দ্রাবিড়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই দৃষ্টান্ত স্থাপন ভারতীয় দলের! রাহানের পাশে দাঁড়িয়ে কী বললেন বিরাট?
কানপুরের গ্রিন পার্কে স্পোর্টিং পিচ বানানোর জন্য ভারতের হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড় নিজে ৩৫ হাজার টাকা নগদ উপহার দিয়েছিলেন কিউরেটর-সহ মাঠকর্মীদের। দ্রাবিড়-জমানার নতুন সংস্কৃতিকে কুর্নিশ জানিয়ে হেড কোচের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সমপরিমাণ অর্থ আজ ভারতীয় দল তুলে দিল ওয়াংখেড়ের পিচ কিউরেটর ও মাঠকর্মীদের হাতে। এরই মধ্যে সাংবাদিক বৈঠকে এসে একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়লেন ভারত অধিনায়ক। স্বভাবসিদ্ধ ঢঙেই দিয়েছেন তার জবাবও।
রাহানের খারাপ ফর্ম
অজিঙ্ক রাহানে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। টেস্টে সাম্প্রতিক ব্যাটিং গড় ২০-র নীচে নেমে গিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দলে তাঁর থাকা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। বিরাট অবশ্য রাহানের ফর্ম সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দিলেন সোজা ব্যাটেই। পাশে দাঁড়ালেন নিজের ডেপুটির। বিরাট বলেন, রাহানের ফর্ম বিচার করার আমি কেউ নই, অন্য কেউও পারবেন না। সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটার নিজেই সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারবেন তিনি কোন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। যখন খারাপ সময় যায় তখন রাহানে হোন বা অন্য কোনও ক্রিকেটার, তাঁদের পাশে থাকা উচিত আমাদের। বিশেষ করে যখন সেই ক্রিকেটার দেশের হয়ে আগে ভালো খেলেছেন। আমরা একেবারেই চাই না দলের মধ্যে এমন পরিবেশ থাকুক যেখানে ক্রিকেটাররা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। তাঁদের মনে এমন প্রশ্ন আসে যে, এরপর কী হবে? আমাদের দলে তেমনটা হয় না। দলে কী চলছে সেটা সম্পর্কে আমরা সকলেই ওয়াকিবহাল। বাইরে অনেক কিছু হতে পারে, তবে তার প্রভাব দলের উপর পড়তে দিই না। আমরা প্রত্যেকে একে অপরকে সাপোর্ট করে থাকি। বাইরে কে কী বলল তার ভিত্তিতেও আমরা কোনও সিদ্ধান্ত নিই না।
নিজের ব্যাটিং
২০১৯ সালের পর থেকে বিরাট কোহলির নিজের ব্যাটেও শতরান নেই। তবে সে বিষয়ে চিন্তিত নন ভারত অধিনায়ক। তাঁর কথায়, আমরা সকলেই একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে চলি। যদি আউট হওয়ার ধরন একই হয় তখন সত্যিই বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত। সব সময় সমান যায় না। কিন্তু কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি প্রসেসের উপর আস্থা রাখা বেশি জরুরি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই খারাপ সময় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। বিবর্তনে চোখ রেখে এক ভুল যাতে বারবার না হয় সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। খারাপ সময় কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে নিজের উপর আস্থা রাখাটা সর্বাগ্রে জরুরি বলেই মনে করেন কোহলি।
প্রোটিয়া সফরের মিডল অর্ডার
চেতেশ্বর পূজারা বা অজিঙ্ক রাহানে ফর্মে নেই। সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন শ্রেয়স আইয়ার, শুভমান গিলরা। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে মিডল অর্ডারে কেমন বদল আসবে তা এদিন খোলসা করেননি বিরাট। রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুলও ফিরবেন। ফলে প্রচুর বিকল্প নিয়ে প্রথম একাদশ ঠিক করাই ভারতের বড় চ্যালেঞ্জ। বিরাট বলেন, দলের রণকৌশল বসে আমাদের ঠিক করতে হবে। যে যে জায়গায় খেলার উপযুক্ত সেটাই নিশ্চিত করা হবে। প্রেস কনফারেন্সে বসে এটা বলা সম্ভব নয়। নিজেরা বসে সমষ্টিগতভাবেই সিদ্ধান্ত নেব। এই প্রক্রিয়াটাই আমরা মেনে চলি এবং চলব। সকলেই নিজেদের মতামত দিতে পারেন এবং তার ভিত্তিতেই কোনও সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছাই। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সিরিজ খেলতে যাওয়ার আগে নিজেদের লক্ষ্য স্থির করে ফেলার উপরই জোর দেন বিরাট।
ময়াঙ্কের প্রশংসা
ইংল্যান্ডে প্রথম টেস্টের আগে নেটে অনুশীলনের সময় মাথায় চোট পেয়ে কনকাসনের কারণে ছিটকে গিয়েছিলেন ময়াঙ্ক আগরওয়াল। সেই জায়গায় সুযোগ পেয়ে সফল হন লোকেশ রাহুল। আবার রোহিত ও রাহুল নিউজিল্যান্ড সিরিজে না থাকায় সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছেন কর্নাটকের ওপেনার ময়াঙ্ক। তাঁর প্রশংসা করে বিরাট বলেন, ময়াঙ্ক দারুণভাবে নিজেকে মেলে ধরে অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন। চারিত্রিক দৃঢ়তার প্রমাণ রেখেছেন। ক্রমাগত নিজের ব্যাটিংয়ের উন্নতি ঘটিয়ে চলিয়েছেন ময়াঙ্ক। এই ধরনের পারফরম্যান্স তাঁর চারিত্রিক গঠনের যেমন প্রমাণ দেয়, তেমনই এগিয়ে চলাটাও সহজ করে তোলে। শুধু একজন ব্যাটার হিসেবে নয়, এজন মানুষ হিসেবেও । তিনি আমাদের দলের একজন সম্পদ। অসাধারণ চরিত্র। এই ধরনের ইনিংস তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর পক্ষে সহায়কই হবে।
সিজলিং সিরাজ
টিম সাউদি, কাইল জেমিসনরা যে ওয়াংখেড়ের পিচে নিষ্প্রভ সেখানেই বল হাতে জ্বলে ওঠেন মহম্মদ সিরাজ। কিউয়িদের প্রথম ইনিংসে ভাঙন ধরিয়েছিলেন তিনিই। আরসিবি-র সতীর্থর প্রশংসা করে বিরাট বলেন, সিরাজ অনেক কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন। প্রতিভাবান ক্রিকেটার এবং দারুণ স্কিল রয়েছে। যেভাবে তিনি নিজেকে উজাড় করে দেন মনে হয় যে কোনও মুহূর্তে উইকেট আসবে। যেখানে পিচ কঠিন, উইকেট আসছে না, তখন তিনি উইকেট তুলে নেন যা সত্যিই স্পেশ্যাল। তিনি কন্ডিশনের উপর ভরসা না করে নিজের দক্ষতার নিরিখেই পারফর্ম করে থাকেন। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক থ্রু দিতেও তিনি পারদর্শী। যখন লর্ডসে বল স্যুইং করছিল না, তখনও বল মুভ করিয়ে সিরাজ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন।