হায়দরাবাদের সূর্যাস্ত চায় আত্মবিশ্বাসী কেকেআর, নাইট-বধের মারণাস্ত্র অবশ্য প্রাক্তন কোচের হাতেই
রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় চেন্নাইয়ে আইপিএলের মহা-ম্যাচ। কলকাতা নাইট রাইডার্স অভিযান শুরু করবে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে। হায়দরাবাদ ২০১৬ সাল থেকে টানা আইপিএলের প্লে অফে জায়গা করে নিচ্ছে। ২০১৮ সালে রানার-আপও হয়েছিল। অন্যদিকে, কলকাতা নাইট রাইডার্স ২০১৮-র পর আর আইপিএলের প্লে অফেই পৌঁছাতে পারেনি। তবে দুই দলের পারস্পরিক সাক্ষাতে ১৯টি ম্যাচের মধ্যে কেকেআর সানরাইজার্সকে হারিয়েছে ১২ বার, হায়দরাবাদ জিতেছে ৭টি ম্যাচে। গত আইপিএলে দুটি ম্যাচই জিতেছে কেকেআর, শেষ সাক্ষাতে জয় সুপার ওভারে। এই ম্যাচের আরেকটি গুরুত্ব আছে। কেকেআরকে এবার নেতৃত্ব দেবেন ইয়ন মর্গ্যান। বিপক্ষ কোচ ট্রেভর বেলিস ইংল্যান্ডের কোচ থাকাকালীন অধিনায়ক মর্গ্যানের সঙ্গে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অভাবনীয় সাফল্য এনেছিলেন। বেলিস ২০১২ থেকে ২০১৫ অবধি কেকেআরের কোচ থাকাকালীন দুবার নাইটরা চ্যাম্পিয়ন হয়। তিনি মর্গ্যানের পজিটিভ, নেগেটিভ জানেন। ফলে পরিসংখ্যানকে বুড়ো আঙুল দেখাতে বেলিসের নাইট-বধের রণকৌশল বড় ফ্যাক্টর হতে পারে। নাইটদের মূল অস্ত্র আন্দ্রে রাসেল আবার নামছেন নতুন লুকে।
New Hair. Who dis? 🤯
— KolkataKnightRiders (@KKRiders) April 10, 2021
Remember what happened when Dre last coloured his hair Blonde? 💜@Russell12A #KKRHaiTaiyaar #IPL2021 pic.twitter.com/nDqAfEtaQD
সাফল্যের সন্ধানে
২০১৪ সালে নাইটদের শেষ আইপিএল জয়। শেষ দুটি আইপিএলের প্লে অফে পৌঁছায়নি কেকেআর। গতবার নেট রান রেটের কারণে ছিটকে যেতে হয়েছিল। তবে এবার শক্তি বাড়িয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। সুনীল নারিন ও আন্দ্রে রাসেলের উপর চাপ কাটাতে প্যাট কামিন্স ও শাকিব আল হাসানকে নিয়েছে কেকেআর। পুরানো দলে ফিরে খুশি শাকিব টি ২০ বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে সেরাটা দিতে তৈরি। ২০১২ ও ২০১৪ দুই বছরই আইপিএল চ্যাম্পিয়ন দলে ছিলেন শাকিব। ওপেনিংয়ে শুভমান গিল আর ফিনিশারের ভূমিকায় দীনেশ কার্তিকও সাফল্যের সন্ধানে থাকা নাইটদের বড় অস্ত্র। এমনকী কমলেশ নাগরকোটি, শিবম মাভি বা বরুণ চক্রবর্তীর বারবার ফিটনেস সমস্যা দেখা দিলেও তাঁকে দলে রাখায় ভারতীয়দের কোর গ্রুপটাই দারুণ নাইটদের।
ছবি- টুইটার
নাইটদের এগারো
