হরভজনকে নিয়ে কী বললেন সৌরভ? ভাজ্জির পরবর্তী পদক্ষেপের ইঙ্গিত স্ত্রী গীতার
ক্রিকেটকে গুডবাই জানিয়েছেন হরভজন সিং। তারপরই তিনি জানিয়েছেন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের গাইডেন্স ছাড়া আজ এ জায়গায় পৌঁছাতেই পারতেন না। ম্যাচ গড়াপেটা কেলেঙ্কারির কলঙ্ক থেকে তুলে এনে ভারতীয় ক্রিকেটকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিতে সৌরভ গড়েছিলেন টিম ইন্ডিয়া। তারই গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের অবসরে আবেগাপ্লুত প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক তথা বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। হরভজনকে নিয়ে স্মৃতিচারণের পাশাপাশি আগামী দিনের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড়, টেস্ট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও চেতেশ্বর পূজারা।
A legend and one of the finest to have ever played the game! 🙌#TeamIndia congratulate @harbhajan_singh on a glorious career 👏👏@imVkohli | @cheteshwar1 pic.twitter.com/iefNrA4r2M
— BCCI (@BCCI) December 24, 2021
দাদার কথা
হরভজনকে স্পিন জগতের অ্যাবসলিউট মাস্টার হিসেবে অভিহিত করে তাঁর সাহসের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন সৌরভ। হরভজনের সঙ্গে খেলতে পারা তাঁর কাছেও খুবই গৌরবের বলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন মহারাজ।বিসিসিআইয়ের তরফে দেওয়া বিবৃতিতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, হরভজনকে তাঁর অসাধারণ কেরিয়ারের জন্য অভিনন্দন। জীবনে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা তিনি করেছেন। কিন্তু কখনও হাল ছেড়ে দেননি। অনেক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে তিনি এগিয়ে গিয়েছেন, এমনকী ব্যর্থতাকেও সরিয়ে রেখে। তাঁর সাফল্যের খিদে আমাকে অনুপ্রাণিত করে। তাঁর মূল শক্তিই হলো প্রভূত সাহস। খুবই আবেগপ্রবণ একজন ক্রিকেটার, নিজের আত্মবিশ্বাসে ভর করেই লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। আরও যে বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, ড্রেসিংরুমের পরিবেশ তিনি হাল্কা রাখতেন, যা অত্যন্ত জরুরি। ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিন টেস্টের সিরিজেই তিনি প্রথম সব ম্যাচ খেলেন। দেখেছিলাম একজন বোলার কীভাবে একা একটা সিরিজ জেতাতে পারেন। একজন অধিনায়কের কাছে এটা দারুণ প্রাপ্তি। ডিপ পজিশনে ফিল্ডার রাখা পছন্দ করতেন না। ভাজ্জি একজন অসাধারণ ম্যাচ উইনার। তিনি যা অর্জন করেছেন তাতে তিনি গৌরবান্বিতই হবেন। নতুন ইনিংস আরও উপভোগ্য ও উত্তেজকই হবে।
|
আবেগঘন টুইট সহধর্মিণীর
হরভজনের স্ত্রী গীতা বাসরাও একটি আবেগঘন টুইট করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, "আমি জানি এই মুহূর্তটার জন্য তুমি কতদিন ধরে অপেক্ষা করছিলে। মানসিকভাবে তুমি অনেক আগেই অবসর নিয়ে ফেলেছিলে। কিন্তু সরকারিভাবে ঘোষণার জন্য একটি বিশেষ মুহূর্তের জন্য তুমি অপেক্ষা করছিলে। তোমার জন্য, তুমি কেরিয়ারে যা অর্জন করেছো, সেই সবের জন্য আমরা গর্বিত। আগামী যাত্রাপথেও অনেক ভালো কিছুও তোমার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে। বিভিন্ন মজার মুহূর্তগুলি যেমন মনে থাকবে তেমনই চাপ, উদ্বেগের মুহূর্তগুলিও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।"
