ধোনি-বিরাটদের পিছনে ফেলে ক্যাপ্টেন হার্দিকের নয়া নজির, দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্কে সতীর্থদের জন্য খুললেন দরজা
নেপিয়ারে ভারত-নিউজিল্যান্ড টি ২০ সিরিজের বৃষ্টিবিঘ্নিত তৃতীয় তথা শেষ ম্য়াচটি ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথডে টাই হয়ে গিয়েছে। একদিনের আন্তর্জাতিকে এমন তিনটি নজির থাকলেও টেস্ট খেলিয়ে দেশগুলির মধ্যে টি ২০ আন্তর্জাতিকে এমন ঘটনা এই প্রথম। ভারত কিউয়িদের বিরুদ্ধে টি ২০ সিরিজ জিতল ১-০ ব্যবধানে। তারই মধ্যে নয়া নজিরও গড়ে ফেললেন হার্দিক পাণ্ডিয়া।
|
হার্দিকের নয়া নজির
ভারতের টি ২০ অধিনায়ক হিসেবে মহেন্দ্র সিং ধোনি, বিরাট কোহলি, এমনকী রোহিত শর্মাও যা পারেননি তা-ই করে দেখালেন হার্দিক। ইতিমধ্যেই তাঁকে ভারতের পরবর্তী টি ২০ অধিনায়ক পাকাপাকিভাবে করার দাবি জোরালো হয়েছে। গত জুনে আয়ারল্যান্ড সফরে ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব প্রথম পান হার্দিক। ডাবলিনে সেই সিরিজে আয়ারল্যান্ডকে দুটি টি ২০ আন্তর্জাতিকে যথাক্রমে ৭ উইকেট ও ৪ রানে হারায় হার্দিকের ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিনি একটি টি ২০ আন্তর্জাতিকে নেতৃত্ব দেন। সেটিতেও ভারত জিতেছিল ৮৮ রানে। নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়েলিংটনে বৃষ্টির কারণে প্রথম ম্যাচে টস পর্যন্ত হয়নি। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে দ্বিতীয় টি ২০ আন্তর্জাতিক ভারত জেতে ৬৫ রানে। এরপর আজকের ম্য়াচ টাই। দেশকে প্রথম পাঁচটি ম্যাচে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে অপরাজেয় থাকার নজির হার্দিক ছাড়া আর কারও নেই। ধোনি প্রথম পাঁচটি টি ২০ আন্তর্জাতিকে অধিনায়ক হিসেবে জিতেছিলেন ২টিতে, বিরাট কোহলিও একটি পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছিলেন। রোহিত শর্মাও তাই। ফলে প্রথম ভারত অধিনায়ক হিসেবে প্রথম পাঁচটি ম্যাচে অপরাজেয় থাকার নজির গড়লেন হার্দিক।
|
উপভোগ করছেন অধিনায়কত্ব
হার্দিক পাণ্ডিয়া নিজে ক্যাপ্টেন্সির ইনিংস উপভোগ করছেন। সুনীল গাভাসকর থেকে রবি শাস্ত্রীর মতো প্রাক্তনরা যখন তাঁকে টি ২০ অধিনায়ক করার পক্ষে সওয়াল করছেন তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে হার্দিক বলেন, মানুষ এভাবে বললে ভালো লাগে। তবে যতক্ষণ না আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু ঘোষণা হচ্ছে কিছু বলা ঠিক নয়। তবে আমি একটা ম্যাচ বা একটা সিরিজে যদি নেতৃত্ব দিই, আমার মতো করেই অধিনায়কত্ব করব ম্যাচ সম্পর্কে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী। যখনই কোনও দায়িত্ব দেওয়া হবে, আমি যে ব্র্যান্ডের ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচিত সেটাই খেলব। দলগতভাবেও সেই ব্র্যান্ডের ক্রিকেটই দেখা যাবে।
|
ক্ষোভ সামাল দিতে দরজা খোলা
শুভমান গিলের টি ২০ আন্তর্জাতিক অভিষেক হলো না নিউজিল্যান্ড সফরে। তৃতীয় ম্যাচে সঞ্জু স্যামসন ও উমরান মালিককেও সুযোগ দেয়নি ভারত। সঞ্জুর প্রতি বঞ্চনার অভিযোগে সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া। দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্কের মাঝেই হার্দিক ঢাল হাতে দাঁড়িয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সকলেই নিজেদের মেলে ধরার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ পাবেন। হার্দিকের কথায়, এই সিরিজ তিন ম্যাচের না হয়ে বড় সিরিজ হলে তাঁরা সুযোগ পেতে পারতেন। কিন্তু ছোট সিরিজে ঘনঘন পরিবর্তন করে কাউকে বাদ দিয়ে দেওয়ায় আমি বিশ্বাস করি না। হার্দিক মেনে নিয়েছেন বেঞ্চে বসে থাকতে কারও ভালো লাগে না। তবে যেখানে কোনও ক্রিকেটার নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন না সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন নয় বলেই মত পাণ্ডিয়ার। কম্বিনেশন অনুযায়ী দল নামানো হয়। তাতে কাউকে বাইরে থাকতে হলে সতীর্থদের পারস্পরিক সম্পর্কে তা প্রভাব ফেলে না বলেই জানিয়েছেন হার্দিক। তিনি বলেন, আমি সতীর্থদের অধিনায়ক। যদি কারও মনে কোনও প্রশ্ন জাগে তাহলে তা নিয়ে আলোচনার জন্য আমার দরজা সব সময়ই খোলা। কোচের সঙ্গে চাইলেও তাঁরা কথা বলতে পারেন। আমি সতীর্থদের অনুভূতিটা বুঝি। সঞ্জুর বিষয়টিও দুর্ভাগ্যজনক। তাঁকে স্ট্র্যাটেজিক কারণেই নিউজিল্যান্ডে খেলানো যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে বেঞ্চে বসে থাকার সান্ত্বনা কিছু হয় না। কিন্তু ভারতীয় দলে যে সুস্থ পরিবেশ বজায় রয়েছে সেটা দেখে খুশি হার্দিক।
|
ষষ্ঠ বোলারের ভূমিকায় খুশি
নিউজিল্যান্ডে টি ২০ সিরিজে হার্দিক বোলিং করেননি। তার কারণ হিসেবে ভারত অধিনায়ক বলেন, এই সফরে দলের পক্ষে যেটা দেখা দরকার ছিল সেটাই করেছি। ষষ্ঠ বোলিংয়ের বিকল্প চিহ্নিত করা আমাদের লক্ষ্য ছিল। দীপক হুডা সেই ভূমিকা পালন করেছেন। আমি বোলিং করলে সেটা হতো না। আজ আমাদের দলে পাঁচজন ব্যাটার ছিলেন। আমি চেয়েছিলাম প্রত্যেকেই যেন অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে খেলেন। একজন ব্যাটার কম নিয়েও আগ্রাসী ব্যাটিং করতে আলাদা ধরনের আত্মবিশ্বাস থাকাটা জরুরি। বোলারদের ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য। এই পিচে যেমনটা চেয়েছিলাম ঠিক তেমনই বল করেছেন সিরাজ। টি ২০-তে কোনও বোলার মার খেতেই পারেন। ভালো দিনের মতো খারাপ দিনও থাকবে। কিন্তু রক্ষণাত্মক হয়ে কেউ বেশি মার খেলে সেটা ট্রমা হয়ে যাবে। ফলে আগ্রাসী হলে হয়তো ২০০ রান উঠবে কোনওদিন, কিন্তু আজকের মতো ৩০ রানে ৮ উইকেট তুলে নেওয়াও সম্ভব হবে।