রাসেল, কার্তিক, মর্গ্যানদের মধ্যে কে ফিনিশারের ভূমিকা পালন করবেন তা ঠিক করতে বারবার ব্যাটিং অর্ডারে রদবদল নাইটদের বিপক্ষে গিয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। মনে করা হচ্ছে এবার তেমনটা হবে না। গতবার টুর্নামেন্টের মাঝপথে অধিনায়ক বদলের ঘটনাও ঘটেছিল। এবার মর্গ্যানই পুরো মরশুমের অধিনায়ক। গত বছর আইসিসি-র নির্বাসনের আওতায় থাকায় শাকিব আইপিএল খেলতে পারেননি। এবার দেশের হয়ে টেস্ট না খেলে আইপিএলে পুরানো দলের হয়ে খেলাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন শাকিব। তাঁর দলে আসা নিঃসন্দেহে শক্তি বাড়িয়েছে নাইটদের। শুভমান গিলের সঙ্গে রহুল ত্রিপাঠী বা ভেঙ্কটেশ আইয়ার ওপেন করবেন। তিনে নীতীশ রানা, চারে মর্গ্যান, পাঁচে কার্তিক, ছয়ে রাসেল। সুনীল নারিন অথবা শাকিব থাকবেন প্রথম একাদশে। যে-ই খেলুন তিনি সাতে নামবেন। প্যাট কামিন্স, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ও বরুণ চক্রবর্তীর জায়গা পাকা। শিবম মাভি না হরভজন সিং চেন্নাইয়ের স্লো টার্নারে কাকে খেলানো হয় সেদিকেও তাকিয়ে সকলে। চেন্নাইয়ের চেনা উইকেটে কার্যকরী হতে পারেন ভাজ্জি। তাঁকে দিয়ে বোলিং ওপেনও করাতে পারেন মর্গ্যান।
সানরাইজার্সের প্লাস-মাইনাস
সানরাইজার্সের হয়ে আগের আইপিএলের দ্বিতীয়ার্ধে জনি বেয়ারস্টোর পরিবর্ত হিসেবে ওপেনিংয়ে সফল হয়েছিলেন ঋদ্ধিমান সাহা। তবে সম্প্রতি ভারতের বিরুদ্ধে ভালো ফর্মের কারণে এগিয়ে সিরিজ সেরার পুরস্কার পাওয়া বেয়ারস্টো। ফিট হয়ে ভুবনেশ্বর কুমারের ছন্দে ফেরা সানরাইজার্স শিবিরে স্বস্তি দিয়েছে। চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরে মণীশ পাণ্ডে বা বিজয় শঙ্করও জাতীয় দলে সুযোগের দাবি জোরালো করতে ভালো পারফর্ম করতে মুখিয়ে রয়েছেন। রশিদ খানও ভালো ফর্মে রয়েছেন, তাঁর ঘূর্ণি সমস্যায় ফেলতেই পারে বিপক্ষকে। আব্দুল সামাদ, প্রিয়ম গর্গ, অভিষেক শর্মার মতো ঘরোয়া ক্রিকেটে সফলদের নিয়ে ব্যাটিং বিভাগ আরও মজবুত করেছে হায়দরাবাদ। তবে দীর্ঘ রিহ্যাবের মাধ্যমে চোট সারিয়ে মাঠে ফিরে আইপিএলে অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার কেমন ফর্মে থাকেন সেটাও দেখার।
হায়দরাবাদের সম্ভাব্য একাদশ
সব কিছু ঠিকঠাক চললে ওয়ার্নারের সঙ্গে ওপেন করবেন বেয়ারস্টো। তিনে মণীশ পাণ্ডে, চারে কেন উইলিয়ামসন, পাঁচে বিজয় শঙ্কর বা অভিষেক শর্মা, ছয়ে কেদার যাদব, সাতে আব্দুল সামাদ, আটে রশিদ খান নামবেন। ভুবনেশ্বর কুমার, সন্দীপ শর্মা ও টি নটরাজন, এই ত্রয়ী দিয়েই নাইটদের ব্যাটিংকে কাবু করার রণকৌশল সাজাতে পারেন বেলিস
নজরে ওয়ার্নার
পরিসংখ্যানে নাইটরা এগিয়ে থাকলেও শক্তির বিচারে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই-ই অপেক্ষা করে রয়েছে। তিনটি ম্যাচে ব্রেন্ডন ম্যাকালাম না ট্রেভর বেলিস কার রণকৌশলে বাজিমাত হয় সেদিকে নজর থাকবে। নজর থাকবে ডেভিড ওয়ার্নারের দিকেও। দুই দলের সাক্ষাতে সবচেয়ে বেশি রান করাই শুধু নয়, গত দুই বছরের পারফরম্যান্স ধরলে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় ওয়ার্নার রয়েছেন দুইয়ে, ২৮টি ম্যাচে করেছেন ১২৪০ রান। নাইটদের বিরুদ্ধে আর ৮৮ করলেই প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে কোনও আইপিএল দলের বিরুদ্ধে এক হাজার রান করার কৃতিত্ব অর্জন করবেন তিনি।