তৃপ্তির অনুভূতি
খেলার সময় নানা কুসংস্কার, অন্তহীন প্রার্থনার কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি গীতা জানিয়েছেন, হরভজনের খেলা দেখতে গিয়ে ক্রিকেটের অনেক কিছু শিখতেও পেরেছেন, ভাগ করে নিয়েছেন জয় ও রেকর্ড গড়ার আনন্দ। যেভাবে ২৩ বছর ধরে ক্রিকেট খেলেছেন সেই নজিরেরও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন গীতা। তিনি লিখেছেন, হরভজনের জীবনের উত্থান-পতনের সাক্ষী থাকতে পেরে তিনি যেমন নিজেকে ভাগ্যবতী বলে মনে করেন, তেমনই তাঁদের কন্যা হিনায়াও যে বাবার খেলা মাঠে বসে দেখতে পেরেছে সেটাও তৃপ্তি দিচ্ছে গীতাকে।
পরিকল্পনামাফিক নয়
হরভজন এদিন নিজে জানিয়েছিলেন, দেশের হয়ে অবসর নেওয়ার সুযোগ পেলে তিনি আরও বেশি তৃপ্তি পেতেন। তবে এ জন্য তাঁর কোনও খেদ নেই। গীতা বাসরার আবেগঘন টুইটেও উঠে এসেছে সেই কথা। তাঁর কথায়, আমি জানি অবসরের যে পরিকল্পনা ছিল তা হলো না। কিন্তু ভাগ্যের লিখন আমাদের কারও হাতে নেই। তবু যে প্রত্যয়, সংকল্প, আবেগ, সেরাটা উজাড় করে দেওয়ার প্রচেষ্টার সঙ্গে হরভজন ক্রিকেট খেলেছেন তাতে মাথা উঁচু করেই যে তিনি ক্রিকেটকে গুডবাই জানালেন সে ব্যাপারে সংশয় নেই গীতার। হরভজনের 'দুসরা' চ্যাপ্টারের জন্য শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন গীতা।
ভাজ্জির ভবিষ্যৎ
পাঞ্জাবে নির্বাচন আসন্ন। সম্প্রতি হরভজন সিংয়ের সঙ্গে নভজ্যোৎ সিং সিধুর ছবি নিয়ে জল্পনা জোরালো হয়। হরভজন নিজে অবশ্য রাজনীতিতে নামার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। বরং সব দিক খতিয়ে দেখে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাই বলেছেন। ভাজ্জির সহধর্মিণী অবশ্য একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বছর পাঁচেক ধরে হরভজন ধারাভাষ্য দিয়ে আসছেন। বিদেশেও কোনও ক্রিকেট লিগে খেলতে পারেন। তবে আইপিএল বা দেশের হয়ে খেলতে পারবেন না ভেবে কিছুটা খারাপ লাগা থাকছেই। আইপিএলে কোনওভাবে যুক্ত যেমন হতে পারেন, তেমনই নতুন ব্যবসাও শুরু করতে পারেন ভবিষ্যতে। তবে সবটা হরভজনেরই সিদ্ধান্ত। জীবনের একটা অধ্যায় শেষ হলে আরেকটা শুরু হয়।
গীতার পছন্দ
চলতি বছর হরভজন-গীতার কোলে এসেছে পুত্রসন্তান। হরভজন বলেছেন, পরিবারকে বেশি সময় দিতে না পারার কথা আর শুনতে হবে না। পরিবারকে সময় দেব, সন্তানদের বেড়ে ওঠার সময় তাদের পাশে থাকতে চাই। গীতাকেও বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভাজ্জি। গীতা বসরা বলেছেন, ২০০৮ সাল থেকে আমরা ডেটিং করছি। কিন্তু তখন ভারতীয় দলের সঙ্গে বান্ধবী বা স্ত্রীদের নিয়ে ঘোরার অনুমতি থাকত না। পরে আইপিএলের সময় হরভজনের সঙ্গে টিমের সঙ্গে থেকেছি। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে মোহালিতে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচই হরভজনের কেরিয়ারে তাঁর সবচেয়ে পছন্দের বলে জানিয়েছেন গীতা।