনায়কত্ব ছাড়তে বারণ করেছিলেন। কিন্তু বিরাট সেই অনুরোধ রাখেননি। এরপর নির্বাচকরাও সাদা বলের ফরম্যাটে আলাদা অধিনায়ক রাখতে চাননি। তবে বিরাট পাল্টা দাবি করেন, তাঁকে কেউ অধিনায়কত্ব ছাড়ার অনুরোধ করেননি।
নীরব সৌরভ
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নিজে গোটা বিষয় নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, দেশের অন্যতম সফল প্রাক্তন অধিনায়ক এই কাদা ছোড়াছুড়িতে বিসিসিআই সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিরাট যে অবলীলায় এমন অসত্য কথা বলে দিতে পারেন তা তাঁদের ধারণাতেই ছিল না। কিছুটা থিতু হয়ে পাল্টা পদক্ষেপের পথেও হাঁটতে পারে বিসিসিআই। উল্লেখ্য, মোহিন্দর অমরনাথ একবার নির্বাচকদের বাঞ্চ অব জোকার্স বলায় শাস্তির মুখে পড়েছিলেন। তবে বিরাটের মতো কেই সরাসরি বোর্ড সভাপতিকে এর আগে নিশানা করেননি।
পাল্টা পদক্ষেপ?
বিরাটের সাংবাদিক বৈঠক নিয়ে পাল্টা পদক্ষেপের ব্যাপারে কিছুটা হলেও দ্বিধাবিভক্ত বিসিসিআই। কেউ মনে করছেন, ভারতীয় দল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে থাকাকালীন বিরাটের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হলে তা বিশ্ব ক্রিকেটের সামনেও একটা খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে। আবার একাংশের মতে, বোর্ড সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়ার জন্য বিরাটকে শোকজ করা না হলে বোর্ডের আধিকারিকদের সম্মানের পক্ষেও তা যথেষ্টই বেমানান হবে। কোহলি সাংবাদিক বৈঠকে যে সব কথা বলেছেন তাতে তাঁর পদের গরিমাও নষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন বোর্ডের কর্তারা।
সৌরভের দাবির প্রমাণ আছে
বিসিসিআই সূত্রে খবর, বিরাটকে বোর্ডের তরফে যা যা বলা হয়েছিল তার সব কল রেকর্ডস বা ভিডিও কনফারেন্সের ফুটেজ রয়েছে। সেটা সামনে এলে আরও অস্বস্তিতে পড়বেন বিরাট। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিরাট কোহলির সম্পর্ক এমন তলানিতে পৌঁছেছে গতকালের সাংবাদিক বৈঠকের আগে তা বোঝাই যায়নি। বহুবার বিরাটের হয়ে ব্যাট ধরতে দেখা গিয়েছে সৌরভকেও।
অসন্তুষ্ট বোর্ডকর্তারা
অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটার থেকে বোর্ডকর্তাদের মতে, দল নির্বাচনের বিষয়টি পুরোপুরি নির্বাচকদেরই সিদ্ধান্ত। সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের কাছে জবাবদিহি করতে কাউ বাধ্য নন। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের একদিনের দল এখনও ঘোষণাই হয়নি। তবু টেস্ট দল ঘোষণার আগে একদিনের দলের অধিনায়কত্ব থেকে বিরাটকে সরানোর কথা খোদ জানিয়েছেন নির্বাচকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান চেতন শর্মা। ফলে বোর্ড সভাপতি বা নির্বাচকদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর বিরাট-প্রচেষ্টার অস্ত্রগুলি ভোঁতাই প্রতিপন্ন হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলিংকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বোর্ড। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, যিনি তাঁর ব্যক্তিগত অফিসে কেউ কাঙ্ক্ষিত কাজ না করা সত্ত্বেও তাঁকে সরান না, সেখানে বিরাটের অভিযোগ ভিত্তিহীন। দুধ আর জল আলাদা হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবে বিরাটের বক্তব্যে চটেছেন অনেকেই। কেউ মনে করাচ্ছেন, অনিল কুম্বলের সঙ্গে বিরাট কোহলির অভব্যতা আর অসৌজন্যের উদাহরণ। ইট মারায় পাটকেলটি যে খেতেও হবে বিরাটকে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পর বিরাটকে টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে সরানোর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
All buckled up ✌🏻
— BCCI (@BCCI) December 16, 2021
South Africa bound ✈️🇿🇦#TeamIndia #SAvIND pic.twitter.com/fCzyLzIW0s