২৪ বছর পর নবরূপে লখনৌতে ফিরছে আন্তর্জাতিক ম্যাচ, জেনে নিন এই শহরের ক্রিকেট-ইতিহাস
মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) লখনৌতে দ্বিতীয় টি২০আই ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২৪ বছর পর লখনৌতে ফিরছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। নতুন ইকানা (ভারতরত্ন অটল বিহারী বাজপেয়ী ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম) স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হবে খেলা।
এই শহরে কিন্তু অতীতে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলা হয়েছে। শেষবার আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। তারপর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এই শহরের মানুষ।

লখনৌয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ
এই শহরে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছিল ১৯৫২ সালে। সেই সময় লখনৌতে খেলা হত কেডি সিং বাবু স্টেডিয়ামে। যার আগে নাম ছিল সেন্ট্রাল স্পোর্টস স্টেডিয়াম। ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে এসেছিল ভারত ও পাকিস্তান। সিরিজের প্রথম টেস্টে দিল্লীতে ভারত জিতেছিল। কিন্তু লখনৌয়ের দ্বিতীয় টেস্টে ভারত ১ ইনিংস ও ৪৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত লালা অমরনাথের নেতৃত্বাধীন ভারত ২-১ ফলে সিরিজ জিতে নেয়।

লখনৌয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাস
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেই টেস্টের পর আরও দুটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছে লখনৌতে। কেডি বাবু স্টেডিয়ামে প্রথম ও একমাত্র ওডিআই ম্যাচটি হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। এমআরএফ ওয়ার্ল্ড সিরিজের সেই ম্যাচে অবশ্য ভারত খেলেনি। খেলা হয় শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মধ্যে। ৮৪ রানের ইনিংস খেলে পাকিস্তানকে জিতিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন বর্তমান পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ভারত না থাকায় স্থানীয় দর্শকরা কিন্তু ইমরান, আক্রম, মিয়াদাদের পাকিস্তানকেই সমর্থন করেছিল!
আর শেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয় ১৯৯৪ সালে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৩ টেস্টের প্রথম ম্যাচে ভারত ১ ইনিংস ও ১১৯ রানে জেতে। তরুণ সচিন তেন্ডুলকর (১৪২) ও নভজোৎ সিং সিধু (১২৪) শতরান করেছিলেন। সিধু তাঁর ইনিংসে ৮টি ছয় মারেন। অনিল কুম্বলে মোট ১১টি উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন।

লখনৌ থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিদায়
কে ডি সিং বাবু স্টেডিয়াম একেবারে লখনৌ শহরের কেন্দ্রস্থলে হজরতগঞ্জে অবস্থিত। এর পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে গোমতী নদী। একাধিকবার গোমতীর বন্যায় স্টেডিয়ামটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিকাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে ধীরে ধীরে এই শহর থেকে বিদায় নেয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। তবে মহিলাদের ক্রিকেটের কয়েকটি ম্যাচ ও ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচ হয়েছে।

নয়া স্টেডিয়াম
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন অখিলেশ যাদব শহরটির বাইরে নতুন ক্রিকেট স্টেডিয়াম গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন। এই স্টেডিয়ামে রয়েছে বিশ্বমানের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা। ইকানা স্পোর্টস সিটির একটি অংশ হিসেবে এই স্টেডিয়াম গড়ে উঠেছে লখনৌ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি, ইকানা স্পোর্টস সিটি প্রাইভেট লিমিটেড এবং জিসি কনস্ট্রাকশনস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেডের সম্মিলিত উদ্যোগে। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সের পর বর্তমানে এটিই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্টেডিয়াম। দর্শকআসন রয়েছে ৫০,০০০।

ম্যাচের আগেই নাম বদল
সোমবার (৫ নভেম্বর)-ই প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনে ইকানা স্টেডিয়ামের নাম বদলে রাখা হয়েছে ভারতরত্ন অটল বিহারী বাজপেয়ী ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ১৯৯১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত লখনৌ-এর সাংসদ ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। সরকারের প্রস্তাবিত নাম বদলের আদেশনামায় সাক্ষর করেছেন রাজ্যপাল রাম নায়েক।