বিতর্কিত মাঙ্কিগেট কাণ্ড নিয়ে মুখ খুললেন হরভজন
বিতর্কিত মাঙ্কিগেট কাণ্ড নিয়ে মুখ খুললেন হরভজন
ভারতের জার্সি গায়ে ১৯৯৮ সালে যে পথ চলা শুরু করেছিলেন সেই পথের শেষ প্রান্তে এসে উপস্থিত হয়েছে হরভজন সিং। শুক্রবার দীর্ঘ ২৩ বছরের কেরিয়ারে ইতি টেনে ক্রিকেট'কে বিদায় জানিয়েছেন হরভজন সিং। ভারতের জার্সিতে শেষ পাঁচ বছরে একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। পরিকল্পনা ছিল শেষ ম্যাচটা দেশের হয়েই খেলার। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। ২০১৬ সালে শেষ বার টি-২০ ম্যাচে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন ভাজ্জি।
১০৩টি টেস্টে ৪১৭ উইকেট ঝুলিতে নিয়ে অবসর ঘোষণা করেছেন হরভজন। ২৩৬টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে দেশের জার্সিতে প্রতিনিধিত্ব করে তিনি সংগ্রহ করেছেন ২৬৯ উইকেট। ভারতের হয়ে ২৮টি আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচে ২৫টি উইকেট রয়েছে তাঁর। ভারতের হয়ে তাঁর সাফল্যের ভাণ্ডারও পরিপূর্ণ ২০০৭ আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপ এবং ২০১১ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন হরভজন।
নিজের সেরা সময়ে একার কাঁধে দেশকে বহু ম্যাচে এবং সিরিজে জয় এনে দেওয়া হরভজনের কেরিয়ারে একটা দাগ থেকেই গিয়েছে। বিতর্কিত 'মাঙ্গিগেট' কাণ্ডের উল্লেখ হলেই উঠে আসে তাঁর নাম। ২০০৭-০৮ সালে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরে এক মারাত্মক বিতর্কে অভিযোগে জড়িয়ে পড়েছিলেন হরভজন, যা পরে 'মাঙ্কিগেট' হিসেবে পরিচিত পায়।
ওই সিরিজে পার্থ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার তৎকালীন অধিনায়ক রিকি পন্টিং অনফিল্ড আম্পায় স্টিভ বাকনার এবং মার্ক বেনসনের কাছে অভিযোগ করেন অস্ট্রেলিয়ার অল-রাউন্ডার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস'কে 'মাঙ্কি' (হনুমান) বলে ডেকেছেন হরভজন। এই ঘটনার কথা ম্যাচ রেফারি মাইক প্রোক্টর'কে জানান দুই আম্পায়ার। পুরো ঘটনার বিচার করে তিনি হরভজন'কে দোষী সাব্যস্ত করে তিন ম্যাচের জন্য নির্বাসিত করেন।
পুরো ঘটনা'কে কেন্দ্র করে চরম সীমায় পৌঁছয় সফররত ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া'র মধ্যে তৈরি হওয়া অপ্রত্যাশিত বিতর্ক। ম্যাচ রেফারির এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। টিম ম্যানেজমেন্ট স্পষ্ট দাবি ছিল হরভজন কোনও রকম বর্ণবৈষম্য মূলক কথা বলেনি। বরং তাঁর বলা হিন্দি কোনও শব্দ বুঝতে ভুল করেছেন সাইমন্ডস।
যদিও তাঁ শেষ পর্যন্ত বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ থেকে তাঁকে মুক্ত ঘোষণা করেন বিচারপতি জন হানসেন। হরভজন যে বর্ণবৈষম্যমূলক কোনও কথা বসলেছেন বা কোনও আচরণ করেছেন তার কোনও প্রমাণ পাওয়া না যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন তিনি। বর্ণবৈষম্যের পরিবর্তে ২.৮ ধারায় (অপমানজনক কথা যা বর্ষবৈষম্য নয়), দোষী সাব্যস্ত হন হরভজন এবং তাঁর ম্যাচ ফি'র পঞ্চাশ শতাংশ কেটে নেওয়া হয়।
সংবাদ সংস্থআ পিটিআই-কে দেওয়া এই এক সাক্ষাৎকারে এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, "কেউই আমার থেকে সত্যিটা জানার চেষ্টা করেনি। এই পুরো ঘটনায় আমার মতামতকে কেউ তোয়াক্কাই করেনি। সেই সময়ে আমার মনের মধ্যে কী হচ্ছিল তার পরোয়া করেনি কেউ।
আমি কখনওই এই বিষয়ে খুব বেশি কিছু বলিনি তবে আমার আসন্ন আত্মজীবনি'তে পুরো ঘটনার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে মানুষ। আমার যেই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, সেই একই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেন আর কাউকে যেতে না হয়।" ওই বিতর্কের মধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়ে পার্থ টেস্টে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল ভারত। কিন্তু সিরিজটি টিম ইন্ডিয়া হেরে গিয়েছিল ২-১ ব্যবধানে।