দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে বিরাট-বিসিসিআই দুই মেরুতে! নেটিজেনদের নিশানায় সৌরভ
ভারতীয় ক্রিকেটে নজিরবিহীন ঘটনা। বিসিসিআই সভাপতিকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করতে চাইছেন দেশের টেস্ট অধিনায়ক। পাল্টা তাঁর দাবি ওড়াচ্ছে বিসিসিআই। তাও মেঘের আড়াল থেকে। কেন না, বিসিসিআইয়ের সূত্রকে উদ্ধৃত করে যেভাবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নানা কথা ভেসে বেড়াচ্ছে তাতে যেমন নেটাগরিকদের ক্ষোভ বাড়ছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতি, তেমনই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে বিসিসিআই ইচ্ছা করলেই এই পরিস্থিতি এড়াতে পারত বলে মনে করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা।
বিরাট-সৌরভ সংঘাত
আজ সকাল অবধি সংবাদমাধ্যম থেকে ভারতীয় ক্রিকেট মহল- সর্বত্র চর্চায় ছিল বিরাট কোহলির সঙ্গে রোহিত শর্মার পারস্পরিক সম্পর্ক। বেলা ১টায় বিরাট কোহলি সাংবাদিক বৈঠক শুরুর পরই চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় বিরাট কোহলির সঙ্গে বিসিসিআইয়ের সংঘাত। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, টি ২০ অধিনায়কত্ব ছাড়ার আগে বিরাটকে তিনি বারণ করেছিলেন। যদিও বিরাট এদিন পাল্টা জানান, কেউই তাঁকে অধিনায়কত্ব ছাড়তে বারণ করেননি। একদিনের অধিনায়কত্ব হারানোর বিষয়টি মন থেকে মানতে না পারলেও বিরাট আরও বলেন, আমার মনে হয় আইসিসি ইভেন্টে জিততে না পারার জন্যই তাঁকে সরানো হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে যা সঠিক পদক্ষেপ। তবে ৮ ডিসেম্বরের আগে তিনি বিষয়টি জানতেই পারেননি। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দল ঘোষণার দেড় ঘণ্টা আগে টেস্ট দল নিয়ে আলোচনার পর ফোন রাখার আগে তাঁকে জানানো হয় ওয়ান ডে ক্যাপ্টেন্সি থেকে সরানোর কথা। ওকে, ফাইন বলে ফোন রেখে দেন বিরাট।
কে ঠিক?
বিরাটের বিবৃতিতে সৌরভের দাবির সত্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। তবে এই প্রতিবেদন লেখা অবধি না বিসিসিআই, না নির্বাচকমণ্ডলীর কেউ এ ব্যাপারে কিছু না বলায় সন্দেহ তীব্র হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, বিরাট কোহলির সঙ্গে রবি শাস্ত্রীর সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো। যদিও কিছুদিন আগেই শাস্ত্রী নাম না করে সৌরভকে নিশানা করেন। বোর্ড প্রশাসনে সৌরভকে অস্বস্তিতে ফেলতেই বিরাট কোহলি এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। একাংশের মতে, বিরাট কোহলি সংক্রান্ত নানা তথ্য সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করে দেওয়ার পিছনে বোর্ডের কোন রাজনীতি কাজ করছে, সেটাও সামনে আসুক। বোর্ডের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, বিরাট সত্য়ি কথা বলছেন না। তাঁকে সেপ্টেম্বর মাসেই অধিনায়কত্ব ছাড়তে বারণ করা হয়েছিল।
স্বচ্ছতার অভাব
প্রাক্তন নির্বাচক শরণদীপ সিং থেকে প্রাক্তন ক্রিকেটার অমিত মিশ্র সকলেই বর্তমান পরিস্থিতি দেখে অবাক। তাঁদের কথায় একটা বিষয় উঠে আসছে অধিনায়কত্ব বদলের বিষয়ে ভুল না থাকলেও প্রক্রিয়ায় গলদ রয়েছে। অবশ্যই বিরাটকে আগে জানানো উচিত ছিল অধিনায়কত্ব থেকে সরানোর কথা। এমন অভিযোগও সামনে আসছে, করুণ নায়ার কিংবা অমিত মিশ্রকে যখন বাদ দেওয়া হয় নির্বাচকরা তাঁদের সঙ্গে স্বচ্ছতা বজায় রেখে কোনও বার্তা দেননি। দল থেকে বাদ দেওয়ার কারণ যেমন নির্বাচকরা জানাননি, তেমনই বোর্ডকর্তারাও নীরব থেকেছেন। কিন্তু একজন ক্রিকেটারের কেরিয়ারের স্বার্থে, দলের স্বার্থে সকলকেই কোনও সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানানোর পক্ষে সওয়াল উঠছে। না হলে, ভুল হলেও বা খারাপ খেলে বাদ পড়লেও নিজেকে সংশোধনের সুযোগই যে থাকে না।
কী করবে বিসিসিআই?
বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে টেস্ট অধিনায়কের সঙ্গে বোর্ড সভাপতির সংঘাত, তাতে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, এর প্রভাব না পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কঠিন সফরে। নেটাগরিকরা সমালোচনা করছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভূমিকার। বিরাটের পাল্টা কিছু বলেননি সৌরভ। অনেকেই বোর্ড সভাপতির পদত্যাগ দাবি করছেন। নানাবিধ পোস্টে যে বিষয়টি উঠে আসছে তাতে সৌরভকে সপাটে বিরাট যে জবাব দিয়েছেন, তাতে তাঁকে কুর্নিশ জানানো হচ্ছে। সৌরভ ভারতীয় ক্রিকেটের ক্ষতি করছেন বলেও অভিযোগ। এই অবস্থায় সকলেই তাকিয়ে বিসিসিআইয়ের পদক্ষেপের দিকে।