তামিলনাড়ুকে উড়িয়ে বিজয় হাজারে ট্রফি জয় হিমাচল প্রদেশের, চর্চায় থাকা VJD মেথড কী জানেন?
২০১৯ সালের পর এবারও বিজয় হাজারে ট্রফির ফাইনালে হারল সাদা বলের ক্রিকেটে দেশের সেরা ধারাবাহিক দল তামিলনাড়ু। তিনশোর উপর রান তাড়া করতে নেমে ভিজেডি পদ্ধতিতে প্রথম খেতাব জয় হিমাচল প্রদেশের। ম্যাচ জেতানো অপরাজিত শতরান হিমাচল প্রদেশের ২৪ বছর বয়সি উইকেটকিপার-ব্যাটার শুভম অরোরার।
|
চ্যাম্পিয়ন হিমাচল
এদিন জয়পুরের সওয়াই মান সিং স্টেডিয়ামে টস জিতে ফিল্ডিং নেয় হিমাচল প্রদেশ। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে দীনেশ কার্তিকের ১১৬, বাবা ইন্দ্রজিতের ৮০ ও শাহরুখ খানের ৪২ রানের দৌলতে ৪৯.৪ ওভারে ৩১৪ রান করে পরপর দু-বার সৈয়দ মুস্তাক আলি টি ২০ জয়ী তামিলনাড়ু। পঙ্কজ জসওয়াল চারটি ও অধিনায়ক ঋষি ধাওয়ান উইকেট নেন। ৩১৫ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে হিসেব কষে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই এগোচ্ছিল হিমাচল প্রদেশ। বিকেল পাঁচটা নাগাদ আলোর অভাবে আর খেলা চালিয়ে যাওয়া যায়নি। ভিজেডি পদ্ধতি অনুযায়ী হিমাচলের জিততে দরকার ছিল ৪৭.৩ ওভারে ২৮৯। সেই সময় তাদের স্কোর ছিল চার উইকেটে ২৯৯। হিমাচল প্রথমবার ট্রফি জিতল ১৩টি চার ও একটি ছয়ের সাহায্যে শুভম অরোরার ১৩১ বলে ১৩৬ ও অমিত কুমারের ৭৪ রানের দৌলতে। ঋষি ধাওয়ান অপরাজিত থাকেন ২৩ বলে ৪২ রান করে।
|
ভিজেডিতে ফলাফল নির্ধারিত
তবে এবারই প্রথম নয়। ২০১৯ সালে বিজয় হাজারে ট্রফিতেও ফাইনালে তামিলনাড়ুকে ভিজেডি মেথডেই ৬০ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কর্নাটক। ভিজেডি (VJD)পদ্ধতির আবিষ্কর্তা হলেন কেরলের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ভি জয়দেবন। এই পদ্ধতির কাজ ডিআরএস পদ্ধতির মতোই। ডিএলএস পদ্ধতির নামকরণ তিন আবিষ্কর্তা ডাকওয়ার্থ, লুইস ও স্টার্নের (Duckworth, Lewis and Sterne) নামে। ভিজেডি প্রথম ব্যবহৃত হয় ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে। তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগের পাশাপাশি চতুর্থ ও পঞ্চম আইপিএলে ব্যবহৃত হয়েছিল। এখন ভারতের ঘরোয়া টুর্নামেন্টেও এই পদ্ধতি মেনেই প্রয়োজনে ম্যাচের ফল, টার্গেট নির্ধারিত হয়ে থাকে। একটা সময় ডিআরএসের বিকল্প হওয়ার দৌড়েও ভালোভাবেই ছিল ভিজেডি পদ্ধতি।
|
সওয়াল করেছিলেন কার্তিক
২০১৮ সালের ২১ এপ্রিল ইডেনে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ম্যাচ চলছিল। সেই ম্যাচে ১৯২ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে কিংসের স্কোর যখন ৮.২ ওভারে বিনা উইকেটে ৯৬, তখন বৃষ্টি নামে। বৃষ্টি থামলে ডিএলএস (DLS) পদ্ধতিতে পরিবর্তিত টার্গেট দাঁড়িয়েছিল ১৩ ওভারে ১২৫ রান। অর্থাৎ ২৯ বলে প্রয়োজন ছিল ২৯। সেই ম্যাচে হারের পর তৎকালীন নাইট অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক বলেছিলেন, ডিএলএস পদ্ধতির হিসেব আমার মতো অনেকের কাছেই বোধগম্য নয়। ২০ ওভারের ম্যাচ হলে কিংসকে ওভারপ্রতি ৮ রান করে নিতে হতো, উইকেট পড়লেন প্রয়োজনীয় রান রেটও বাড়ত। কিন্তু ডিএলএসের হিসেব অনুযায়ী তাদের দরকার হয়ে পড়ে বল প্রতি ১ রানের মতো। তাই ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে অন্তত ভিজেডি মেথড অবলম্বন করা উচিত। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে ডিএলএস পদ্ধতি মানা হয়, অথচ ভিজেডি মেনে চলা হয় ঘরোয়া ক্রিকেটে। এই ভালো পদ্ধতিকে প্রোমোট করা উচিত। মজার ব্যাপার হলো, আজ সেই ভিজেডি মেথডেই কার্তিকদের তামিলনাড়ুকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল হিমাচল প্রদেশ।
আইসিসি মানেনি
২০১২ সালে জয়দেবন আবিষ্কৃত ভিজেডি পদ্ধতি গ্রহণের সম্ভাবনা খারিজ করে দেয় আইসিসি। আইসিসির যুক্তি ছিল ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথডে যেমন কোনও ত্রুটি পায়নি আইসিসির কমিটি, তেমনই ভিজে়ডি পদ্ধতি ডিআরএসের চেয়ে ভালো এমন কোনও যুক্তিগ্রাহ্য প্রমাণ মেলেনি। যদিও আইসিসির দরবারে নিরপেক্ষ শুনানি হয়নি বলে অভিযোগ করেন খোদ জয়দেবন। ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথড হয় ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন মেথড। কিন্তু ভিজেডির আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রবেশ ঘটেনি। যদিও অনেকেরই বিশ্বাস, ডিএলএসের চেয়ে অনেক বেশি নিখুঁত ভিজেডি সিস্টেমই।
|
কোথায় আলাদা ভিজেডি?
সংশ্লিষ্ট দলের আগের ম্যাচের পারফরম্যান্সের খতিয়ান বিশ্লেষণ করে থাকে ভিজেডি। কোনও দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের কথা ধরে ডিএলএসে বিচার্য নয়। ডিএলএস মেথড ধরে নেয় যত ইনিংস এগোবে ততই রান রেট বাড়বে। সেইমতোই এই পদ্ধতিতে টার্গেট স্থির করা হয়। এর ফলে কখনও কখনও ডিএলএস পদ্ধতির টার্গেট অস্বাভিক মনে হয়। তবে ভিজেডি পদ্ধতিতে ইনিংসের বিভিন্ন পর্যায়ের কথা ধরে হিসেব করা হয়। প্রথম ওভারগুলিতে স্কোরিং রেট বেশি থাকবে বলে ধরা হয়, মাঝের ওভারগুলিতে তুলনায় কম রান উঠবে বলে ধরা হয় এবং তা ফের স্লগ ওভারে বাড়বে, এটা মেনেই হিসেব করা হয় ভিজেডি পদ্ধতিতে। ফলে এটা অনেকটাই বিজ্ঞানসম্মত। ১০০-র কমে একরকম স্কোরিং অ্যাপ্রোচ, ১০০ থেকে ২০০ বা ২০০ থেকে ৩০০-র মধ্যে অন্যরকম অ্যাপ্রোচ, এই সব কিছুকেই বিবেচনায় নেওয়া হয় প্রোজেক্টেড টার্গেট স্থির করতে।
|
বাস্তবসম্মত হিসেব
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, টার্গেট যাতে কোনও দলের কাছে অস্বাভাবিক না হয় তা নির্ধারণে দুটি স্কোরিং কার্ভও ধরা হয়। দেখা যায় বিভিন্ন রানের ক্ষেত্রে সব সময়ই ডিএসএলের টার্গেটের থেকে অনেক কম হয় ভিজেডির ক্ষেত্রে। যেমন ২০ ওভারে কোনও দল ১৫০ করলে ডিএসএসে টার্গেট যেখানে ৯৩, সেখানে ভিজেডিতে ৯১। ২০০ রানের ক্ষেত্রে ডিএলএসের ১২৪, ভিজেডির ক্ষেত্রে ১১৮, ২৫০ হলে ডিএলএসে ১৫৪, ভিজেডিতে ১৪২, ৩০০-র ক্ষেত্রে দুই মেথডেই ১৬৩। প্রথম দল সাড়ে তিনশো করলে ডিএলএসে প্রোজেক্টেড টার্গেট ১৭৪, ভিজেডিতে ১৮২।
(ছবি- বিসিসিআই ডোমেস্টিক টুইটার)