হার্দিক পাণ্ডিয়া প্রথম ভারতীয় হিসেবে গড়লেন অনন্য নজির, প্রাধান্য দিতে চান কোন বিষয়কে?
হার্দিক পাণ্ডিয়া দুরন্ত ছন্দে রয়েছেন। হার্দিক যেভাবে আইপিএল থেকে ক্রমাগত উন্নতি করে চলেছেন টি ২০ বিশ্বকাপের আগে তা স্বস্তিতে রাখছে ভারতীয় দলকে। রোহিত শর্মা হার্দিকের বোলিংয়ের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। হার্দিকের নেতৃত্বে আয়ারল্যান্ডে ভারত টি ২০ সিরিজ জিতেছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুরন্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের সুবাদে হার্দিক হয়েছেন ম্যাচের সেরা। সেই সঙ্গে গড়েছেন অনন্য নজির।
হার্দিকের নজির
হার্দিক পাণ্ডিয়া গতকাল পিছনে ফেলে দিয়েছেন যুবরাজ সিংকে। ২০০৯-১০ মরশুমে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি ২০ আন্তর্জাতিকে যুবি অর্ধশতরানের পাশাপাশি তিন উইকেট নিয়েছিলেন। গতকাল হার্দিক ৪ ওভারে ৩৩ রান খরচ করে ইংল্যান্ডের চার ব্যাটারকে আউট করেছেন। তার আগে টি ২০ আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে প্রথম অর্ধশতরানটিও তিনি পেয়েছেন সাউদাম্পটনে। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশের চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে এই নজির গড়লেন তিনি। সাউদাম্পটনেই ২০১৮ সালে শেষবার টেস্ট খেলেছেন হার্দিক। তবে আপাতত টেস্ট দলে কামব্যাকের ভাবনা তাঁর মাথায় নেই। সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, এখন সাদা বলের ক্রিকেটের মরশুম চলছে, তাতেই ফোকাস রাখছি। দেশের হয়ে সাদা বলে যত বেশি সংখ্যক ম্যাচ খেলাই আমার পক্ষে ভালো। টেস্টে সুযোগ নিশ্চিতভাবেই ঈসবে। কোন ফরম্যাটে কখন খেলব তা সময় বলবে। এখন যে ম্যাচেই সুযোগ পাব নিজের ১০০ শতাংশ উজাড় করে দেব। ফলে ভবিষ্যতে কী খেলব বা খেলব না সেটা নিয়ে ভাবছি না। বর্তমানে আমার লক্ষ্য, দেশের হয়ে বেশি সংখ্যক ম্যাচ খেলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখা।
পাণ্ডিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি
হার্দিক নিজের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, কঠোর পরিশ্রমের সুফল পাচ্ছি। যদি ভালো লক্ষ্য নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করা যায় তাহলে তার পুরস্কার মেলে বলেই আমি বিশ্বাস করি। কোনওদিন ফল আমার পক্ষে যাবে, কোনওদিন যাবে না। কিন্তু আমার মানসিকতা এমনই যে, সাফল্যেও খুব উচ্ছ্বসিত হই না, খারাপ সময়েও ভেঙে পড়ি না। নিরপেক্ষভাবে জীবন কাটাতে শিখেছি। আজকের দিনটা ভালো, কাল খারাপ হতেই পারে, কিন্তু জীবন থেমে থাকবে না। হাসিমুখে তাই কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাওয়াটাই মূল কথা। আমার জীবনে সব সময় স্বচ্ছতা বজায় রেখে চলি। যখন মনে করি সব কিছু ঠিক চলছে না তখন ঠাণ্ডা মাথায় কোথায় সমস্যা হচ্ছে তা চিহ্নিত করে সংশোধন করি। কোনও কিছুতেই তাড়াহুড়ো করতে পছন্দ করি না। ব্যাটিং, বোলিংয়ের বাইরে সাধারণ জীবনযাপনেও স্বচ্ছতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার সাপোর্ট সিস্টেমও খুব শক্তিশালী। আমার কাছে পরিবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ইতিবাচক ভূমিকা নেয়। কখনও দ্বিধায় পড়লে দাদা ক্রুণাল, বৌদি, স্ত্রী নাতাশাকে পাশে পাই। আমাদের পারস্পরিক বন্ধন খুবই সুদৃঢ়।
দেশকে জিতিয়ে খুশি
হার্দিক আরও বলেন, দলের প্রয়োজনে পারফর্ম করতে সব সময়ই ভালো লাগে। পরিস্থিতি অনুযায়ী দল কী চাইছে সেই অনুযায়ী খেলাই আমার লক্ষ্য থাকে। সাউদাম্পটনে আমাদের দ্রুত কিছু উইকেট পড়েছিল। ফলে অর্ধশতরানটি করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মোমেন্টাম ধরে রেখে সম্মানজনক স্কোরে দলকে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলাম। আমি ব্যাটিং ও বোলিংয়ে সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকি। বোলিং হিসেবে নিজের স্পেলটিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন হার্দিক। দুই ওভারের মধ্যে তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে বোলার হার্দিক ইংল্যান্ডের কোমর ভেঙে দেন। একইসঙ্গে হার্দিক প্রশংসা করেছেন ভুবনেশ্বর কুমারের। দুরন্ত ফর্মে থাকা জস বাটলার গোল্ডেন ডাক নিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন ভুবির দুরন্ত ইনস্যুইঙ্গারে বোল্ড হয়ে। হার্দিক বলেন, এটা খুবই স্পেশ্যাল ডেলিভারি ছিল। ইনস্যুইং বোলিংয়ের জন্যই ফিল্ডিং সাজানো হয়েছিল। মিড উইকেটে কেউ ছিলেন না। এরপর ভুবি যেটা করে দেখালেন সেটায় তিনি অভ্যস্ত। যে ডেলিভারিতে তিনি বাটলারকে ফেরালেন তা অনবদ্য ছিল।
|
শক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চ
কাল দ্বিতীয় টি ২০ আন্তর্জাতিক জিতলেই সিরিজ পকেটে পুরে ফেলবে ভারত। একাদশে ফিরছেন বিরাট কোহলি, ঋষভ পন্থ, জসপ্রীত বুমরাহদের মতো তারকারা। তাঁরা এজবাস্টন টেস্টের দলে ছিলেন। প্রথম একাদশে নিয়মিত পাঁচজনকে ছাড়াই ভারত যে জয় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ছিনিয়ে নিয়েছে তা গোটা শিবিরের আত্মবিশ্বাস যে বাড়িয়ে দিয়েছে তা বোঝা গিয়েছে হার্দিকের কথাতেই। তিনি বলেন, এই জয় আমাদের দলগত আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। পাঁচজন ক্রিকেটার দলে যোগ দিলে আমাদের শক্তি বাড়বে। নতুন যাঁরা সুযোগ পেয়েছেন তাঁরাও দারুণভাবে নিজেদের মেলে ধরেছেন। আমাদের দলের বেঞ্চের শক্তিও কতটা বেড়েছে তা স্পষ্ট। খেলার সংস্কৃতিতেও এসেছে পরিবর্তন।