টি ২০ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তিনে তিন করতে চায় ভারত, দুই দেশের লড়াইয়ের ফল জানুন
টি ২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ভারতের অন্যতম প্রতিপক্ষ এখন আফগানিস্তান। তিন ম্যাচে দুটিতে জিতে নেট রান রেটের নিরিখে আপাতত ধরাছোঁয়ার বাইরে পৌঁছে গিয়েছে মহম্মদ নবির দল। নিউজিল্যান্ড তিনটি ম্যাচের তিনটিতে জিতলে কেন উইলিয়ামসনরাই পাকিস্তানের সঙ্গে সেমিফাইনালে চলে যাবেন। তবে আশা যতক্ষণ আছে ততক্ষণ ভালো কিছুর প্রত্যাশা করতে পারেন ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীরা। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে শেষ সাক্ষাতে ভারত বড় জয় পায়নি। তার আগে ম্যাচ টাই হয়েছিল। দুটিই ওয়ান ডে-তে। ২০১৮ সালে একমাত্র টেস্টে আফগানিস্তানকে ফলো অন করিয়ে ইনিংসে বিশাল ব্যবধানে জিতেছিল ভারত, পূর্ণশক্তি না নিয়েই। তবে এবার বিরাট কোহলিরা ঘুরে দাঁড়াতে চাইবেন বড় ব্যবধানে আফগান-বধ সেরেই। কাজ কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। টি ২০ বিশ্বকাপ-সহ কোনও ম্যাচেই ভারতকে হারাতে পারেনি আফগানিস্তান।
টি ২০ বিশ্বকাপে প্রথম সাক্ষাত
২০১০ সালের ১ মে গ্রস আইলেটে টি ২০ বিশ্বকাপে গ্রুপ সি-র ম্যাচে ভারত আফগানিস্তানকে হারিয়েছিল ৩১ বল বাকি থাকতে সাত উইকেটে। টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে নৌরজ মঙ্গলের নেতৃত্বাধীন আফগানিস্তান করেছিল ১১৫ রান। ওপেনার নুর আলি জারদান ৪৮ বলে ৫০ রান করেছিলেন। আসগর আফগান করেছিলেন ৩০। বাকিরা কেউ দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। আশিস নেহরা ১৯ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। প্রবীণ কুমার দুটি এবং জাহির খান ও রবীন্দ্র জাদেজা একটি করে উইকেট দখল করেছিলেন। জবাবে খেলতে নেমে ১৪.৫ ওভারে তিন উইকেট হারিয়েই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছিল ভারত। গৌতম গম্ভীর চার রান করে আউট হন। টি ২০ আন্তর্জাতিকে অভিষেক ম্যাচে মুরলী বিজয় ৪৬ বলে ৪৮ রান করেন। সুরেশ রায়না করেন ১৮। যুবরাজ সিং ২২ বলে ২৩ ও মহেন্দ্র সিং ধোনি ৬ বলে ১৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেয়েছিলেন আশিস নেহরা।
টি ২০ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সাক্ষাত
২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর টি ২০ বিশ্বকাপে কলম্বোয় গ্রুপ এ-র ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও আফগানিস্তান। নৌরজ মঙ্গলের নেতৃত্বাধীন আফগানিস্তান টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার পর ভারত ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান তুলেছিল। চারটি চার ও ২টি ছয়ের সাহায্যে ৩৯ বলে ৫০ রান করে বিরাট কোহলি ম্যাচের সেরার পুরস্কার পান। গৌতম গম্ভীর ১০, বীরেন্দ্র শেহওয়াগ ৮, যুবরাজ সিং ১৮, সুরেশ রায়না ৩৮ রান করেছিলেন। অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি ৯ বলে ১৮ ও সাতে নামা রোহিত শর্মা ১ রান করে অপরাজিত ছিলেন। শাপুর জারদান দুটি উইকেট নিয়েছিলেন। দৌলত জারদান, করিম সাদিক ও মহম্মদ নবি ১টি উইকেট পেয়েছিলেন। জবাবে খেলতে নেমে ১৯.৩ ওভারে ১৩৬ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল আফগানিস্তান। যুবরাজ সিং ২৪ রানে তিনটি ও লক্ষ্মীপতি বালাজি ১৯ রানের বিনিময়ে ৩টি উইকেট দখল করেন। রবিচন্দ্রন অশ্বিন ২০ রানের বিনিময়ে ২টি উইকেট পান।
