ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে সতীর্থদের কাছে প্রত্যাশার কথা জানালেন আগ্রাসী বিরাট কোহলি
ভারত-ইংল্যান্ড ট্রেন্টব্রিজ টেস্ট দিয়ে বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। ময়াঙ্ক আগরওয়াল নেটে মাথায় চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছেন প্রথম টেস্ট থেকে। সবুজ পিচ অপেক্ষায় নটিংহ্যামে। এই পরিস্থিতিতে ভারত কী কম্বিনেশন নিয়ে নামবে তা নিয়ে চলছে জল্পনা। প্রথম একাদশ নিয়ে অন্তত আজ অধিনায়ক বিরাট কোহলি বা সহ অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে কিছু খোলসা না করলেও বিরাট জানিয়ে দিলেন সতীর্থদের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করছেন।
পয়া ট্রেন্টব্রিজে
২০১৮ সালের ইংল্যান্ড সফরে ভারত পাঁচ টেস্টের সিরিজ ১-৪ ব্যবধানে হারলেও ট্রেন্টব্রিজে তৃতীয় টেস্ট জিতেছিল। বিরাট কোহলি ৯৭ ও ১০৩ রান করেছিলেন দুই ইনিংসে। ভারত ২০৩ রানে জেতে। তবে পরের দুটি টেস্ট হেরে সিরিজ পরাজয় এড়াতে পারেনি। এবার বিরাট কোহলিরা ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডকে ৩-১ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে হারিয়ে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠে। ফাইনালে হেরে গেলেও পয়া ট্রেন্টব্রিজেই ফের সিরিজ শুরু করবে বিরাটের ভারত। বিরাট নিজে অবশ্য নিজের মাইলস্টোন বা পরিসংখ্যান নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। তাঁর কথায়, আমার কাছে মাইলস্টোনের কোনও গুরুত্ব নেই। যদি আমি মাইলস্টোনের কথা ভেবে খেলতাম তাহলে আমি আজ যেখানে তার অর্ধেকও অর্জন করতে পারতাম না। শ্রেষ্ঠত্বের সাধনাই যে তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটাও পরিষ্কার করে দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক।
আগ্রাসী বিরাট
স্কাই স্পোর্টসের সঞ্চালক দীনেশ কার্তিক এদিন বিরাটের কাছে জানতে চান ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ জয় বিরাটের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? তার উত্তর দিতে গিয়ে বিরাট বলেন, প্রতিটি টেস্টের প্রতিটি দিনেই কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি রাখলেই সঠিকভাবে শ্রেষ্ঠত্বের সাধনা হয়। পাঁচ টেস্টের সিরিজও তার ব্যতিক্রম নয়। মানসিক চাপ থেকে ওয়ার্কলোড সব কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ইংল্যান্ডে সিরিজ জেতা বিশ্বের অন্য যে কোনও দেশে সিরিজ জয়ের চেয়ে যে আলাদা নয় সেটা স্পষ্ট করে বিরাট বলেন, আমার কেরিয়ারে এইসব মাইলস্টোনের কোনও গুরুত্ব নেই। আমরা মাঠে নামি টেস্ট খেলতে এবং সেই ম্যাচে জেতার লক্ষ্য নিয়েই এগোই। এই সংস্কৃতিই আমাদের দলে আমরা মেনে চলি, তার ফলও সকলের সামনেই। ভারতীয় দলের পক্ষে সিরিজ জয় নিঃসন্দেহে বড় ব্যাপার হতে পারে। আমরা আগেও জিতেছি, আমরা ফের জিততে পারি। কিন্তু জেতার মানসিকতা তৈরি করে যে সংস্কৃতি সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের। যদি হারতেও হয় তাও একই মানসিকতা, একই সংস্কৃতি নিয়েই চলব। আমি চাই, আমরা সকলেই জেতার জন্য ঝাঁপাব। আত্মসমর্পণ করব না। এমনকী তৃতীয় বা চতুর্থ দিনে টেস্ট ম্যাচ বাঁচানোর লড়াই আমার কাছে একেবারেই কাম্য নয়।
ব্যাটিং নিয়ে ভাবনা
ময়াঙ্কের ছিটকে যাওয়ার পর ভারতের ওপেন কে করবেন সেটাই বড় প্রশ্ন। মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য চেতেশ্বর পূজারাও সমালোচিত হয়েছেন। লোকেশ রাহুল দলে রয়েছেন, কিন্তু তাঁকে ভাবা হচ্ছে মিডল অর্ডারের জন্য। পূজারার রোহিতের সঙ্গে ওপেন করার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা সে প্রশ্নের উত্তরে সহ অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে বলেন, পূজারা আমাদের তিন নম্বরের ব্যাটসম্যান। তবে তিনি ওপেন করবেন কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন কোচ রবি শাস্ত্রী ও অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তবে আমরা সকলেই নিজেদের মধ্যে কীভাবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যাটিং করতে হবে সে নিয়ে আলোচনা করছি। এখানে ১৫-২০ মিনিট অন্তর পরিস্থিতি বদলাতে পারে। সেইমতো যে যাঁর মতো নিজেদের শক্তি অনুযায়ী প্রস্তুত থাকছি। প্রত্যেকে কে কীভাবে ভাবছে চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশনের মোকাবিলা করতে সে নিয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়া বা ধারণা স্পষ্ট রাখার উপরই জোর দেওয়া হচ্ছে।
গুরুত্ব লোয়ার অর্ডারে
লোয়ার অর্ডার ব্যাটিং নিয়ে ভারত যে গুরুত্ব দিচ্ছে সেটিও বুঝিয়ে দেন রাহানে। গ্রিন টপে ভারত দুই স্পিনারে যাবে বলে মনে হয় না। সেক্ষেত্রে ব্যাটিংয়ের হাত ভালো বলে শার্দুল ঠাকুরকেও ভাবা হচ্ছে। ব্রিসবেনে সাত উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি হাফ সেঞ্চুরিও করেছিলেন মুম্বইয়ের এই বোলিং অলরাউন্ডার। রাহানে বলেন, বুমরাহ, শামি, উমেশ, ইশান্ত, সিরাজ সকলেই নেটে ভালোই সময় কাটাচ্ছেন, কারণ শেষের দিকে ২০-৩০ রানও খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়।
উইকেটের চিন্তা নেই
রাহানে আরও বলেন, ইংল্যান্ড চেনা পরিবেশে নিজেদের সুবিধা হয় এমন উইকেটই বানাবে। তবে কেমন উইকেট হবে সে নিয়ে আমরা ভাবছি না। টেস্টে প্রতিটি মুহূর্তে এগিয়ে থাকাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই উইকেটের চরিত্র নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই। জৈব সুরক্ষা বলয়ে টানা থাকা চ্যালেঞ্জিং বলে উল্লেখ করে বেন স্টোকসের ক্রিকেট থেকে সাময়িক সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে রাহানে বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটি গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে মনে হচ্ছে ১০০ শতাংশ দেওয়া সম্ভব নয় সেখানে এমন সিদ্ধান্ত সঠিকই। এদিকে, ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে যেতে চলেছে। ফলে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা আইপিএলের বাকি ম্যাচগুলিতে খেলতে পারবেন টি ২০ বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হতে।