এশিয়া কাপে
২০১৪ সালে ঢাকায় এশিয়া কাপ হয়েছিল ৫০ ওভারের ফরম্যাটে। ৫ মার্চ আফগানিস্তানকে ভারত হারায় ৮ উইকেটে, ১০৬ বল বাকি থাকতে। টস জিতে ভারত ফিল্ডিং নিয়েছিল। ৪৫.২ ওভারে আফগানিস্তান মহম্মদ নবির নেতৃত্বাধীন আফগানিস্তান অল আউট হয়ে গিয়েছিল ১৫৯ রানে। সামিউল্লাহ শিনওয়ারি ৫০, নুর আলি জারদান ৩১ ও মহম্মদ শাহজাদ ২২ রানে আউট হন। রবীন্দ্র জাদেজা ৩০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হন। রবিচন্দ্রন অশ্বিন ৩১ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। মহম্মদ শামি ২টি ও অমিত মিশ্র ১টি উইকেট পান। ভারত ৩২.২ ওভারেই ২ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ জিতে গিয়েছিল। অজিঙ্ক রাহানে ৫৬ ও শিখর ধাওয়ান ৬০ রান করেন। ওপেনিং জুটিতে ওঠে ১২১। রোহিত শর্মা ১৮ ও দীনেশ কার্তিক ২১ রানে অপরাজিত ছিলেন।
দুবাইয়ে টাই
তবে আফগানিস্তান চমক দেখায় ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ। সেবার ভারত-আফগানিস্তান ম্যাচটি হয়েছিল দুবাইয়ে। ২৫ সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপের সুপার ফোরের এই ম্যাচটি টাই হয়। আফগানিস্তানের নেতৃত্বে ছিলেন আসগর আফগান, ভারত খেলেছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বেই। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা এই ম্যাচে ছিলেন না। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ২৫২ রান তুলেছিল আফগানিস্তান। ওপেন করতে নেমে মহম্মদ শাহজাদ ১১৬ বলে ১২৪ রান করেছিলেন। নবি করেন ৬৪। রবীন্দ্র জাদেজা তিনটি ও কুলদীপ যাদব দুটি উইকেট নেন। খলিল আহমেদ, দীপক চাহার ও কেদার যাদবের ঝুলিতে গিয়েছিল একটি করে উইকেট। জবাবে ৪৯.৫ ওভারে ভারত ২৫২ রানে অল আউট হয়ে যায়। অম্বাতি রায়ুডু ও লোকেশ রাহুলের ওপেনিং জুটিতে ১৭.১ ওভারে ১১০ রান ওঠার পরেও। রাহুল ৬০, রায়ুডু ৫৭ ও দীনেশ কার্তিক ৪৪ ছাড়া বাকিরা রান পাননি। জাদেজা ২৫, কেদার যাদব ১৯ ও চাহার ১২ করেন। ৪৯.৫ ওভারে রশিদ খানের বলে আউট হয়েছিলেন জাদেজা। নবি, রশিদ খান ও আফতাব আলম দুটি করে উইকেট নিয়েছিলেন।
শেষ সাক্ষাতে
২০১৯ সালের ২২ জুন সাউদাম্পটনে বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-আফগানিস্তান। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ভারত তুলেছিল ৮ উইকেট হারিয়ে ২২৪। অধিনায়ক বিরাট কোহলি ৬৩ বলে ৬৭ রান করেছিলেন। লোকেশ রাহুল ৩০, রোহিত শর্মা ১ রান করেছিলেন। ৪.২ ওভারে ৭ রানের মাথায় রোহিতকে বোল্ড করেছিলেন মুজিব উর রহমান। বিজয় শঙ্কর ২৯, মহেন্দ্র সিং ধোনি ২৮ রান করেন। কেদার যাদব করেছিলেন ৫২। গুলবদিন নঈব ও মহম্মদ নবি দুটি করে উইকেট নেন। রশিদ খান পেয়েছিলেন ধোনির উইকেট। বিরাট ও রাহুলকে ফেরান নবি। জবাবে ৪৯.৫ ওভারে ২১৩ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল গুলবদিনের আফগানিস্তান। নবি করেন ৫২। মহম্মদ শামি ৪০ রানে ৪ উইকেট নেন। জসপ্রীত বুমরাহ, যুজবেন্দ্র চাহাল ও হার্দিক পাণ্ডিয়া ২টি করে উইকেট দখল করেছিলেন।